মোংলা বন্দর উন্নয়নে ব্যয় হবে ১৫৫০ কোটি টাকা
২২ মার্চ ২০২৪ ০৮:১৭
মোংলা (বাগেরহাট): মোংলা বন্দরের উন্নয়নে পাঁচ বছর মেয়াদের একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পরামর্শক খাতে ব্যয় হবে ১০ কোটি টাকা। এছাড়া দুই হাজার একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ কোটি, ১০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বোট, ২৬৪ লাখ ঘনমিটার কাটার সাকশন ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং খাতে ব্যয় হবে ৮৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ৮৩ দশমিক ৫ লাখ ঘনমিটার ট্রেলিং সাকশন হুপার ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং খাতে ব্যয় হবে ৫১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ১৫ লাখ ঘনমিটার মাটির বেড়িবাঁধ নির্মাণ খাতে ব্যয় হবে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
পদ্মা সেতু চালুর পর মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বেড়েছে বহুগুণ। তবে বন্দরের পশুর নদীতে পানির গভীরতা মাত্র সাত মিটার হওয়ায় বড় জাহাজ ভিড়তে পারছে না। যার ফলে জাহাজ গভীর সমুদ্রে নোঙর করে ছোট লাইটার জাহাজ দিয়ে মালামাল খালাস করতে হচ্ছে। এতে সময় ও ব্যয় দুটিই বাড়ছে।
এ পরিস্থিতিতে চ্যানেলে ড্রাফট বাড়াতে ‘মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং’ শীর্ষক এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে মোংলা বন্দরের কর্তৃপক্ষ। এর আওতায় জেটির ড্রাফট বৃদ্ধি করে ৯ দশমিক পাঁচ থেকে ১০ মিটার করা হবে। ফলে সহজেই বড় আকারের জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, বন্দর উন্নয়নে পাঁচ বছর মেয়াদের একটি পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি। আধুনিক ড্রেজার কিনব। ফলে মোংলা বন্দরের আশপাশের ড্রাফট সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার হবে।
তিনি বলেন, মোংলা বন্দর চ্যানেলের হারবার এলাকায় ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার জাহাজ হ্যান্ডেল করার লক্ষ্যে ২০২০ সালে পশুর চ্যানেলের আউটার বারে ড্রেজিং করে কাঙ্ক্ষিত গভীরতা সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু পলি জমার কারণে গভীরতা কমায় আউটার বারে হারবার চ্যানেলে ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হয়। এ এলাকায় অর্জিত গভীরতা ধরে রাখার জন্য রাজস্ব বাজেটে অনিয়মিতভাবে ড্রেজিং করা হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে আউটার বারে নাব্যতা বজায় রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত সংরক্ষণ ড্রেজিং করা প্রয়োজন।
রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান আরও বলেন, বন্দরের জেটিতে ৯ দশমিক ৫ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ‘মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ইনার বার এলাকায় ২৩ কিলোমিটার এলাকায় ৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট অর্জনের লক্ষ্যে ২৩৭ দশমিক ৫৫ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং চলমান। এ কাজ জুন ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এ এলাকায়ই অর্জিত নাব্যতা ধরে রাখার জন্য সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রয়োজন। এ কারণেই নতুন এই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. একেএম আনিসুর রহমান বলেন, মোংলা বন্দরের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ এখন ভালো। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে মোংলা বন্দরের চাপ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। কিন্তু বন্দরের আশপাশে ড্রাফট মাত্র সাত মিটার। ফলে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। এ জন্য মোংলা ঘিরে আমরা মেগা উদ্যোগ নিয়েছি।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হবে পরামর্শক খাতে। এছাড়া দুই হাজার একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ কোটি, ১০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বোট, ২৬৪ লাখ ঘনমিটার কাটার সাকশন ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং খাতে ব্যয় হবে ৮৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ৮৩ দশমিক ৫ লাখ ঘনমিটার ট্রেলিং সাকশন হুপার ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং খাতে ব্যয় হবে ৫১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ১৫ লাখ ঘনমিটার মাটির বেড়িবাঁধ নির্মাণ খাতে ব্যয় হবে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগের ডেপুটি ডাইরেক্টর মো. মাকরুজ্জামান জানান, আগের তুলনায় মোংলা বন্দরে আমদানিকারক বেড়েছে। তাই আমদানি-রফতানিও বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের আরও বেশি সেবা দিতে এই উন্নয়ন পরিকল্পনা।
উল্লেখ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে দেখা গেছে, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের নাব্যতা সংরক্ষণ করা এবং পশুর চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে পাঁচ বছরে প্রায় ৩৪৭ দশমিক ৫০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হবে।
সারাবাংলা/এনএস