Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শ্মশানে পুড়ছে সোনার সংসার— তাকিয়ে আছেন নারায়ণ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: একই শবযাত্রায় যাচ্ছে স্ত্রী আর প্রাণপ্রিয় চার সন্তান। সঙ্গে আদরের ভাইপোও। একই শ্মশানে পাশাপাশি চিতায় জ্বলছে আগুন। নির্বাক, শোকস্তব্ধ মানুষটি তাকিয়ে আছেন। দেখছেন, তার সাজানো সংসার কীভাবে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে কয়েক গ্রামের শত শত মানুষ জড়ো হয়েছেন। একসঙ্গে এত লাশের ভার আগে কখনো বইতে হয়নি এই গ্রামের মানুষদের।

বুধবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার জোয়ারা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। গ্রামবাসী বলছেন, এমন দুঃসহ মর্মান্তিক ঘটনা স্মরণকালেও দেখেননি তারা।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে হাটহাজারী উপজেলার চারিয়া ইজতেমা মাঠ এলাকায় চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে বাস ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে সাত জন নিহত হন। সংঘর্ষে নিহতরা একই পরিবারের এবং নিকটাত্মীয়।

নিহতরা হলেন- রীতা দাশ (৩৪) ও তার সন্তান শ্রাবন্তী দাশ (১৭), বর্ষা দাশ (১০), ৪ বছর বয়সী যমজ দুই ছেলে দিগন্ত ও দীপ এবং ভাসুরের ছেলে বিপ্লব দাশ (২৬) ও কাকাতো বড় ননদ চিনু দাশ (৫০)। এছাড়া আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন চিনু দাশের ছেলে বাপ্পা দাশ (৩০) ও অটোরিকশা চালক বিপ্লব মজুমদার (২৮)।

স্বজনদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বিপ্লবের অটোরিকশায় সবাইকে নিয়ে রীতা যাচ্ছিলেন তার বাবার বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলার শাহনগর ইউনিয়নের বণিকপাড়া এলাকায়। সেখানে ১১ দিন আগে মারা যাওয়া তার ঠাকুরমা (দাদী) কনকলতা দাশের আদ্যশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান চলছিল।

সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী-সন্তানদের মৃত্যুর খবর ওমানে বসেই পান রীতা’র স্বামী নারায়ণ দাশ। এমন মর্মান্তিক খবরে তিনি সেখান থেকে ছুটে আসেন। বুধবার সকাল ১১টার দিকে তিনি বাড়ি পৌঁছান। স্ত্রী-সন্তানের নিথর শরীরের কাছে পৌঁছে ভেঙ্গে পড়েন কান্নায়। এরপর অজ্ঞান হয়ে যান।

বিজ্ঞাপন

গ্রামের লোকজন ও স্বজনরা মিলে তাকে ঘরে নিয়ে যান। ঘিরে ছিলেন সবাই। কিন্তু সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা নেই কারও কাছে। যখন শবদেহ প্রস্তুত করে নেওয়া হচ্ছিল শ্মশানে, ঘরের দাওয়ায় বসে তিনি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়েছিলেন। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি ঝরছিল। শেষবারের মতো তাকে শুধু দুই যমজ ছেলের মুখগুলো দেখিয়ে আবারও নিয়ে আসা হয় ঘরে।

নারায়ণের বড় ভাই বাবুল দাশ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ভাই তো সব হারিয়েছে। তার কিছুই তো আর রইল না। নিঃস্ব হয়ে গেছে। আমাদের পরিবারে এমন দুঃখজনক ঘটনা, কাকে কে সান্ত্বনা দেবে। যমজ দুটা ভাইপো, তাদের ছেড়ে কীভাবে বাঁচব জানি না। নারায়ণ ঘরেই আছে। কারও সঙ্গে কথা বলছে না। কারও সঙ্গে কথা বলার অবস্থাও নেই।’

বাবুল ও নারায়ণের মেঝ ভাই শম্ভু দাশ। পক্ষাঘাতগ্রস্ত শম্ভু তার তিন ছেলের মধ্যে বড় ছেলে বিপ্লবকে হারিয়ে পাগলপ্রায়।

বাবুল জানালেন, রীতা ও তার মেয়ে বাক প্রতিবন্ধী শ্রাবন্তী এবং বিপ্লবকে শ্মশানে দাহ করা হয়েছে। বর্ষা এবং যমজ দুই ছেলে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের মাটিতে সমাহিত করা হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে তাদের শ্মশানে তোলা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষ হয়। তাদের সঙ্গে মারা যাওয়া চিনুকে চন্দনাইশের সাতবাড়িয়ায় তাদরে পারিবারিক শ্মশানে দাহ করা হয়েছে।

জোয়ারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ চৌধুরীসহ অনেক জনপ্রতিনিধি ছুটে আসেন শ্মশানে। বিভিন্ন ধর্মের লোকজন শব কাঁধে তুলে নিয়ে শ্মশানবন্ধু হয়েছিলেন।

আমিন আহমেদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এমন শোকাবহ ঘটনা আমাদের ইউনিয়নে আর ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। একটি দুর্ঘটনা একই পরিবারের সাতটা মানুষের প্রাণ কেড়ে নিল। এমন দুর্ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। আমরা বাসচালকের শাস্তি দাবি করছি।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনা শশ্মান সোনার সংসার

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর