Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘২০২৯ সালের নির্বাচন আওয়ামী ও তালেবানের মধ্যে হবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০০:১৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ২০২৯ সালের নির্বাচন আওয়ামী ও তালেবানের মধ্যে হবে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, জামায়াত-মুসলিম লীগ-নেজামে ইসলামী পার্টির উত্তরসূরিরা এখন বিরোধী শিবির। রাজনীতির এই সংকটে ভারত ও রাশিয়া একদিকে অবস্থান নিয়েছে। আর আমেরিকা আরেকদিকে। নির্বাচনের পরে আমেরিকা চেষ্টা করবে এখন যারা বিরোধী তাদের তালেবানি রাজনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর চেরাগী পাহাড়ের বৈঠকখানা মিলনায়তনে শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের উদ্যেগে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

দেশ নতুন সংকটে পড়েছে উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘দেশ নতুন সংকটে পড়ে গেছে। নির্বাচন হবে, সরকার হবে, পার্লামেন্ট হবে। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে দেশ নীরব সিভিল ওয়ারের দিকে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, আমি স্বাধীনতা বিরোধীদের আর কখনও ক্ষমতায় আসতে দেবো না।’

তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে ৬৫ ভাগ ভোট পড়েছিল বাঙালির। কিন্তু ৩৫ ভাগ বাংলা ভাষাভাষি মানুষ ছয় দফার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। তারাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ চালিয়েছিল। তারা কিন্তু এটাকে এখনও অব্যাহত রেখেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২৯ সালের নির্বাচন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্য হবে না। আওয়ামী লীগ এবং তালেবানের মধ্যে হবে। যখন আমি যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ছিলাম বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎকে খুব গভীরভাবে দেখতে পাই। আমার কাছে এখন মনে হচ্ছে, দেশটা দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের দিকে যাবে। সাইলেন্ট সিভিল ওয়ারের দিকে যাবে। এটা কন্টিনিউ করবে। সেটা ২০২৯ সালের মধ্যে হবে। তালেবানি শক্তি ক্ষমতায় আসবে কি আসবে না সেটা পরের কথা।’

সামনে দেশের জন্য খুব কঠিন সময় উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘রাজনীতি ১৫ বছরে যেদিকে পিছিয়েছে অথচ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায়। প্রশাসন, সরকারি দলে, রাজনীতিতে, পুলিশে সর্বত্রই আমি পাকিস্তান দেখি। অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীদের দল হিসেবে জামায়াত ইসলামীর বিচারের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু আমাদের বলা হলো গো স্লো। তখন বুঝতে পারলাম ভেতরে ভেতরে আপস হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সামনে খুব কঠিন সময়। আমেরিকার বিরুদ্ধে ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা গভীরভাবে ভাবতে হবে। শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য সমঝোতা করছি। আমরা পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন করেছি। ধর্মীয়ভাবে যা যা হয়েছে আমরা অনেক সময় সেখানে নীরব ভূমিকা পালন করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ আমাদের গ্রাম-বাংলায় মেলা নেই, ক্লাব নেই। পহেলা বৈশাখ ও ২১শে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠান করলে প্রশাসন থেকে বলা হয়, বিকেল ৫টার পরে কোনো কিছু করা যাবে না। এর মধ্যে দিয়ে কাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। পাকিস্তান আমলে এসবকে তো আমরা চ্যালেঞ্জ করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘আজ চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতাও ক্রমশ আমরা হারিয়ে ফেলেছি। কখন… যখন যে সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে, তাদের আমলে যখন এ দিক-নির্দেশনাগুলো হয় তখন আক্ষেপের সুরে বলতে হয়, কোথায় চ্যালেঞ্জ করব? অথচ ক্রমশ জাতিকে পেছনের দিকে ঠেলে ফেলে দিচ্ছে।’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এ প্রসিকিউটর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের আওয়ামী লীগ নয়। আওয়ামী লীগ পেছন দিয়ে হেঁটে এখন ৫৪’র আগের আওয়ামী লীগে পরিণত হয়েছে। তাদের আবার ৭১’র দিকে আসতে হবে। এবং এ রাজনীতি ও তার সঙ্গে সংস্কৃতি যুক্ত হতে হবে।’

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘বেগম মুশতারি শফী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের জন্য আমৃত্যু লড়াই করে গেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনে সামনের কাতারে ছিলেন। দেশ এখন গভীর সংকটে। এ সংকটে মুশতারী আপা অতীতেও আমাদের আলো দেখিয়েছেন। তার সে আদর্শকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। মুশতারী আপার শেষ ইচ্ছা ছিল চট্টগ্রামে একটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর করার। সে ইচ্ছা পূরণে রাষ্ট্র এগিয়ে আসবে।’

কবিও সাংবাদিক ওমর কায়সার বলেন, ‘সময়টা মুখোশের আড়ালে চলে গেছে। সমাজটা অপশক্তির দখলে চলে গেছে। আমাদের সামনে যে পথ, সেই পথ পাড়ি দিতে হবে আমাদের মুশতারী শফীর আলোয়। শহিদজায়ার দেখানো পথে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। অবগুণ্ঠনে ঢাকা সময়কে আমাদের বের করে আনতে হবে। প্রগতির যাত্রা আবার শুরু করতে হবে সমাজে।’

উদীচী চট্টগ্রাম জেলা সংসদের সভাপতি ডা. চন্দন দাশের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা শীলা দাশগুপ্তের সঞ্চালানায় স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন নারীনেত্রী নুরজাহান খান, বোধন আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি আব্দুল হালিম দোভাষ, সাংবাদিক-প্রাবন্ধিক সুভাষ দে, শহিদজায়ার বড় সন্তান ফারজানা নজরুল, জামাতা সাংবাদিক-গবেষক আবদুল্লাহ জাফর সমীর ও ছেলে মেহরাজ শফী।

এর আগে উদীচীর শিল্পীদের শোক সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে স্মরণসভা শুরু হয়। শহিদজায়ার লেখা থেকে পাঠ করে শোনান আবৃত্তিশিল্পী তৈয়বা জহির আরশি। শহিদজায়াকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কবিতা পড়েন আবৃত্তিশিল্পী অঞ্চল চৌধুরী।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

আওয়ামী লীগ তালেবান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর