‘শেখ হাসিনার শাসনকালে, নদীর তলে গাড়ি চলে’
২৭ অক্টোবর ২০২৩ ২৩:৪১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কর্ণফুলী নদীর তীরের বিকেল। ছুটির দিনের বিকেলটি ছিল অন্য সব দিনের বিকেলের চেয়ে একদম আলাদা। কারণ খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীর বুক চিড়ে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ টানেলের উদ্বোধন উপলক্ষে যে উৎসব, তার সমাপনী অনুষ্ঠান ছিল এদিন। তাতে সমবেত হাজারও দর্শক। উৎসবের আয়োজক খোরশেদ আলম সুজনের কণ্ঠে প্রাণবন্ত স্লোগান— ‘শেখ হাসিনার শাসনকালে, নদীর তলে গাড়ি চলে’।
এমন স্লোগানে কণ্ঠ না মিলিয়ে কী থাকতে পারে মানুষ! তাই তো শুনেই উৎসবস্থলে ছুটেছেন জনতা। আগে থেকেই যারা উৎসবস্থলে ছিলেন, তারা মাতোয়ারা অর্জনের আবেগে। খোরশেদ আলম সুজনের সঙ্গে দুহাত উঁচু করে স্লোগান ধরেছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও।
শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে মেরিনার্স সড়কের পাশে কর্ণফুলীর তীর ছিল এমনই উৎসবমুখর। টানেল উদ্বোধনকে সামনে রেখে গত বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ব্যতিক্রমী এ ‘টানেল উৎসব’ শুরু করেন। প্রথমদিন উৎসবে মেতেছিল পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত।
আরও পড়ুন- ১০ হাজার কোটি টাকার টানেলের সুফল বহুমুখী, পরিকল্পনার তাগিদ
শুক্রবার সমাপনী আয়োজনে ছিল গান, সাইকেল শোভাযাত্রা, ঘুড়ি উৎসব, আতশবাজি। চাঁটগাইয়া পিঠা, মহেশখালীর মিষ্টি পান— কী ছিল না এ উৎসবে!
সমাপনী আয়োজনের শুরুতে কর্ণফুলীর শাহ আমানত সেতু থেকে শতাধিক সাইকেলের বহর নিয়ে বের হয় শোভাযাত্রা। সেটি যখন সমাবেশস্থলের দিকে যাচ্ছিল, ঠিক সে মুহূর্তে বিকেলের শান্ত নীলাকাশে এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী উড়িয়ে দেন রঙ-বেরঙের ঘুড়ি। সেই ঘুড়ি উৎসবের ফাঁকে ফাঁকে চলছিল চাটগাঁইয়া গানের আসর। চাঁটগাইয়া পিঠা আর মহেশখালীর খিলি পান হাতে অতিথিদের বরণে দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেকদল তরুণ-তরুণী।
সন্ধ্যার পর কর্ণফুলীর আকাশে ভেসে ওঠে লাল-সবুজের আতশবাজি। সংগীতশিল্পীদের কণ্ঠে ভেসে আসা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শেফালী ঘোষের ‘ছোড ছোড ঢেউ তুলি ফানি’ গানটি যেন অন্যরকম এক আবহ তৈরি করেছিল পুরো অনুষ্ঠানস্থলে।
ফাঁকে ফাঁকে চলছিল কথামালাও। কর্ণফুলী টানেলের কারণে পৃথিবীর বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তারা আনোয়ারায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, “আমাদের চট্টগ্রামে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রথম একটি বিশাল যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা অর্থাৎ টানেল তৈরি হচ্ছে। এ টানেলটির মাধ্যমে আমাদের চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারার সম্পৃক্ত হয়ে টোটাল ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ চীনের সাংহাই সিটির আদলে গড়ে উঠছে।”
‘টানেলের কারণে আনোয়ারাজুড়ে সারাপৃথিবীর বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তারা বিশেষ করে চীন, জাপান স্পেশাল ইকোনোমিক জোন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর আগে থেকে ওখানে কোরিয়ান জোন আছে। এখানে ইউরিয়া সার কারখানা আছে। এ ছাড়া বাঁশখালীতে বিশাল একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে। সেখানেও উন্নয়ন ও শিল্পায়ন হবে। আস্তে আস্তে এ শিল্পায়নের গতিটা চলে যাবে মহেশখালী,টেকনাফ পর্যন্ত,’— বলেন সুজন।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ করে দেবো। এতে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটন ও কৃষি শিল্পের অনেক উন্নতি হবে। বাংলাদেশ শুধু নয়, এখন দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে এই টানেল। সেজন্য আমাদের কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছে, শেখ হাসিনার শাসনকালে, নদীর তলে গাড়ি চলে, পদ্মার ওপর গাড়ির চলে।’
‘আমরা করব জয়’ সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত ‘টানেল উৎসবে’ নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনের সভাপতিত্বে ও নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সহসভাপতি ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মসিউর রহমান চৌধুরী, নগর ১৪ দল নেতা নজরুল ইসলাম আশরাফী, মিটুল দাশগুপ্ত, জহির উদ্দিন মো. বাবর, মো. ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, কাউন্সিলর আতাউল্লাহ চৌধুরী, তাহমিনা বেগম, আমিনুর রশীদ দুলাল, রুহুল আমিন তপন, নগর যুবলীগের সভাপতি মাহবুবুল হক সুমন, ফরহান আহমেদ, মো. সালাউদ্দিন, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, পুলক খাস্তগীর ও আব্দুস সালাম মাসুম।
সারাবাংলা/আইসি/টিআর