লম্বা ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল
১৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩০
কক্সবাজার: এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নববর্ষ, সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটিও। লম্বা এই ছুটিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নেমেছে। সমুদ্র সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্ট পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। গরম উপেক্ষা করে হই-হুল্লোড় করে সময় কাটাচ্ছেন তারা। নেচে-গেয়ে ও সাগরের নোনাজলে সমুদ্রস্নানে মেতেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। সৈকতের কবিতা চত্বর থেকে কলাতলী পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নিয়েছে।
হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাড়ে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। এতে অন্তত সোয়া লাখের বেশি পর্যটক সমাগম ঘটেছে। এ নিয়ে দারুণ খুশি তারা।
এদিকে, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল টিম টহল জোরদার করা হয়েছে।
এবার পবিত্র ঈদুল ফিতর এবং বাংলা নববর্ষে সরকারি কর্মচারীদের ছুটি শুরু হচ্ছে ১০ এপ্রিল থেকে। অফিস খুলবে ১৫ এপ্রিল। তবে অনেকেই ৮ ও ৯ এপ্রিল দুই দিনের ছুটি নিয়ে ঈদের ছুটি কাটাচ্ছেন টানা ১০ দিন।
জানা গেছে, যেসব সরকারি কর্মচারী দুদিনের বাড়তি ছুটি নিয়েছেন, এবার তাদের ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে ৫ এপ্রিল থেকে। কারণ, সরকারি ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুসারে ৫ ও ৬ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। ৭ এপ্রিল পবিত্র শবে কদরের সরকারি ছুটি। ৮ ও ৯ এপ্রিল সরকারি অফিস আদালত, ব্যাংক-বিমা খোলা থাকবে।
তবে সে ক্ষেত্রে ৮ ও ৯ এপ্রিল দুই দিনের ছুটি নিলেই ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ১০ দিনের ছুটি ভোগের সুযোগ রয়েছে। কারণ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি। আবার ১৩ এপ্রিল শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের ছুটি। তাই মাঝখানের মাত্র দুই দিনের ছুটি নিয়েই একসঙ্গে ১০ দিন ছুটি কাটাচ্ছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
যারা বাড়তি দুদিনের ছুটি নেননি, তাদের ঈদ এবং পহেলা বৈশাখের ছুটি মিলিয়ে পাঁচ দিনের ছুটি কার্যকর হচ্ছে বুধবার (১০ এপ্রিল) থেকে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ঈদের প্রথমদিন পর্যটকের সংখ্যা তুলনামূলক কম হলেও দ্বিতীয় দিন থেকে তা বাড়তে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে এ সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে। ঈদের ছুটিতে কেউ এসেছেন পরিবারের সঙ্গে, কেউবা স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে। পর্যটকরা সৈকতের কিটকটে বসে, ওয়াটার বাইক, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়ে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পর্যটকরা সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক, হিমছড়ি ঝর্ণা, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, রামুর বৌদ্ধ বিহার, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, ইনানী ও পাটুয়ারটেকের পাথুরে সৈকত এবং শহরের বার্মিজ মার্কেটসহ জেলা বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রগুলো ভ্রমণ করছেন।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে আসা রেজাউল চৌধুরী বলেন, ‘কক্সবাজার মানেই বাড়তি আনন্দ। যান্ত্রিক জীবন থেকে ছুটি নিয়ে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে খুবই ভাল লাগছে। আমার ছেলে-মেয়েদের জন্য এই ভ্রমণ খুবই আনন্দের। তবে অন্য সময়ের তুলনায় রুমের ভাড়া একটি বেশি রাখা হচ্ছে। যদিও এই রুম পেতে’ই অনেক কষ্ট হয়েছে।
নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে আরেক পর্যটক রবিউল হাসান বলেন, ‘অনেককে বলতে শুনেছি কক্সবাজারে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিরাপদ নয়। বিষয়টি একেবারেই ঠিক না। আমি এই নিয়ে ১০-১২ বার এই শহরে বেড়াতে এসেছি। আমার কাছে একবারের জন্যও তা মনে হয়নি। বরং দিন দিন বাড়ছে নিরাপত্তা। তবে হঠাৎ এক-দুইটা বা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনাকে কেন্দ্র করে পর্যটন নগরী নিয়ে এমন মন্তব্য কোনভাবেই কাম্য নয়। সব মিলে ভ্রমণটা অসাধারণ লাগছে।
সিলেট থেকে আসা মাইমুনা আক্তার নামের এক পর্যটক বলেন, ‘ভ্রমণের জন্য কক্সবাজার সবসময় টানে। কিন্তু সবসময়তো সুযোগ হয় না। এবারে একদিকে ঈদের ছুটি অন্যদিকে পহেলা বৈশাখের ছুটি। এই লম্বা ছুটিতে স্বামী-সন্তান নিয়ে বেড়াতে এসে খুবই ভাল লাগছে।’
কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায়ীদের নেতা আব্দুর রহমান জানান, রমজানের পুরো এক মাসের খরা কাটিয়ে ঈদ ও পহেলা বৈশাখের টানা ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক সমাগম ঘটায় খুশি হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। যেহেতু টানা ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের একটু বাড়তি চাপ থাকে, সেই ক্ষেত্রে হোটেল কক্ষের বুকিং সহ দুর্ভোগ ও হয়রানি লাগবে আগাম তথ্য জেনে ভ্রমণে আসা উচিৎ।
বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুদ রানা জানান, আগত কোনো পর্যটক যাতে হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার না হন এ জন্য প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনী সবধরণের ব্যবস্থা নিয়েছে। আর টানা ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
সারাবাংলা/এনইউ