জবাব চাইবে জাপার পরাজিতরা, ভাঙতে পারে দল!
৮ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:০২
ঢাকা: অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও তাদের সমমনা জোটরা অংশ না নিলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল, জাতীয় পার্টি এবং নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ২৮টি দল অংশ নেয়। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমঝোতার ভিত্তিতে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয়। কিন্তু নির্বাচনে জাপা মাত্র ১১টি আসনে জয়লাভ করতে পেরেছে। এটি জাপার নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে কম আসনে জয়। আর এ কারণে ক্ষেপেছেন পরাজিত প্রার্থীরা। তারা জাপা পুনরুদ্ধারে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে চান।
জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুয়েকদিনের মধ্যেই জাপার প্রার্থীরা ঢাকায় ফিরে জোট বেঁধে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর কাছে জবাব চাইবেন। জবাবে সন্তুষ্ট না হলে দলটিতে নতুন নেতৃত্ব আনার কথা বলবেন তারা। যদি এ ব্যাপারে কেউ পদক্ষেপ না নেয় তাহলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জাপার পরাজিত প্রার্থীরা আরেকটি জাতীয় পার্টির গঠনের পরিকল্পনা হাতে নেবে। আর এর মধ্য দিয়ে দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতির পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে মনে করছেন রাজনীতি বিশ্লেষকরা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নির্বাচনকে জমজমাট ও অংশগ্রহণমূলক দেখানোর জন্য সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এর পরই উন্মুক্তভাবে ১৭২টি আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের নির্বাচন করতে বলা হয়। নির্বাচনের খরচ হিসেবে প্রত্যেক প্রার্থীকে ৩০ লাখ করে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় দলটির চেয়ারম্যান। কিন্তু সেই টাকা পায়নি কোনো প্রার্থীই।
জানা গেছে, সমঝোতার ২৬টি আসনের প্রত্যেককে নির্বাচনি কৌশলে জিতিয়ে আনার কথা বলেছিলেন পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব। ওই ২৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগ তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়। কথা ছিল, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জোটের প্রার্থীকে সমর্থন করবে। তবে এক্ষেত্রে ঘটেছে ঠিক উল্টোটি। আওয়ামী লীগ সমঝোতার ২৬ আসন থেকে নৌকার প্রার্থীদের তুলে নিলেও মাঠে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা থেকে যায়। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জাপার প্রার্থীদেরও সমর্থন দেয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিব ও কো-চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রার্থীরা যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ‘এত চিন্তার দরকার কি? তোমরা এমপি হলেই তো হলো।’ এছাড়া সমঝোতার ২৬টি আসনের প্রত্যেক প্রার্থীকে ২ কোটি করে টাকা দেওয়ার কথা ছিল। সেটাও পায়নি তারা। পরাজিত প্রার্থীদের ধারণা, তাদের প্রার্থিতা পুঁজি করে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি হয়েছেন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী জাপার জয়লাভ করা প্রার্থীরা হচ্ছেন- দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের (রংপুর-৩), মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু (কিশোরগঞ্চ-৩), কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৫), এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (পটুয়াখালী-১), প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (ফেনী-৩), হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (ঠাকুরগাঁও-৩), গোলাম কিবরিয়া (বরিশাল-৩), এ কে এম সেলিম ওসমান (নারায়ণগঞ্জ-৫), মো. আশরাফুজ্জামান (সাতক্ষীরা-২), এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান (কুড়িগ্রাম-১) ও শরিফুল ইসলাম (বগুড়া-২)।
জানা গেছে, জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এবার ২৮৩টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। এদের মধ্যে ১১ জন প্রার্থী নিজে থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। আর নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ের পর শেষ পর্যন্ত টিকে থাকেন ২৬৫ জন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দল থেকে আর্থিক সুবিধা না পাওয়ায় নির্বাচনি প্রচার শুরুর পর থেকে ভোটের আগের দিন পর্যন্ত ১৯ জন প্রার্থী সরে দাঁড়ান। শেষ পর্যন্ত ভোটে ছিলেন ২৪৬ জন প্রার্থী।
নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী ব্যরিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমঝোতার পর কেন জাপার প্রার্থীরা হেরে গেল এটা আমারও প্রশ্ন। আমি মনে করি, উত্তরবঙ্গে জাতীয় পার্টিকে দমাতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হয়তো মনে করেছেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বেশি সংখ্যক জয়ী হয়ে সংসদে গেলে তারা হবে বিরোধীদল। সংসদ থেকে পদত্যাগ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। সেজন্য জাপার সঙ্গে আসন সমঝোতা করেও তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচনি কৌশল খাটানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়া উচিত হয়নি। নির্বাচন বর্জন করাটাই যুক্তিযুক্ত হতো।’
এ সব বিষয় নিয়ে এক প্রার্থী নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও ব্যরিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জাতীয় পার্টিকে বেকায়দায় ফেলেছে। দুয়েকদিন পর ঢাকায় গিয়ে আমরা যারা নির্বাচনে হেরে গেছি তারা জিএম কাদের ও মহাসচিব চুন্নুর কাছে জবাব চাইব। প্রয়োজনে আমরা যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি তারা পৃথকভাবে একটা কিছু করার চেষ্টা করব।’ এ ছাড়া প্রতিশ্রুত টাকার হিসাব চাওয়ার কথাও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে জাপা নেতা রেজাউল ইসলাম ভূইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমঝোতার নামে জাতীয় পার্টিকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। যারা সমঝোতার মেকানিজমে ছিলেন তারা জাপাকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য দায়ী। সব মিলিয়ে জাপার রাজনীতি জনগণের মাঝে টিকে থাকবে কি না সেটিই এখন প্রশ্ন!‘
এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সারাবাংলাকে বলেন, ‘সমঝোতার ২৬ আসনের ১৫টিতে ভরাডুবি প্রসঙ্গে এই মুর্হূতে কোনো মন্তব্য করব না। ঢাকায় ফেরার পর সবকিছু নিয়ে মন্তব্য করব। দুয়েকদিনের মধ্যে ঢাকায় ফিরব। তখন দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/পিটিএম