Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শান্তি আলোচনার মধ্যেই হঠাৎ উন্মত্ত কেএনএফ, বিভাজনের ইঙ্গিত

রমেন দাশ গুপ্ত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৫ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:০৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও শান্তি আলোচনায় এসে আবার মাঝ পথে সহিংসতায় জড়াল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। চলমান শান্তি আলোচনার মধ্যে কেএনএফের এমন সংঘাত অনেক প্রশ্নের জন্ম দিলেও যুতসই উত্তর মিলছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবশ্য বলছে, শক্তিমত্তা দেখাতেই সংগঠনটির সদস্যরা এমন সহিংসতা চালিয়েছেন।

অন্যদিকে কেএনএফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিবৃতি প্রচার করে দাবি করেছে, শান্তি আলোচনার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় তারা এ পথে গেছে। তবে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেএনএফের মধ্যে উপদলীয় তৎপরতা শুরু হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় একপক্ষের সমঝোতার মনোভাব আরেক পক্ষ ভণ্ডুল করে দিতে চায়।

প্রাথমিকভাবে জানা যায়, বান্দরবানের বম জাতিগোষ্ঠীর কিছু ব্যক্তি মূলত ২০২১ সাল থেকে পাহাড়ে বিভিন্ন তৎপরতা শুরু করেন। ২০২২ সালে এর তৎপরতা প্রকাশ্যে আসে। একাধিক সশস্ত্র তৎপরতার মাধ্যমে কেএনএফ তাদের আত্মপ্রকাশের জানান দেয়। তাদের দাবি, তারা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের ছয়টি জাতিগোষ্ঠী— বম, পাংখোয়া, লুসাই, খিয়াং, ম্রো ও খুমির প্রতিনিধিত্ব করছে। বান্দরবানের রুমা উপজেলার ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় কেএনএফের আস্তানা গড়ার তথ্যও মেলে।

আরও পড়ুন-

একসময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সংগঠনটি সক্রিয় হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময় বিবৃতিতে তারা কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) নামে একটি সশস্ত্র দল গঠন ও তাদের সভাপতি হিসেবে নাথান বমের নাম ঘোষণা করে। নাথান বম বান্দরবানের রুমা উপজেলার এডেন পাড়ার অধিবাসী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী নাথান কর্মজীবনে এনজিও কর্মী ছিলেন। তার নেতৃত্বাধীন সংগঠনটির তৎপরতার মধ্যে তিনি এখন অজ্ঞাতবাসে আছেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন বিবৃতিতে কেএনএফ দাবি করে, তারা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের ৯টি উপজেলা নিয়ে আলাদা রাজ্য চায়। সেই রাজ্যের কথিত মানচিত্রও তারা প্রকাশ করে। উপজেলাগুলো হচ্ছে— রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি, রুমা, থানচি, লামা ও আলীকদম।

সর্বশেষ ব্যাংক লুটসহ সশস্ত্র সহিংসতার আগে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত কেএনএফ পাহাড়ে অন্তত ৯টি ঘটনা ঘটায়। সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, এতে অন্তত ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আছে— চারটি হামলায় পাঁচ সেনাসদস্যের মৃত্যু, রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাংপাড়া এলাকায় ইউপিডিএফের (গণতান্ত্রিক) সঙ্গে সংঘর্ষে আটজন ও রুমা উপজেলার মুয়ালপিপাড়া একজন নিহত হওয়া, এরপর রোয়াংছড়ি উপজেলার পাইংখিয়ংপাড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের একজন নেতাসহ বম জনগোষ্ঠীর তিনজন এবং রামথারপাড়ায় থংচুল বম নামের এক কারবারিকে গুলি করে হত্যা এবং রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ির বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়ায় তিন ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার ঘটনা।

এর মধ্যে ২০২২ সালের অক্টোবরে কেএনএফের সঙ্গে ‘গজিয়ে ওঠা’ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম ফিল হিন্দাল শরক্বীয়ার সম্পৃক্ততার তথ্য পায় র‌্যাব। এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য অনুযায়ী, হরকাতুল জিহাদ (হুজি), আনসার আল ইসলাম ও জেএমবির সাবেক সদস্যদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠনটিকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয় কেএনএফ। এরপর দফায় দফায় অভিযানে র‌্যাব দুই সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে। পরে সরকার জঙ্গি সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

কেএনএফের তৎপরতায় পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে পড়লে সরকার সংগঠনটির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়। ২০২৩ সালের ২৯ মে বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। ওই বছরের জুলাই ও আগস্টে কমিটির সঙ্গে কেএনএফের দুইবার ভার্চুয়াল আলোচনা হয়। পরে ৫ নভেম্বর ও চলতি বছরের ৫ মার্চ রুমা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মুনলাই পাড়ায় প্রথমবারের মতো কেএনএফের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সরাসরি দুটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে প্রথমবারের মতো প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

২০২২ সালে একাধিক সশস্ত্র তৎপরতার মাধ্যমে কেএনএফ তাদের আত্মপ্রকাশের জানান দেয়। ছবি: কেএনএফের ফেসবুক পেজ থেকে

চলমান শান্তি আলোচনার মধ্যেই বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে গত ২ এপ্রিল রাতে ও পরদিন দিনদুপুরে দুটি ব্যাংকে হামলার ঘটনা ঘটে। ২ এপ্রিল রাতে বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে ডাকাতি ও ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ এবং পুলিশ ও আনসারের ১৪টি অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটে। পরদিন দুপুরে থানচিতে কৃষি ও সোনালী ব্যাংকে সশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। রুমা থেকে অপহৃত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর ৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় ছাড়া পান। এ ছাড়া ৪ এপ্রিল রাতে আবার দুর্গম পাহাড় থেকে থানচি থানা লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে।

আকস্মিকভাবে এ সশস্ত্র তৎপরতার মধ্য দিয়ে কেএনএফ আবারও আলোচনায় এসেছে এবং এতে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। আলোচনা শুরুর পর পাহাড়ের যে জনগোষ্ঠী শান্তির আশায় ছিল, তাতে মারাত্মক ব্যাঘাত তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতিও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। ৪ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে শান্তি কমিটির নেতারা এসব সশস্ত্র কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। চুক্তিভঙ্গ করে সশস্ত্র কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় সংগঠনটির সঙ্গে সব ধরনের আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণাও দেন তারা।

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য জ্যেষ্ঠ্য সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেএনএফ হঠাৎ করে এমন ঘটনা ঘটাবে, এটা আমাদের ধারণারও অতীত ছিল। শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে কেএনএফের চার দফা বৈঠক হয়েছে। তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া দিয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ২২ এপ্রিল আবার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তাদের সঙ্গে আমাদের আন্তঃযোগাযোগ ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই যেসব ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তারা আমাদের আগে থেকে বিন্দুমাত্র ধারণা দেয়নি। এ অবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির পক্ষ থেকে সব ধরনের আলোচনা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

আকস্মিক কেএনএফের এ আগ্রাসী মনোভাব কেন— এ প্রশ্নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো মনে করছে, এর পেছনে মূলত তিনটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, কেএনএফ সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে, সেটা কাটানোর জন্য তারা ব্যাংক লুটের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাদের অস্ত্রে দরকার ছিল, সেজন্য তারা অস্ত্র লুট করেছে। এরপর কেএনএফ ৯টি উপজেলা নিয়ে আলাদা রাজ্য প্রতিষ্ঠার যে দাবি দিয়েছে, সেটি মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বুঝতে পেরে তারা শক্তিমত্তা প্রদর্শনের চেষ্টা করেছে।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘শ্রেষ্ঠতা, উত্তরসূরীদের অনুপ্রেরণা ও বহির্বিশ্বে তাদের সহযোগীদের সংগঠনটির সক্ষমতা জানান দিতেই ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুট, অপহরণ ও হামলার ঘটনাটি কেএনএফের সশস্ত্র সদস্যরা ঘটিয়েছে।’

শান্তি কমিটির সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই কেএনেএফ সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে বান্দরবানে। ছবি: কেএনএফের ফেসবুক পেজ থেকে

‘কেএনএফ তাদের সমর্থক ও প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দেখাতে চাইছে, তারা যথেষ্ট শক্তিশালী একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী। তাদের সন্ত্রাসীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ লক্ষ্যে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কাজ করছিল। কিন্তু সেই সুযোগে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ, অস্ত্র লুট, পুলিশ ক্যাম্পে গুলিবর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম চালিয়েছে,’— র‌্যাবের এ কর্মকর্তার ভাষ্য।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নুরে আলম মিনা সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূলত ফান্ড সংগ্রহের জন্য দুটি ব্যাংকে হামলা হয়েছে। রুমায় বেশি টাকা রয়েছে, তাই ভল্ট ভেঙে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর থানচিতে ঘটনার দিন হাটবার থাকায় ব্যাংকে লেনদেন বেশি হওয়ার কথা, তাই সেখানে ডাকাতি হয়েছে।’

সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনুও মনে করেন, টাকা ও অস্ত্রের সংকট কাটানো এবং নিজেদের শক্তি জানান দেয়ার চেষ্টা হিসেবে হঠাৎ কেএনএফ সশস্ত্র তৎপরতা চালিয়েছে।

তবে কর্মজীবনে দীর্ঘসময় পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ করা অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম মনে করছেন, সর্বশেষ সশস্ত্র তৎপরতার মাধ্যমে কেএনএফের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দৃশ্যমান হয়েছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক এমদাদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ ধরনের গ্রুপগুলো, যারা সশস্ত্র তৎপরতায় যুক্ত থাকে, তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি খুব স্বাভাবিক। প্রথমত নেতৃত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। আমরা জেএসএস-ইউপিডিএফের মধ্যেও একাধিক গ্রুপ-উপগ্রুপ দেখতে পাই। কুকি চীনের মধ্যেও এটাই হয়েছে, বলা যায়। যে ঘটনাগুলো তারা ঘটিয়েছে, এগুলো তো হঠকারী পদক্ষেপ। কারণ তারা তো আলোচনার মধ্যে আছে। এর মধ্যে এমন পদক্ষেপে প্রমাণ হয় যে তাদের মধ্যে বিভাজন আছে। যারা আলোচনা চায় না, তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’

পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নিয়ে কাজ করা একাধিক সূত্রও দাবি করেছে, কেএনএফ প্রধান নাথান বমের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে সংগঠনটিতে আরেকটি পক্ষ তৈরি হয়েছে, যারা শান্তি আলোচনা ভণ্ডুল করতে চায়। এর ফলে সংগঠনটির কমান্ড ভেঙে গেছে। সংঘটিত ঘটনায় তৃতীয় কোনো পক্ষ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং অনেক নতুন মুখও ঘটনায় জড়িত ছিল। হামলায় অংশ নেওয়া কারও কারও মুখে কালি লাগানো ছিল।

সংশ্লিষ্টরা যখন এমন তথ্য দিচ্ছেন, তখন ফেসবুকে কেএনএফের একটি বিবৃতি ছড়িয়ে পড়েছে। কেএনএফের মিডিয়া ও ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের প্রধান কর্নেল সলোমনের নামে ছড়ানো এ বিবৃতিতে সরকারের বিরুদ্ধে শান্তি আলোচনার শর্ত ভঙ্গ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

কেএনএফের অন্যতম দাবি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির ৯ উপজেলা মিলে তাদের স্বতন্ত্র রাজ্য দিতে হবে। ছবি: কেএনএফের ফেসবুক থেকে

তাদের অভিযোগ, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির বৈঠকে উভয় পক্ষের সই করা শর্ত অনুযায়ী জেলে বন্দিদের এক মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল, যা পাঁচ মাসেও করা হয়নি। শর্ত অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীকে মানবিক সাহায্য ও ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া সেনাচৌকি সরিয়ে না নেওয়াসহ আরও বিভিন্ন অভিযোগ তোলা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, লোক দেখানো শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি করে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে শুধুমাত্র প্রহসন ও কালক্ষেপণ করে কেএনএফকে দুর্বল ও নিস্তেজ করার পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

জানতে চাইলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্য জ্যেষ্ঠ্য সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিবৃতিটি আমাদের নজরে এসেছে। যারা জেলে বন্দি আছে বলা হচ্ছে, তারা কোন মামলায়, কোথায় গ্রেফতার হয়ে, কোন জেলে আছে সেগুলো তো আগে নিশ্চিত হতে হবে। তথ্য সংগ্রহ করে তাদের শনাক্ত করতে হবে এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে তারপর মুক্তির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে হবে। এটা তো মুখের কথা নয়। সেই প্রক্রিয়া তো চলছে। মানবিক সাহায্যের বিষয় বলা হয়েছে। ১৫০ থেকে ১৬০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য এরই মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। আরও খাদ্যশস্য সাংগ্রাইয়ের আগে বিতরণের কথা ছিল।’

‘এরপর ৯টি উপজেলা থেকে তারা যে আলাদা রাজ্য প্রতিষ্ঠার দাবি করেছে, সেটা তো আমরা বৈঠকেই বলেছি যে এটা সরকার কিংবা প্রশাসনের পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এটা করার জন্য তো সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সরকারের পক্ষে এ দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়, এটা আমরা বৈঠকেই বলেছি। এরপরও তাদের কোনো কথা থাকলে তারা ২২ এপ্রিল আবার যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল, সেখানে বলতে পারত। এ জন্য সশস্ত্র তৎপরতায় যুক্ত হওয়ার তো কোনো দরকার ছিল না,’— বলেন মনিরুল ইসলাম মনু।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কেএনএফকে সরল বিশ্বাসে গ্রহণ করেছে। এটা উচিত হয়নি। সামগ্রিক ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল, যেটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। এ জন্যই এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। এরপরও যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হচ্ছে। আশা করছি, সবকিছু অভিযানে পরিষ্কার হবে।’

সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম মনু বলেন, ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি তো কোনো অথরিটি না, এটা একটা ব্রিজ মাত্র। কেএনএফের সঙ্গে সরকারের যোগসূত্র স্থাপনের দায়িত্ব পালন করেছে কমিটি। কেএনএফের সঙ্গে আমাদের যা আলোচনা হয়েছে, তা আমরা সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে অবহিত করেছি। আমাদের যা করণীয় সেটাই আমরা পালন করেছি।’

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ পাহাড়ে গোলাগুলি বান্দরবান ব্যাংক লুট ব্যাংকে হামলা শা‌ন্তি ক‌মি‌টি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর