ঢাকের বাদ্যে চোখের জলে মা’কে বিদায়
২৪ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:২৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। সৈকতে লাখ লাখ হিন্দুধর্মাবলম্বীরা ঢাকের বাদ্য, খোল-করতাল ও গান বাজিয়ে দুর্গা মাকে বিদায় জানিয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর থেকে পতেঙ্গা সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়।
বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছিল ২০ অক্টোবর, ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় ‘আনন্দময়ীর’ নিদ্রাভঙ্গের বন্দনার মাধ্যমে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে এ উৎসব শেষ হয়েছে।
এদিকে, দেবীকে তেল-সিঁদুর পড়িয়ে বিদায় জানাতে সৈকতে ভিড় করেছিলেন ভক্ত ও অনুরাগীরা। নানা ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান মিলনমেলায় পরিণত হয়। অন্যদিকে, উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ও অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকলেও তাতে প্রতিমা বিসর্জনে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি।
বিসর্জন অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার জন্য পতেঙ্গা সৈকতে কঠোর অবস্থানে ছিল পুলিশসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এর পরও প্রতিমাবাহী ট্রাক নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। র্যাব, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সকাল থেকেই সাগর উত্তাল ছিল। এখন আরও বেড়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে সাগরে প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেহেতু সিগন্যাল আছে তাই আমরা সবাইকে সাগরে নামতে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছি। আর বিসর্জন দিয়েই যাতে চলে আসে। এ ছাড়া যেকোনো প্রকার বিচ্ছিন্ন ঘটনা এড়াতে সৈকত ও আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর নগরীর জেএমসেন হলসহ ১৬ থানায় ব্যক্তিগত/ঘট পূজাসহ ২৯৩টি পূজামণ্ডপ এবং চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলায় ২ হাজার ১৭৫ মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিষদের পক্ষ থেকে সবাইকে আজ (মঙ্গলবার) সন্ধ্যার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধর্মীয় রীতি মেনেই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, নেভাল-২, অভয়মিত্র ঘাট এবং কালুরঘাট সেতু এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। সাত নম্বর সতর্কতা সংকেত চলছে। বৃষ্টিও পড়ছে। তাই আমরা সবাইকে যত দ্রুত সম্ভব সুবিধাজনক স্থানে প্রতিমা বিসর্জনের নির্দেশ দিয়েছি।’
ইপিজেড থানা পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুজন কুমার শীল জানান, ‘বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতিমা মণ্ডপ থেকে আনতে একটু সময় লাগছে। ১৬ থানার তিন শতাধিক প্রতিমা এখানে বিসর্জন দেওয়ার কথা রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব প্রতিমা বিসর্জন সম্ভব হবে।’
এদিকে, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা নিরঞ্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম পাদপীঠ। এ নগরীতে জাতিগত কোনো ভেদাভেদ নেই। শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসব অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তি-শৃংখলার সাথে সম্পন্ন হওয়া তারই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে সব ধর্মের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার একটি প্রমাণ হলো কোনো সমস্যা ছাড়াই সারা দেশে পূজা উদযাপন। এজন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের যে অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা শিক্ষা দিয়েছেন, সে শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার জন্য কাজ করতে হবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল পাদপীঠ হিসেবে চট্টগ্রামের যে ঐতিহ্য তা রক্ষা করতে হবে।’
সুষ্ঠু ও শান্তি শৃঙ্খলার মধ্যে পূজারীরা যাতে প্রতিমা নিরঞ্জন করতে পারেন সে লক্ষ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে আলোকবাতি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সাজ-সজ্জা, মঞ্চ নির্মাণ, মাইকিংসহ সবধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম