অক্টোবরে সড়কে প্রাণহানি ৪৩৭, এক-তৃতীয়াংশ মোটরসাইকেলে
১০ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:২১
ঢাকা: অক্টোবর মাসে সারাদেশে সড়ক ৪২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৩৭ জন। এর মধ্যে ১৪৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়ে, যা সড়কে মোট প্রাণহানির প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ। এ ছাড়া এই মাসে রেল পথে ২৯টি দুর্ঘটনায় ৫৩ জন এবং ছয়টি নৌ দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। সব মিলিয়ে অক্টোবরে সড়ক, রেল ও নৌ পথে ৪৬৪টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫০২ জন।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) যাত্রী কল্যাণ সমিতি তাদের মাসিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌ পথের দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্টোবরে ৪২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৬৮১ জন। একই সময় রেলপথে ২৯টি দুর্ঘটনায় ১৫৫ জন আহত হয়েছেন। ছয়টি নৌ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন দুইজন। নিখোঁজ রয়েছেন দুইজন।
আরও বলা হয়, ওই সময়ে ১৩১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৪ জন নিহত এবং ৭৬ জন আহত হয়েছেন। যা মোট দুর্ঘটনার ৩০.৫৩ শতাংশ, নিহতের ৩৩.৫৬ শতাংশ ও আহতের ১৭.৭১ শতাংশ।
সংগঠনটি জানায়, অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ঢাকা বিভাগে। আর সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে। ঢাকা বিভাগে ১৩৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৪১ জন নিহত ও ১৩২ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে, বরিশাল বিভাগে ২৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ৮৪ জন আহত হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে চারজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১২০ জন চালক, ৩৬ জন পথচারী, ২৮ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫২ জন শিক্ষার্থী, তিন জন শিক্ষক, ৬৮ জন নারী, ৩০ জন শিশু, দুইজন সাংবাদিক, দুইজন চিকিৎসক, একজন আইনজীবী, একজন প্রকোশলী এবং ১০ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে। এদের মধ্যে নিহত হয়েছেন- দুই জন পুলিশ সদস্য, একজন ফায়ার সাভিস সদস্য, দুইজন চিকিৎসক, দুইজন সাংবাদিক, একজন আইনজীবী, একজন প্রকোশলী, ৯৮ জন বিভিন্ন পরিবহনের চালক, ৩৬ জন পথচারী, ৪৭ জন নারী, ২৬ জন শিশু, ১৯ জন শিক্ষার্থী, ১১ জন পরিবহন শ্রমিক, তিন জন শিক্ষক ও ১০ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
এই সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সংগঠিত ৫৬৪টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এতে দেখা যায়, ২৪.৮২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩.৯৩ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ২১.৮০ শতাংশ বাস, ১৮.৬১ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৩.০১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ২.৬৫ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা, ৫.১৪ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৫০.৮১ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৭.০১ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.১৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১৬.৫৫ শতাংশ বিবিধ কারণে এবং ০.৪৬ ট্রোন-যানবাহনের সংঘর্ষে ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৬.১৩ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২২.১৪ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩০.৭৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৯.০৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৩৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৪৬ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংগঠিত হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার উল্লেখযোগ্য কারণ :
১. ট্রাফিক আইনের অপপ্রয়োগ, দুর্বল প্রয়োগ, ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম দুর্নীতি ব্যাপক বৃদ্ধি।
২. মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও তিন চাকার যানের ব্যাপক বৃদ্ধি ও এসব যানবাহন সড়ক মহাসড়কে অবাধে চলাচল।
৩. সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কে বাতি না থাকা। রাতের বেলায় ফক লাইটের অবাধ ব্যবহার।
৪. চলতি বর্ষায় সড়ক মহাসড়কের ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি।
৫. যানবাহনের ত্রুটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা।
৬. উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাদাঁবাজি।
৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালানো।
দুর্ঘটনার প্রতিরোধে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে সংগঠনটি। সেগুলো হলো-
১. মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মতো ছোট ছোট যানবাহন আমদানি ও নিবন্ধন বন্ধ করা।
২. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, ডিজিটাল পদ্ধতিতে যানবাহনের ফিটনেস প্রদান।
৩. রাতের বেলায় বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চালকদের রিফ্লেক্টিং ভেস্ট পোশাক পরিধান বাধ্যতামূলক করা।
৪. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকদের বেতন ও কর্মঘণ্টা সুনিশ্চিত করা।
৫. রাতের বেলায় চলাচলের জন্য জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে পর্যাপ্ত আলোক সজ্জার ব্যবস্থা করা।
৬. চলতি বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার মাঝে সৃষ্ট ছোট বড় গর্ত দ্রুত অপসারণ করা।
৭. গণপরিবহন বিকশিত করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা।
সারাবাংলা/জেআর/এনইউ