সরকারি কেনাকাটায় টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতি কমেছে: বিপিপিএ
২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:১১
ঢাকা: সরকারি কেনাকাটায় (দরপত্রে) প্রতিযোগিতা বাড়ছে। সেইসঙ্গে কমেছে টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতিও। আগে যেখানে যোগসাজস করে দুই বা তিনজন ঠিকাদার অংশ নিতেন সেখানে এখন এলটিএম পদ্ধতিতে ২১ দশমিক শূন্য ৯টি টেন্ডার জমা পড়ছে। এছাড়া অন্যান্য পদ্ধতিতে জমা পড়ছে গড়ে তিনটি করে দরপত্র। সেইসঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকারি ক্রয়বাতায়ন থেকে এখন সরকারি ক্রয়ের বিভিন্ন দিক জানতে পারছেন নাগরিকরা।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বিপিপিএ ভবনে ‘সরকারি ক্রয়ে নাগরিক সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এ কর্মশালার আয়োজন করে। সরকারি ক্রয় বাতায়ন উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা বিপিপিএ’র পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডি-নেটের ব্যবস্থাপনায় এবং বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন ডিজিটাইজিং ইমপ্লিমেন্টেশন মনিটরিং অ্যান্ড পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রজেক্টের (ডাইম্যাপ) আওতায় এটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিপিপিএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শোহেলের রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন। বক্তব্য দেন- বিপিপিএর পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মির্জা আশফাকুর রহমান এবং ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) সভাপতি হামিদ-উজ-জামান, সংগঠনের সহসভাপতি মাসুম বিল্লাহ। ডি-নেটের নির্বাহীপরিচালক ও টিমলিডার এম শাহাদাৎ হোসেন সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। সরকারি ক্রয়ে নাগরিক সম্পৃক্ততা ও সরকারি ক্রয় বাতায়ন বিষয়ে একটি উপস্থাপনা দেন ডি-নেটের ডাটা অ্যানালিটিকস এক্সপার্ট আন্দালীব বিন হক।
সেমিনারে জানানো হয়, সরকারি ক্রয় বিষয়েবস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন তৈরিতে সাংবাদিকদের জন্য তথ্য-উপাত্তের বড় একটি উৎস হতে পারে সরকারি ক্রয় বাতায়ন। এ সময় বিপিপিএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১১ থেকে ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ই-জিপির মাধ্যমে আহ্বানকৃত দরপত্রের সংখ্যা ৭ লাখ ৭৭ হাজার ৪৬৪টি। এসব দরপত্রের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৮ লাখ ৫২১ কোটি টাকা। ই-জিপি সিস্টেম থেকে এ পর্যন্ত আয় ২ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। ই-জিপিতে এ পর্যন্ত নিবন্ধিত দরদাতার সংখ্যা ১ লাখ ১১ হাজার ১৭৮ জন। দেশের ৫২টি ব্যাংকে ই-জিপি সিস্টেমে যুক্ত রয়েছে। সারাদেশে এসব ব্যাংকের ৬ হাজার ৯৯০টি শাখা দরদাতাদের পেমেন্ট সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
সেমিনারে বলা হয়, সরকারের লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবছর উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে সরকারি ক্রয়ে ব্যয়ের পরিমাণ। বর্তমানে জাতীয় বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ৮০ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে সরকারি ক্রয়ে। বড় অংকের এই ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে নাগরিক সম্পৃক্ততা। নাগরিকদের এ সম্পর্কিত তথ্যজানাতে ‘সরকারি ক্রয় বাতায়ন’ নামে সিটিজেন পোর্টাল চালু করেছে বিপিপিএ (সাবেক সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট-সিপিটিইউ)।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘সাংবাদিকরাও সরকারি ক্রয়ের অংশীজন। তারা তাদের লেখলির মাধ্যমে সরকারিক্রয়ের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। সরকারি ক্রয় বাতায়নের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সরকারি ক্রয়বিষয়ক প্রতিবেদন তৈরিতে সাংবাদিকের জন্য সহায়ক হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সিস্টেমের পরিবর্তন না হলে দুর্নীতি দূর করা যায় না। আমরা সে কাজটিই করছি। ইতোমধ্যেই ইজিপি চালু হওয়ায় দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজি কমে গেছে। এখন আর টেন্ডার বাক্স নিয়ে দৌড়াতে হয় না।’
উল্লেখ্য, সিটিজেন পোর্টালটিতে শুধু জাতীয় পর্যায়ের নয়, দেশের সব জেলার তথ্য আছে। কোথায় কী ধরনের উন্নয়ন কাজ হচ্ছে, কোন কোন কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে বা হবে, কত টাকার ক্রয় চুক্তি হয়েছে, কোন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, সরকারি ক্রয়ের প্রধান সূচকগুলোর (কেপিআই) অবস্থা কী ইত্যাদি নানা তথ্য দেখার সুযোগ রয়েছে এতে।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম