বৃষ্টি চেয়ে প্রার্থনা
২৫ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪০
ঢাকা: দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশে বইছে তীব্র তাবদাহ ও খরা। তীব্র তাবদাহের প্রভাব পড়েছে জনজীবন ও ফসলে। চলমান আবহাওয়া থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে গরমের তাপমাত্রা কমে শীতল আবহাওয়া ও বৃষ্টির আশায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিশেষ নামাজ (সালাতুল ইসতিসকা) আদায় করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত—
নওগাঁ: নওগাঁয় গত কয়েকদিন থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছেন। ফসলি জমিতে শ্রমিকরা কাজ করতে গিয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা। রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কমে গেছে। রোদ থেকে বাঁচতে মোট কাপড় পরিধান করছে। কেউ কেউ রোদে চশমা ও ছাতা ব্যবহার করছে। স্বস্তি পেতে বারবার পানি করতে হচ্ছে। গাছের নিচে আশ্রয় নিচ্ছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস থেকে সুখকর কোনো বার্তা পাওয়া যাচ্ছে না।
চলমান আবহাওয়া থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে গরমের তাপমাত্রা কমে শীতল আবহাওয়া ও বৃষ্টির আশায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিশেষ নামাজ (সালাতুল ইসতিসকা) আদায় করা হয়েছে।
এ দিন সকালে নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর দাখিল মাদরাসা মাঠে নামাজের ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা নজিবর রহমান এবং দুবলহাটি ইউনিয়নের মাতাসাগর ঈদগাহ মাঠে নামাজের ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা হুসাইন আহমেদ।
পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পাবলিক মাঠে প্রায় শতাধিক মুসল্লি নিয়ে নামাজ আদায় করা হয়। মোনাজাতের আগে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে শীতল আবহাওয়া ও বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করেন উপজেলার সর্বস্তরের জনগণ। নামাজের ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা মো. আব্দুল মুকিম।
সাপাহার উপজেলার সরফতুল্লাহ মাদরাসা মাঠে নামাজের ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন ওই মাদরাসার আরবি প্রভাষক মাওলানা মো. ওমর ফারুক। পোরশা উপজেলার নিতপুর শ্রীকৃষ্ণপুর ঈদগাহ মাঠে নামাজের ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন হাপানিয়া ফাজিল মাদরাসা শিক্ষক মাওলানা হযরত আলী।
ধামইরহাট উপজেলার ডিগ্রী কলেজ মাঠে ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা আস-আদুল্লাহ। রাণীনগর উপজেলার শেরে বাংলা সরকারি কলেজ মাঠে ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা মোস্তফা আলামিন।
লালমনিরহাট: প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে বাচঁতে এবং বৃষ্টির প্রত্যাশা করে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে বৃষ্টির জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দুই রাকাত সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছে বিভিন্ন বয়সের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ১০ টায় উপজেলার কাকিনা মহিমারঞ্জন স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে খোলা আকাশের নিচে এ ইসতিসকার নামাজের আয়োজন করা হয়।
নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লি আব্দুস সামাদ বলেন, ‘বৃষ্টি না হওয়ায় মরতে শুরু করেছে কৃষকের বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, আল্লাহ যেন বৃষ্টি দেন তাই নামাজ পড়েছি।’
তুষভাণ্ডার বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মো. নুর ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে কষ্টে আছে গাছপালাসহ প্রাণিকুল। সে কারণে মহান আল্লাহর রহমতের বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়েছি।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষায় বৃষ্টি চেয়ে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকালে স্থানীয় আলেম পরিষদের আয়োজনে উপজেলার রহনপুর ইউসুফ আলী সরকারি কলেজ মাঠে এ নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। নামাজের ইমামতি করেন মাওলানা রুহুল আমিন। পরে তিনি আরবিতে খুতবা দেন।
এ সময় বিশেষ এই নামাজ আদায় করতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী আশরাফ হোসেন, জামায়াতে আমির মিজানুর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা অংশ নেন। এ সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তীব্র গরমের কথা উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি, দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রার্থনা করা হয়।
টাঙ্গাইল: বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় ঈদগা মাঠে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে ইমামতি করেন শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের খতিব ও ইমাম মুয়াজ্জিন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন ঈমান। নামাজে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর, সাবেক পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খোরশেদ আলমসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লিরা অংশ নেয়।
নামাজে অংশ নেওয়া কয়েকজন মুসল্লি জানান, টানা কয়েকদিনের প্রচণ্ড তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রখর রোদের কারণে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে বাইরে বের হতে পারছে না অনেক মানুষ। এ কারণে বৃষ্টি চেয়ে আল্লাহর দরবারে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। মূলত এটি সুন্নতি আমল। এ নামাজ ঈদের নামাজের মতো। নামাজ শেষে খুতবা পাঠ করা হয়। তারপর দোয়ায় অনাবৃষ্টি ও অসহ্য গরম থেকে মুক্তি এবং মাহান আল্লাহর রহমত কামনা করা হয়।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি ও বৃষ্টির কামনায় সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছে জেলার ধর্মপ্রাণ মানুষ। নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতে বৃষ্টি চেয়ে দোয়া করেছেন তারা। এ সময় দুটি উপজেলায় নামাজে অংশ নেন পাঁচ শতাধিক মুসল্লি।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে জেলার কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা ও চাটখিল কামিল মাদরাসা মাঠে এবং বেগমগঞ্জের চৌমুহনী সেনের পোল পৌরসভা গেইট ঈদগাহে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
এতে ইমামতি ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বসুরহাট ইসলামিয়া কামিল মাদরাসার আরবি বিভাগের অধ্যাপক মাওলানা মাকসুদুর রহমান ও চাটখিল আলিম মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর জব্বার।
নামাজে অংশ নেওয়া স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে অনাবৃষ্টির কারণে মানুষ, পশুপাখিসহ সবাই খুব কষ্টে আছে। এ জন্য তারা বৃষ্টির আশায় নামাজ পড়েছেন।
বসুরহাট পৌরসভা ওলামা মাশায়েখ এর উদ্যোগে আয়োজিত ইসতিসকার নামাজে অংশ নেন, বসুরহাট পৌরসভা জামায়াতের আমির মাওলানা মোশারেফ হোসেন, সেক্রেটারী মাওলানা হেলাল উদ্দিন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ওলামা সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দিন, চরপার্বতী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো.কাজী হানিফ আনসারী, উপজেলা মডেল মসজিদের ইমাম মাওলানা এমদাদ উল্লাহ।
বেগমগঞ্জের ইসতিসকার নামাজে উপস্থিত ছিলেন ঈদগাহের খতিব সায়েদ আলমগীর হোসেন, ঈদগাহ মাঠের সাধারণ সম্পাদক নাছিমুল গনি চৌধুরী মহল, ওলামা পরিষদের সাবেক জেলা আমির মাওলানা আলাউদ্দিন, বেগমগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা বোরান উদ্দিন, ওলামা পরিষদের বেগমগঞ্জ আমীর আবু জাহেদ।
অপরদিকে, চাটখিলের নামাজে অংশ নেন মাওলানা ছাইফ উল্লাহ, মাওলানা মনিরুজ্জামান, মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা রাকিব উদ্দিন, মাওলানা মাসুম বিল্লাহ, মাওলানা আবুল কালাম আহমাদি, মাওলানা আবু সাদেকসহ অন্যরা।
মানিকগঞ্জ : প্রচণ্ড গরমের তীব্রতায় বিপর্যস্ত মানিকগঞ্জবাসী। একটু স্বস্তির বৃষ্টির জন্য হাহাকার চারিদিকে। সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির জন্য চলছে নামাজ ও দুহাত তুলে দোয়া আর কান্না। বিভিন্ন জায়গায় চলছে নামাজ ও দোয়ার আয়োজন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ পৌরসভার শহীদ তিতুমীর একাডেমিক প্রাঙ্গনে শতশত মুসল্লিরা বৃষ্টির জন্য খোলা আকাশের নিচে ইসতিসকার নামাজ আদায় করেছেন।
নামাজ শেষে অসহনীয় গরমের হাত থেকে মানুষ ও প্রাণীকুলের মধ্যে স্বস্তি ফেরাতে একটু বৃষ্টির আশায় সৃষ্টিকর্তার দরবারে দুই হাত তুলে দোয়া করেন শতশত মানুষ। ছোট বড় সব বয়সের মানুষ ইসতিসকার নামাজ ও দোয়ায় অংশ নেন।
ইসতিসকার নামাজে ইমামতি ও দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন তিতুমীর দারুল আমান জামে মসজিদের খতিব মো. জাকিরুল ইসলাম খান।
সারাবাংলা/একে