Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিরাপত্তা না থাকলে সংবাদ সংগ্রহ বয়কটের হুমকি সাংবাদিকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ নভেম্বর ২০২৩ ১৭:২৬

ঢাকা: সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সংবাদ সংগ্রহ বয়কট করার ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। একইসঙ্গে গত ২৮ অক্টোবর সাংবাদিকদের ওপর হামলায় ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা এই হুমকি দেন। ‘সচেতন নারী সাংবাদিক সমাজ’ নামে একটি সংগঠন এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য দেন— জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক শ্যামল দত্ত, খায়রুল আলম, জান্নাতুল ফেরদৌস, ফারহানা যুথি, ঝর্ণা রায়, ইলিয়াস, নাদিয়া জামাল, সেবিকা রানি, হালিমা আক্তার লাবনী, শাহনাজ পারভীন, জামান দত্ত ও ইকবালসহ আরও অনেকে।

ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, প্রথম শ্রেণির স্তম্ভকে ভেঙে দেওয়ার যড়যন্ত্র এবং গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা কারা করেছিল। আপনারা ইতোমধ্যে শুনেছেন। গত ২৮ অক্টোবরের সাংবাদিকদের ওপর হামলা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। এটা সরকারের মদদে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা জানিনা এই হামলা কারা ঘটিয়েছে, কার মদদে ঘটেছে। কিন্তু সেদিন বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ছিল। তাদের ওই কর্মসূচির দিনে হামলা হয়েছে। তাই তার দায় দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতেই হবে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারকে বলতে চাই, এতোদিন হয়ে গেল হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের কেন বাহির করতে পারেননি? ভিডিও ফুটেজ দেখে দ্রুত হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনুন। কারণ সংবাদকর্মীরা কোনো দলের হয়ে কাজ করেন না, জনগণের জন্য কাজ করেন এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্যটি পৌঁছাতে চায়। এই সংবাদকর্মীরা কাদের টার্গেট? বরং সেদিন যে হামলা হয়েছিল তা আপনারা স্পষ্টই বুঝতে পেরেছেন। সেই হামলাগুলো টার্গেট করে হামলা। তাহলে সংবাদকর্মীরা কাদের টার্গেট?’

প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরও বলেন, ‘সংবাদকর্মীরা কিন্তু ছেড়ে দেবে না। এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটাবেন আর সাংবাদিকদেরা চুপ করে থাকবে, এটি কিন্তু হবে না। সারাদেশের সাংবাদিকেরা কোনো দলের জন্য কাজ করছেন না। আপনাদের (জনগণ) জন্য কাজ করছেন। তাহলে কারা জনগণের শত্রু, এটা খুঁজে দেখতে হবে। জনগণের ওপর যারা কাজ করছেন, আজকে কেন তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। সাংবাদিকেরা কেউ চুপ করে বসে থাকবে না। এই অপতৎপরতার জবাব দিতে জানেন। তারা যেমন সংবাদ লিখতে জানেন, ক্যামেরা চালাতে জানেন, কলম ধরতে পারেন, তারা কিন্তু প্রতিবাদেও রাস্তাও নেমে আসতে পারেন। সুতারং আপনারা সাবধান হয়ে যান। আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে বললো দেশের স্বার্থে, দেশের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে আপনারা ঐক্যবদ্ধ হন, একসঙ্গে কাজ করেন। দেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করবেন না। রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকতে পারে দেশের ক্ষতি করে এ ধরনের কাজ করবেন না।’

শ্যামল দত্ত বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর গত ২৮ অক্টোবর যে হামলা হয়েছে ইতিহাসে নজিরবিহীন। কিন্তু আপনারা খেয়াল করবেন ইতোমধ্যে হামলা নিয়ে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা চলছে এবং সেই বিভ্রান্তি জাতিসংঘেও রক্ষা পাইনি। আপনারা প্রকাশ্যে দিনের বেলায় দেখেছেন বিএনপি-জামায়েতের যে সমস্ত জায়গায় সমাবেশ চলছিল সেসব জায়গায় হামলা ঘটেছে। এটি অন্তত পরিকল্পনা হামলা ছিল। কিন্তু এখন বিএনপি এবং তার মিত্ররা এটাকে নিয়ে বিভ্রান্তি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এটাকে তারা ভিন্নক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে আমাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। যতখন না অভিযুক্তরা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তন্নতন্ন করে খুঁজে দেখেছি ৭ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত গাজায় ৩৪ জন কর্মী নিহত হয়েছেন, জাতিসংঘ এখন পর্যন্ত একটাও বিবৃতি দেয়নি। অথচ বাংলাদেশে কোনো কিছুই হলেও এমনকি হিরো আলমকে একটু ধাক্কা দিলেও বিবৃতি দেয়। আমরা অদ্ভুত একটা সমাজে বসবাস করি। আমরা সেই মানবাধিকার সংঘঠনকে খুঁজে পাচ্ছি না, বিভিন্ন হিউম্যান রাইটের সংগঠনগুলোকে আমাদের পক্ষে খুঁজে পাচ্ছি না। এখন সবাই চুপ হয়ে গেছে। এর আগে তিনটা দাবির কথা তুলে ধরেছি, একটি হচ্ছে প্রকাশ্যে দিবালোকে হামলার ঘটনা ঘটেছে তাদের টেলিভিশনের ফুটেজ দেখে চিহ্ন করতে হবে, বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে হবে এই হামলার জন্য, আহত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এই কর্মসূচি যদি অব্যহতি থাকে তাহলে আশা করি ভবিষ্যৎ সাংবাদিকের ওপর হামলার কথা চিন্তা করবে না।’

অন্যান্য বক্তরা বলেন, সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত চাই। তারা কাজ করেন জনগণের জন্য। জনগণের কথা প্রকাশ করেন। অথচ বিএনপি-জামায়েতকে সংবাদকর্মী পরিচয় দেওয়ার পরেই তারা হামলা চালিয়েছে। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকার প্রধানের। সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেকেই জীবন পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। অথচ গত ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন বেড়ে চলেছে। এখন পর্যন্ত ৩১৩ জন বিভিন্ন সময়ের নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। ৪ জন মারা গেছেন। আর গুরুতর আঘাতের স্বীকার হয়েছেন ২০ জন। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নির্যাতিত হয়েছেন। গত ২৮ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। অধিকাংশ বিএনপি-জামায়েতের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। অথচ রাজনৈতিকদলগুলো দুঃখপ্রকাশ পর্যন্ত করেনি। রাজনৈতিকদলগুলো যদি সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে সংবাদ সংগ্রহে বয়কটের ঘোষণা করা হবে।

সারাবাংলা/এআই/এনএস

জাতীয় প্রেস ক্লাব টপ নিউজ মানববন্ধন সংবাদ সংগ্রহ বয়কট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর