বিজ্ঞাপন

১০ হাজার কোটি টাকার টানেলের সুফল বহুমুখী, পরিকল্পনার তাগিদ

October 27, 2023 | 10:48 pm

রমেন দাশগুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

চট্টগ্রাম ব্যুরো: দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে খরস্রোতা নদীকে শাসন করে তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের সক্ষমতা দেখিয়েছে একমাত্র বাংলাদেশ। এ টানেল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে— এমন বক্তব্য আসছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে। কিন্তু এ সম্ভাবনার চিত্রটি কেমন হবে, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে এ টানেল কী ভূমিকা রাখবে— এমন প্রশ্নও উঠছে।

বিজ্ঞাপন

দেশের অর্থনীতির গতিপথ নির্ধারণের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ব্যবসায়ীমহল এবং নাগরিক সমাজই বা কী ভাবছেন এ টানেল নিয়ে? সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, টানেলের পুরোপুরি সুফল পেতে গেলে আরও অপেক্ষার প্রয়োজন হবে। টানেলের মাধ্যমে সরাসরি সংযুক্ত হওয়া দক্ষিণকে নিয়ে এখনই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকলে সেই সুফল অধরাও থেকে যেতে পারে।

বড় প্রবৃদ্ধির আশায় এফবিসিসিআই সভাপতি

দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম টানা ১০ বছর চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে চট্টগ্রামের টানেলসহ অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন। উদ্বোধনের আগ মুহূর্তে সারাবাংলাকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে তিন ধরনের টানেলের সুফলের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন- কর্ণফুলীর বুক চিড়ে ইতিহাস যাত্রার অপেক্ষায় দেশ

বিজ্ঞাপন

মাহবুবুল আলম বলেন, ‘স্বল্পমেয়াদে কানেক্টিভিটিটাই বড় সুফল হবে। যেমন— ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারে যেসব বাস যাবে সেগুলোকে আর শহরের ভেতর দিয়ে যেতে হবে না, সরাসরি যেতে পারবে। ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় সম্ভাবনা। লোকাল ট্যুরিজমের বিকাশ হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে যে এনার্জি হাব হচ্ছে, সেটার মালামাল এখন সহজে নিয়ে যাওয়া যাবে। দক্ষিণে যেসব ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে বা হয়েছে সেগুলোর মালামাল আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।’

“এরপর মধ্যমেয়াদে সুফল আসবে যদি প্রধানমন্ত্রী ‘ওয়ান সিটি টু টাউনে’র যে স্বপ্নটা দেখেছেন, তার বাস্তবায়ন হয়। টানেলের দক্ষিণে আনোয়ারায় যদি একটি আধুনিক পরিকল্পিত শহর গড়ে ওঠে, তাহলে টানেলের ব্যবহার হবে। আবার বেজা (অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) সাড়ে তিন হাজার একর জায়গার ওপর শিল্পাঞ্চল করার উদোগ নিয়েছে। ভারতের সেভেন সিস্টার যেগুলো আছে, সেখানে পণ্য পরিবহনের সুযোগ বাড়বে। মোটামুটিভাবে কস্ট (খরচ) ও সময় কমবে। কিন্তু সেটি নির্ভর করছে আমরা কতটা পরিকল্পিতভাবে আগাতে পারছি, তার ওপর,’— বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা।

দীর্ঘমেয়াদে সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে মাহবুবুল আলম বলেন, ‘মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর হলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে টানেলের ব্যবহার বাড়বে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শিল্পায়নের সম্ভাবনা তখন তৈরি হবে। অনেক মিল-কারখানা হবে। সেক্ষেত্রে বলা হচ্ছে, প্রতিদিন ১৭ হাজার গাড়ি টানেল অতিক্রম করবে। পদ্মা সেতুর কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক শতাংশ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা আছে। আমরা আশা করছি, দীর্ঘমেয়াদে টানেল থেকেও বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি আসবে।’

বিজ্ঞাপন

‘টানেল হয়েছে ভালো, সুফল পেতে পরিকল্পনা দরকার’

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক ও সিকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হকের মতে, টানেলের সঙ্গে পরবর্তী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যদি সুপরিকল্পিত না হয়, তাহলে সুফল না-ও মিলতে পারে। এ ক্ষেত্রে কক্সবাজার থেকে টানেল হয়ে ঢাকা পর্যন্ত আট লেনের ডেডিকেটেড সড়ক নির্মাণের প্রত্যাশা এ ব্যবসায়ী নেতার।

আমিরুল হক বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল হয়েছে, এটি দেশের জন্য নিঃসন্দেহে বড় অর্জন। টুইন সিটির যে ধারণা, তাতে এই টানেল অবশ্যই কাজে আসবে। যোগাযোগব্যবস্থার জন্য ভালো হবে অবশ্যই। কিন্তু গেম চেঞ্জার যেটা বলা হচ্ছে, সেটা হবে কক্সবাজারের মাতরবাড়িকে কেন্দ্র করেই। সুতরাং টানেল হয়েছে, এটা অবশ্যই ভালো। কিন্তু রেজাল্ট পাওয়ার জন্য অবশ্যই পরিকল্পনা দরকার।’

‘মাতারবাড়িতে একটা গভীর সমুদ্রবন্দর হবে, সেটি আস্তে আস্তে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আনা গেলে সাগরতীরে বিপুলসংখ্যক শিল্পকারখানা হবে, আবাসিক এলাকা হবে, ট্যুরিজম সেন্টার হবে, এ ধরনের আরও নানা অবকাঠামো হবে। কিন্তু তার জন্য আগেভাগে চাই পরিকল্পনা। কোনো পরিকল্পনা না থাকলে দেখা যাবে যার যেখানে ইচ্ছা সেখানে কারখানা করছে, কেউ হসপিটাল বানাচ্ছে, কেউ হাউজিং এস্টেট করছে, কেউ মসজিদ-মাদরাসা, উপাসনালয় বানাচ্ছে। এটি কাম্য নয়,’— বলেন আমিরুল হক।

বিজ্ঞাপন

এখন থেকেই পরিকল্পনা প্রণয়নের তাগিদ দিয়ে এফবিসিসিআইয়ের এই সাবেক পরিচালক বলেন, ‘চট্টগ্রামে টানেল আর মাতারবাড়িতে ডিপ সি পোর্ট— এর মাঝে কী কী করতে হবে, তার পরিকল্পনা এখন থেকেই নিতে হবে। কোথায় ১৮০ ফুট রাস্তা লাগবে, কোথায় ১২০ ফুট হবে, কোথায় আন্ডারপাস লাগবে, কোথায় ওভারপাস লাগবে— এগুলো নির্ধারণ করতে হবে, পরে যেন আবার ফ্লাইওভার বানাতে না হয়।’

আমিরুল হক আরও বলেন, ‘মাতারবাড়িটা তো ইকোনমিক জোন হয়ে যাবে। সেখান থেকে এবং কক্সবাজার থেকে আট লেনের একটি সড়ক যদি করা যায়, এক্সপ্রেসওয়ে টাইপের, সেটি টানেল হয়ে একেবারে ঢাকায় চলে যাবে; তখন গভীর সমুদ্রবন্দর, বে-টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর ও রাজধানীর সঙ্গে একটি সুন্দর কানেক্টিভিটি তৈরি হবে। পাশাপাশি কোথায় শিল্পকারখানা হবে, আবাসিক এলাকা কিংবা অন্যান্য অবকাঠামো কোথায় হবে, তার পরিকল্পনা থাকতে হবে। তাহলেই টানেলের রেজাল্টটা আমরা ভালোভাবে পাব।’

‘টানেল মানে শুধু গাড়ি চলাচলের একটি রাস্তা নয়’

৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অর্থনীতি বিটে কাজ করা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক একুশে টেলিভিশনের আবাসিক সম্পাদক রফিকুল বাহারও টানেলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন।

সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে রফিকুল বাহার বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ঘুরতে গিয়ে পাহাড়ের ভেতর দিয়ে টানেল দেখেছি। বিশ্বের কিছু দেশে সাগরের নিচে টানেল দেখেছি। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশে নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল এখনো হয়নি, যেটি করতে পেরেছে বাংলাদেশ। টানেল মানে শুধু নদীর নিচ দিয়ে গাড়ি আসা-যাওয়ার একটি রাস্তা নয়, এটি একটি দেশের সক্ষমতার প্রতীক, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার পথে একটি মাইলফলক।’

‘মীরসরাইয়ে সরকারিভাবে যে শিল্পনগর হচ্ছে এবং মাতারবাড়িতে যে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে, এর মধ্যে সংযোগ হিসেবে কাজ করবে এই টানেল। বলা হচ্ছে, টানেলের কারণে প্রায় ১৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার পথের দূরত্ব কমবে। মাতরবাড়ির সমুদ্রবন্দরে এক লাখ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা আছে এমন জাহাজ ভিড়তে পারবে। আমদানি-রফতানি পণ্য নিয়ে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লং ভেহিক্যাল এই টানেল দিয়ে মাতরবাড়িতে আসা-যাওয়া করতে পারবে। এর ফলে আমদানি-রফতানি খাতে আগামী দিনে বাংলাদেশের বিশাল অগ্রগতির যে সম্ভাবনা, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই টানেল,’— বলেন এই সাংবাদিক।

‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গেম চেঞ্জার হবে টানেল’

তরুণ শিল্পপতি ও প্যাসিফিক জিন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর মনে করছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য এই টানেল গেম চেঞ্জার হবে।

সারাবাংলার সঙ্গে আলাপে সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘এই টানেলের বিশেষত্ব হচ্ছে— আগে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা ছিল কেবল দুটি সেতুনির্ভর। একটি কালুরঘাট সেতু, আরেকটি শাহ আমানত সেতু। দেশের অন্যান্য জায়গার সঙ্গে চট্টগ্রামের দক্ষিণের যোগাযোগটা ছিল শহরের ভেতর দিয়ে। এই প্রথম টানেলের কারণে শহর এড়িয়ে ঢাকা কিংবা অন্যান্য জেলার সঙ্গে একটা সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হচ্ছে।’

তরুণ এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘টানেল নির্মাণের কারণে সামগ্রিক অর্থনীতিতে সম্ভাবনার একটি চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য শিল্পায়ন বিবেচনায় নিলে এই টানেল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য গেম চেঞ্জার হবে। এছাড়া চট্টগ্রামের দক্ষিণে আরেকটি শহর গড়ে উঠবে।’

‘অমিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে বঙ্গবন্ধু টানেল’

আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান সারাবাংলাকে বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলকে কেন্দ্র করে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে গড়ে উঠেছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড)। সেখানে রফতানিমুখী জাহাজ শিল্প, বিদ্যুৎচালিত যান, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, টেক্সটাইল, নির্মাণ শিল্পসহ আরও অনেক শিল্প কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান। কর্ণফুলী নদীর দুই তীরকে সংযুক্ত করে চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তির জন্য এ টানেল নির্মাণ করা হয়েছে।”

‘কর্ণফুলী টানেল শুধু দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে না, মীরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। টানেল ব্যবহার করে চট্টগ্রাম শহর এড়িয়ে মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সারাদেশের শিল্পকারখানার কাঁচামাল ও পণ্য কক্সবাজারের মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দরে আনা-নেওয়া করা যাবে দ্রুততম সময়ে। ফলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বিস্তৃত হওয়ার পাশাপাশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে,’— এমনটিই অভিমত এই সংসদ সদস্যের।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান আরও বলেন, ‘ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল (ডিপিপি) অনুযায়ী, ফিনান্সিয়াল ও ইকোনোমিক ইন্টারনাল রেট অব রিটার্নের (আইআরআর) পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ ও ১২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এ ছাড়া ফিনান্সিয়াল ও ইকোনোমিক বেনিফিট কস্ট রেসিওর (বিসিআর) পরিমাণ দাঁড়াবে যথাক্রমে ১ দশমিক শূন্য ৫ ও ১ দশমিক ৫। ফলে দেশের জিডিপিতে বার্ষিক শূন্য দশমিক ১৬৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে। এর ধনাত্মক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে।’

‘সার্বিক বিবেচনায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সমুদ্র উপকূল ধরে মেরিন ড্রাইভের আশেপাশের দীর্ঘ এলাকা দেশের সর্ববৃহৎ শিল্প করিডোরে রূপ নেওয়ার অমিত সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেলকে কেন্দ্র করে। এ ছাড়া টানেলের কারণে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড়ে বন্দরের কয়েকটি জেটি নির্মাণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যেন বন্দরের সক্ষমতাও বাড়বে,’— বলেন ওয়াসিকা আয়শা খান।

শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকালে নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তিনি টানেল পাড়ি দিয়ে আনোয়ারায় গিয়ে কোরিয়ান ইপিজেডের মাঠে জনসভায় যোগ দেবেন।

উল্লেখ্য, কর্ণফুলী নদীর দুইতীরে চীনের সাংহাই সিটির আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে টানেল প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। এর আগে ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউব নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন, এর মধ্য দিয়েই মূল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়।

টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক দুই শতাংশ হারে সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। বাকি অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার।

নির্মাণকাজ করেছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে অন্য টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম ও প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।

নগরীর পতেঙ্গায় ন্যাভাল একাডেমির পাশ থেকে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় নেমে যাওয়া এই টানেল কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ-পূর্বে আনোয়ারায় সিইউএফএল ও কাফকোর মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে স্থলপথে বের হবে। ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতার টানেলে দুটি টিউব দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। টানেলের উত্তরে নগরীর দিকে আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কাটগড় সড়ক, বিমানবন্দর সড়ক এবং পতেঙ্গা বিচ সড়ক দিয়ে টানেলে প্রবেশ করা যাবে।

টানেল দিয়ে মোটর সাইকেল ও তিন চাকার গাড়ি চলতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এই টানেল দিয়ে যানবাহন ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলবে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে।

ছবি: শ্যামল নন্দী

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন