বিএনপির টার্গেট ১০ লাখ, ঢাকায় ঢুকছে নেতা-কর্মীরা
২৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৪:৪১
ঢাকা: সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে আয়োজিত এ সমাবেশ যোগ দেওয়ার জন্য সারা দেশে দায়িত্বশীল নেতাদের ‘কঠোর বার্তা’ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে দলের হাই কমান্ড থেকে।
কেন্দ্রের নির্দেশ মতো এরইমধ্যে ‘স্রোতের মতো’ ঢাকায় ঢুকছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। সামবেশকে কেন্দ্র করে বাস, লঞ্চ, ট্রেনসহ সব ধরনের যানবহান বন্ধ হয়ে যেতে পারে— এমন শঙ্কা থেকে এরইমধ্যে দূরের জেলাগুলো থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ঢাকায় ঢুকে পড়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঢাকামুখী স্রোত আরও বাড়বে বলে দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বুধবার (২৫ অক্টোবর) সারাবাংলাকে বলেন, ‘গাড়ি-ঘোড়া’ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, তাই নেতা-কর্মীদের এরইমধ্যে ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি। আজ আরও যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) কয়েকটা টিম যাবে। আমি নিজেও বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সেকেন্ড হাফে ঢাকায় ঢুকব।’
‘এরইমধ্যে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে। কিছুক্ষণ আগে যুবদল নেতা শ্যামলকে আটক করেছে পুলিশ। আমার বেশ কয়েকজন কর্মীকেও আটক করা হয়েছে। এটা হয়তো আরও বাড়বে। তারপরও ঢাকার মহাসমাবেশ সফল করার জন্য আমরা বদ্ধপরিকর’— বলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদারেছ আলী ঈসা বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরেই ফরিদপুর জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় ঢুকছে। আজও আসছে। কাল-পরশুও আসবে। আমি নিজেও ঢাকায় চলে এসেছি।’
দলীয় সূত্রমতে, কর্মসূচিতে পরিবর্তন এনে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নেওয়ার আগে ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশকে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে নিয়েছে বিএনপি। এ সমাবেশ থেকেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সে কারণে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় জনসমাগম ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গত এক সপ্তাহ ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে কর্মীসভা-প্রস্তুতিসভা করছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপিও ধারাবাহিক প্রস্তুতিসভা ও কর্মীসভা করছেন। নিয়মিত চলছে ‘উঠান বৈঠক’ দলের বিভিন্ন ইউনিটের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতারা আলাদা বৈঠক করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। গ্রেফতার ও আটক এড়াতে সেইফ জোনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ নেতা নিজ বাসায় না থেকে রাতে আত্মীয় স্বজনের বাসায় থাকছেন। বুধবার রাতে ভাইয়ের বাসা থেকে আটক হয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন।
বার্তা পরিষ্কার:
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দিবগত রাত ১২টা ১৯ মিনিটে [email protected] অ্যাড্রেস থেকে গণমাধ্যমে একটি মেইল পাঠানো হয়। তাতে লেখা ছিল, ‘আগামী ২৮ অক্টোবর ২০২৩, শনিবার রাজধানী ঢাকায় বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত মহাসমাবেশ সফল করার জন্য ঢাকাসহ দেশব্যাপী সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা স্বত:স্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন। উক্ত মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত পরবর্তী কর্মসূচিগুলো সফল করার জন্য দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ২৮ অক্টোবরের পরে নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করবেন। ঢাকার মহাসমাবেশে দেশব্যাপী সর্বস্তরের মানুষসহ দলের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ীদের যোগদান করে ১ দফা দাবি আদায়ে দলের পক্ষ থেকে সোচ্চার আওয়াজ তোলার জন্য আহ্বান জানানো হলো।’
রুহুল কবির রিজভীর নামে পাঠানো ওই মেইল বার্তা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়। কারণ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নিয়মিত মেইল পাঠানো হয় [email protected] ও [email protected] অ্যড্রেস থেকে, [email protected] সচারাচার মেইল পাঠানো হয় না।
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বিষয়টি নিয়ে কথা হয় রুহুল কবির রিজভী সঙ্গে। সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘এই মেইলটা আমাদের অফিসিয়াল মেইল এবং দলের পক্ষ থেকে উপরিউক্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। তবে সংশোধনী মেইলে আরও বিস্তারিত নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। যেখানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক, সহ-সম্পাদক, সাবেক সংসদ সদস্য, সংসদ সদস্য প্রার্থীসহ দায়িত্বশীল নেতাদের ২৮ অক্টোবরের পর নিজ নিজ এলাকায় অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত কর্মসূচি নিজ নিজ এলাকায় সফল করতেই এ নির্দেশনা।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোদারেছ আলী ঈসা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মহাসমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য আমাদের ঢাকা আসতে বলা হয়েছে। অবস্থানের জন্য নয়। আমাদের কর্মসূচি মহাসমাবেশের কর্মসুচি।’
তবে, বিএনপির অধিকাংশ নেতা-কর্মীর ধারণা, ২৮ অক্টোবরের মহাসামবেশ থেকে নয়াপল্টনে ‘বসে পড়ার’ ঘোষণা আসতে পারে। কারণ, রাজনৈতিক ফয়সালা ছাড়া ঢাকা থেকে সবাই এলাকায় ফিরে গেলে দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হবে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়ে নয়াপল্টনে অবস্থান করলে সরকার ‘কঠোর হাতে দমন নীতি’ অবলম্বন করতে পারে। আর সে কাজে সরকার যদি সফল হয় তাহলে বিএনপির রাজনীতি শেষ!
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বরাবরের মতোই সব কিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে সরকার। সুতরাং মহাসমাবেশ শেষে বসে যাওয়ার মতো ‘হঠকারী’ সিদ্ধান্ত বিএনপির জন্য বুমেরাং হতে পারে। তার চেয়ে বরং বিপুল সংখ্যক লোক সমাগমের মাধ্যমে নিজেদের দাবির পক্ষে জনমত সৃষ্টির পাশাপাশি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করাটাই বিএনপির লক্ষ্য হওয়া উচিত।’
সারাবাংলা/এজেড/ইআ