ঢাকা: ঢাকার গাজীপুর থেকে রওনা দিয়েছিল স্বামী-স্ত্রী-সন্তানের ছোট্ট পরিবারটি। গন্তব্য গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া। ঈদের আগে সময় করতে না পেরে ঈদযাত্রার জন্য তারা বেছে নেন ঈদুল ফিতরের দিনটিকেই। পৌঁছে যান সদরঘাটেও। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লঞ্চে আর চড়া হয়নি তাদের, ঈদ করতে ফেরা হয়নি বাড়িতে।
আরেকটি লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে গেলে সেই দড়ির আঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন এই পরিবারের তিনজনই। তাদের মধ্যে মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। মুক্তার মৃত্যুতে তাই অনাগত এক প্রাণও পৃথিবীতে আসার আগেই হারিয়ে গেল মহাকালের গর্ভে।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ঈদুল ফিতরের দিন বিকেল ৩টার দিকে সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনে এ দুর্ঘটনা ঘটে এমভি তাসরিফ-৪ লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে গেলে। প্রাণ হারান স্বামী মো. বেল্লাল, তার স্ত্রী মুক্তা এবং তাদের তিন বছর বয়সী সন্তান মাইশা। রিপন হাওলাদার ও মো. রবিউল নামে আরও দুজন প্রাণ হারিয়েছেন এই দুর্ঘটনায়।
আরও পড়ুন- লঞ্চঘাটে মা-বাবার সঙ্গে প্রাণ গেল ৩ বছরের শিশুর
পুলিশ ও নৌ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বেল্লালের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ঘাটিচরা গ্রামে। তার বাবা মৃত আব্দুল খালেক। সদরঘাটে দুর্ঘটনার পরপরই গুরুতর আহত অবস্থায় সবাইকে নেওয়া হয় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করলে মরদেহগুলো রাখা হয় হাসপাতালের মর্গে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে হাজির হন মুক্তার ভাই ফরিদুল ইসলাম সবুজ। বোন, দুলাভাই, ভাগনিকে হারিয়ে প্রায় বাকরুদ্ধ। এর মধ্যেও জানালেন, তার বোন মুক্তা ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা। ঈদ করার জন্য তারা বাড়ির পথে রওনা দিতে সদরঘাটে এসেছিলেন।
ফরিদুল ইসলাম সবুজ বলেন, আমার বোন ও দুলাভাই গাজীপুরে থাকত। দুলাভাই ওখানে ছোটখাটো একটা ব্যবসা করত। ঈদের আগে ওরা বাড়ি যেতে পারেনি। ঈদ করতে আজকে (বৃহস্পতিবার) দুলাভাইদের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যাওয়ার কথা ছিল।
এর আগে সদরঘাট লঞ্চঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে দুর্ঘটনাটি ঘটে। জানা গেছে, এমভি তাসরিফ-৪ ও এমভি টিপু-১৩ লঞ্চ দুটি পাশাপাশি নোঙর করে রাখা ছিল। আরেক লঞ্চ এমভি ফারহান-৬ সেখানেই নোঙর করার চেষ্টা করলে সজোরে ধাক্কা দেয় টিপু-১৩ লঞ্চে। এর জের ধরেই টিপু-১৩ ধাক্কা দেয় তাসরিফ-৪-কে। এতে তাসরিফের দড়িটি ছিঁড়ে যায়।
ওই দড়িটিই সজোরে আঘাত করে পন্টুনের আশপাশে থাকা পাঁচজনকে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুন-
লঞ্চের দড়ির আঘাতে প্রাণ গেল ৫ জনের