লিটারে ১০ টাকা কমলো সয়াবিন তেলের দাম
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:০৬
ঢাকা: সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ১ মার্চ থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হবে। দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক টাস্কফোর্সের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, এস আলম, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিনিধির আছেন। আমি ওনাদের বলেছি প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা করেন আমাদের যারা শিল্প এবং ব্যবসায়ী বড় আকারের আছেন তাদেরও সোশ্যাল একটা রেসপনসিবিলিটি আছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে আমি বলব না যৌক্তিকভাবে, কিছুটা অযৌক্তিকভাবেও আমরা ওনাদেরকে অনুরোধ করেছি এবং ওনারা ভোজ্যতেলের দাম ১০ টাকা প্রতি লিটারে কমানোর জন্য একমত হয়েছেন। ওনারা নিজেরাই প্রস্তাবটা করেছেন।
তিনি বলেন, সর্বোচ্চ বাজার মূল্য রমজানে প্রতি এক লিটারের বোতল ১৬৩ টাকা করার বিষয়ে আমরা একমতে পৌঁছেছি। যে মূল্যটা ছিল ১৭৩ টাকা এবং তার আগের বছরে ১৮৫ টাকার মতো ছিল।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন আমাদের সার্কুলারটা এসেছে ৮ ফেব্রুয়ারি, যেকোনো জাহাজের বিদেশ থেকে আসতে প্রায় এক মাস লেগে যায় এবং সেটা খালাস করে ভোক্তা পর্যায়ে যেতে মিনিমাম দুই মাস লেগে যায়। দুই মাস আমাদের রমজানের নেই। ওনারা আমাদের বিশেষ অনুরোধে এই বাজার মূল্যটা ১ মার্চ থেকে কার্যকর করবেন।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু তেলের সঙ্গে অনেক কিছু সম্পৃক্ত, ভোক্তা পর্যায়ে একটি স্বস্তি বাজারে আসবে এবং খুচরা পর্যায়ের আমরা যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনব। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি লুজ পর্যায়ে লিটারে সর্বোচ্চ মূল্য থাকবে ১৪৯ টাকা। আর ৫ লিটারের বোতল ৮০০ টাকায় বিক্রি হবে। আমরা আশা করছি এতে আমাদের ভোক্তা সাধারণ উপকৃত হবেন।
তিনি বলেন, আমাদের যারা ব্যবসায়ী আছেন বিভিন্ন পর্যায়ের তারা এটুকু নিশ্চিত করেছেন আগামী রমজানে যে পরিমাণ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বাজারে থাকা দরকার বা মজুত থাকা দরকার বা পাইপলাইনে থাকা দরকার সবগুলোই মোটামুটি পর্যাপ্ত আছে।
প্রতিমন্ত্রী টিটু বলেন, আপনারা সবাই জানেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ, বিভিন্ন কারণে পরিবহনের ব্যয় বেড়েছে, ডলারে আমদানি পর্যায়ে ব্যয় বেড়েছে। তারপরও প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের ব্যবসায়ীরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যৌক্তিক পর্যায়ে দাম যাতে থাকে সেজন্য কিছু চেঞ্জ করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আগামীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় যে পণ্যগুলো আছে সেগুলো আমদানিতে আরেকটু সহযোগিতা কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো যাতে করে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে সেজন্য পদক্ষেপ তারা নেবে। সেইসঙ্গে এনবিআরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলোর ট্যারিফ আগামী বাজেটে যেন যৌক্তিক পর্যায়ে থাকে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে গোলাম মাওলা বলেছেন, উৎপাদনকারী যারা আছেন তাদের সরবরাহ যদি ঠিক থাকে, ওনাদের কাছে যে আমদানি করা পণ্য আছে এবং যে পরিমাণ মজুত আছে এটা রমজানের জন্য যথেষ্ট।
তিনি বলেন, ভারত থেকে পেঁয়াজ এবং চিনি আমদানির জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো আমরা নিয়েছি, নীতিগতভাবে ভারত সরকার পেঁয়াজের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এখন আমরা অফিসিয়ালি কাগজ পেলে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে এসে পৌঁছাতে পারে সে পদক্ষেপ আমরা নেব।
টিটু বলেন, মিয়ানমার নিয়ে সবসময় নিউজ হয় আমাদের বর্ডার এবং রোহিঙ্গা নিয়ে। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমরা যেন বর্ডার থেকে নদী পথে আনতে পারি সে ধরনের একটি এমওইউ ড্রাফট আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসেছে।
তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি ব্যাপারটি পজিটিভভাবে নিয়েছেন। আমাদের যিনি নৌ-পরিবহন মন্ত্রী রয়েছেন ওনাকে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের যে দ্বিপাক্ষিক নৌ পরিবহন চুক্তি আছে তার মাধ্যমে আমরা যেন মিয়ানমার থেকে সহজে পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারি।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় বছরে দুইবার পেঁয়াজ উৎপাদনের যে উদ্যোগ নিচ্ছে আমরা আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চালের মতো এটাতেও আমাদের আমদানি নির্ভর হতে হবে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিতরণ আমরা শুরু করেছি। এই রমজানে আরো দুইবার আমরা এটা করব। সেখানে চাল থাকবে ৫ কেজি, তেল থাকবে, ডাল থাকবে, চিনি, খেজুর এবং ছোলা থাকবে।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের নেতৃত্বে আগামী ২২ তারিখ মৌলভীবাজারে যাব এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করব। যাতে তারা পণ্য সরবরাহের মাধ্যমে সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভোক্তাদের জন্য অ্যাভেইলেবল রাখতে পারে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজকে আমরা শুধু ভোজ্যতেলের বিষয়ে কথা বলেছি এবং দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। আমরা আশাকরি বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাকি যে পণ্যগুলো আছে সেগুলোর দাম যৌক্তিক পর্যায়ে চলে আসবে।
তিনি বলেন, পাম অয়েল আমাদের বোতল আকারে আসে না। একটা বিষয় জানিয়ে রাখা দরকার এই প্রথম আন্তর্জাতিক বাজারে পাম আয়েলের দাম সয়াবিনের থেকে বেশি। সুতরাং এটা যদি আমরা এখন পুনর্নির্ধারণ করতে যাই সেটা ভোক্তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে যাবে।
সাংবাদিকদের আর এক প্রশ্নের উত্তরে টিটু বলেন, ১ মার্চ থেকে দামটা কার্যকর হবে। আমাদের এই ট্যারিফটা ১৫ তারিখ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এরপর আমরা বসে প্রতি মাসে যেমন তেলের দাম আমাদের ট্যারিফ ঠিক করে, প্রতিমাসে আমাদের যারা মিলমালিক আছে তাদের সঙ্গে বসে দাম রেগুলার বেসিসে পুনর্নির্ধারণ করে দেব। কারণ আমাদের ব্যবসায়ীরা যদি ব্যবসা না করতে পারে তাহলে পণ্যের সরবরাহে সংকট দেখা দেবে।
সারাবাংলা/জেআর/এনইউ