দেশজুড়ে তাপপ্রবাহ, ভিড় বাড়ছে এসি-ফ্যানের দোকানে
২০ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:২৪
ঢাকা: টানা দশ দিনের মৃদু ও মাঝারি তাপপ্রবাহ গত দুইদিন ধরে তীব্র আকার ধারণ করেছে। তাপমাত্রার পারদ ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে স্কুল-কলেজ।
একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে কোথাও কোথাও শুরু হয়েছে লোডশেডিং। ফলে বাজারে চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যান, এয়ারকন্ডিশনার, বৈদ্যুতিক পাখার মতো সামগ্রীর। ক্রেতারা জানিয়েছেন, গরমের কারণে এ সব পণ্যের দামও বেশি নিচ্ছে দোকানিরা। যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি, ন্যয্য দামেই বিক্রি করছেন তারা। প্রতিযোগিতার বাজারে দাম বাড়তি রাখার সুযোগ নেই।
শনিবার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর বায়তুল মোকাররম ও স্টেডিয়াম মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটা ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানেই ক্রেতাদের ভিড়। বেশিরভাগ ক্রেতাই সিলিং ফ্যান ও স্ট্যান্ড ফ্যান কিনছিলেন। কেউ কেউ দরদাম করে ফিরে যাচ্ছেন।
স্টেডিয়াম মার্কেটের ওয়ালটনের শোরুমে কথা হয় জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, লক্ষ্মীবাজারের বাসিন্দা তিনি। একদিকে প্রচণ্ডে গরম, অন্যদিকে গত কয়েকদিন ধরে লোডশেডিং হচ্ছে। যে কারণে চার্জার ফ্যান কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ফ্যানের দাম বেশি। অন্য দোকানে গিয়ে দাম দেখতে হবে।’
আরেক ক্রেতা মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রান্ডের চার্জার ফ্যান গত গ্রীষ্মে একটি কিনতে হয়েছিল, তখন কিনেছি ২৭০০ টাকা। এখন এসে দেখি সেটির দাম ৩৬০০ টাকা। সেজন্য এবার নন ব্র্যান্ড দেখছি অন্তত গরম সময় পার করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘ছোট নন ব্র্যান্ডের টাইফুন ফ্যানগুলোর দাম চাইছে ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা। অথচ গত বছর এগুলোর দাম ছিল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আবার ডিফেন্ডার ব্র্যান্ডের ১২ ইঞ্চি ফ্যান কোথাও চাইছে ৩ হ্যাজার ৫০০ টাকা কোথাও ৪ হাজার টাকা। আর একই ব্র্যান্ডের ১৪ ইঞ্চি ফ্যান চাওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা।’
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট স্ট্যান্ড ৯-১০ ইঞ্চি ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের স্ট্যান্ড ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর দেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান ১ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বিদেশি ব্র্যান্ডের সিলিং ফ্যান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকায়।
এদিকে, ফ্যানের পাশাপাশি এয়ার কন্ডিশনারের চাহিদা বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে পণ্যের দামও। ব্রান্ডের এক টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ৭৪ হাজার টাকা থেকে ৮৫ হাজার টাকা আর দেড় টনের এসি বিক্রি হচ্ছে ব্রান্ড ভেদে ১ লাখ ২১ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা।
সিঙ্গারের শোরুমে গিয়ে দেখা গেল ক্রেতাদের ভিড়। অনেকেই এসি কিনতে আসছেন। বিক্রেতারা বলছেন, গত মার্চ থেকে ফ্যান ও এসির চাহিদা বেড়েছে। চাহিদার তুলনায় জোগানেও টান পড়েছে। ব্র্যান্ডের শো-রুমগুলোতে ফিক্সড দাম হওয়ায় দরাদরি হচ্ছে না।
গোপীবাগ এলাকায় সিঙ্গার শোরুমের ম্যানেজার শেখ নাজমুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইনভার্টার ও নন-ইনভার্টার দুই এসিরই চাহিদা বেড়েছে। চলতি এপ্রিল মাসে কম হলেও এই শোরুম থেকে ৫০ টি এসি ডেলিভারি দিয়েছি। অর্ডার নেওয়া আছে আরও ১০/১২ জনের। শোরুমে এখন প্রোডাক্ট নেই। এগুলো পৌঁছালে ডেলিভারি শুরু হবে।’
ক্রেতাদের অভিযোগ পণ্যের দাম আগের চেয়ে বেশ বেড়েছে। এ প্রসঙ্গে ব্রান্ডের শোরুমগুলোর কর্মীদের বক্তব্য, কেউ কেউ আগের বছরের অবিক্রিত পণ্য বিক্রি করছেন তারা কিছুটা কমে দিতে পেরেছেন। ফ্যানের দাম কিছুটা বেড়েছে, গরম বাড়লে দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তারা। তবে ব্রান্ডের এসি কিনলে কোনো কোনো শোরুমে সরাসরি ডিসকাউন্ট এবং ইনস্টলমেন্টেরও ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে, লোকাল দোকানগুলোতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের দরদাম করে বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। স্টেডিয়াম মার্কেটের বিজয় ইলেক্ট্রনিক্সের মালিক শাহীনুর ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশীয় ব্র্যান্ডের শোরুমগুলো লোকাল দোকানগুলোতে চাহিদা মতো প্রোডাক্ট দিচ্ছে না। এ জন্য তাদের নন ব্র্যান্ড ও বিদেশি ফ্যান বিক্রি করতে হচ্ছে।’
মূলত মধ্য রমজান থেকেই তাপমাত্রা বাড়তে থাকতে দেখা যায়। ঈদের সময়েও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত কয়েকদিন ধরে দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৯ থেকে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে দেখা গেছে।
শনিবার (২০ এপ্রিল) দেশের চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় গরমে অতিষ্ঠ খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র গরমে শুধু বাইরেই নয়, ঘরে থাকাও কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে কষ্ট হচ্ছে শিশুদের। অসহনীয় গরম থেকে স্বস্তি পেতে সাধ্য অনুযায়ী কেউ এসি, কেউ ফ্যান কিনতে ভিড় করছেন দোকানে।
সারাবাংলা/জেআর/একে