তীব্র তাপপ্রবাহে নষ্ট হচ্ছে ফসল, তথ্য নেই কৃষি বিভাগে!
২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৪৫
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় ক্রমাগত তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহের ফলে ফসলি জমির ফসল পুড়ে যাচ্ছে। জমিতে সেচ দিয়েও কৃষকরা তাদের ফসল রক্ষা করতে পারছেন না। তাপপ্রবাহে জমির ফসল পুড়লেও সে সব তথ্য নেই কৃষি বিভাগের কাছে। বারবার জানতে চাওয়ার পরও জেলার ৪টি উপজেলায় পুড়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতির পরিমান জানাতে ব্যর্থ চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়ার কথা বললেও কৃষকরা তাদের নিজের মতো করে ফসলি জমির পরিচর্যা করছেন।
তাপপ্রবাহের ফলে চুয়াডাঙ্গায় শুকিয়ে যাচ্ছে ধান ও সবজি গাছ। এ কারণে মৌসুমে ফলন বিপর্যয় দেখা দেওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অতিরিক্ত তাপের কারণে ধান চিটা হয়ে যাচ্ছে, লাগছে মাজরা পোকা। হেক্টরের পর হেক্টর জমির সবজি শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
করল্লা, শসা, লালশাক, পুঁইশাক, ঢেঁড়স, বেগুন, পটল, লাউ, ঝিঙ্গে, তরমুজ, কচুসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা টানা প্রায় এক মাস ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। যার কারণে বিপর্যয় ক্রমশই বাড়ছে।’
চুয়াডাঙ্গার হানুরবাড়াদীর ধানচাষি আবুল চাঁদ বলেন, ‘আমার ৬ বিঘা জমিতে দেড়শ মন ধান হতে পারে। ধান চাষে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গরমে ধানে মাজরা পোকা দেখা দিয়েছে। ধান গাছের গোড়ায় পানি বেঁধে রেখেছি। তবে এতে সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি।’
একই এলাকার চাষি দোয়াল্লিন বলেন, ‘ফলন্ত কলা গাছের কাঁদি পড়ে যাচ্ছে, তরমুজের গুটি ঝরে যাচ্ছে, বেগুন গাছে বেগুন ধরছে না, কচু গাছ রোদে পুড়ে যাচ্ছে, শসা ক্ষেত তাপপ্রবাহে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে, দেরীতে লাগানো ভূট্টা ক্ষেতেরও একই দশা। কোনভাবেই ফসল ধ্বংস ঠেকানো যাচ্ছে না। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ক্রমাগত সেচ দিয়ে কিছু ফসল ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আর কত টাকা ব্যয় করে সেচ দেওয়া যায়?’
ভান্ডারদহের ধানচাষি আনসার আলী বলেন, “বিএডিসি’র দেওয়া পানি ঠিকমত পাচ্ছি। ধানে পানি নিতে এ মৌসুমে ৩ হাজার টাকা দিতে হবে। আমার জমির আশপাশে সব জমিতে ঠিকমত পানি দেওয়া হচ্ছে। এতে সমস্যা নেই।”
তবে একই গ্রামের আরেক ধানচাষি খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার নির্ধারিতে রেটের চেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করে বিএডিসির সেচ পাম্প থেকে আমাদের সেচ সুবিধা নিতে হচ্ছে। নগদ টাকা দিলে ঘণ্টায় ৩০০ টাকা দিতে হয়। টাকা বেশি লাগলেও ঠিকমত সেচ সেবা পাচ্ছি।’
চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘চলমান তাপদাহের কারণে রবি মৌসুমে মাঠপর্যায়ে যে বোরো ধান রয়েছে, সবজি, ফল, ফসল রক্ষায় আমরা মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালাচ্ছি। বোরো ধান দানা পর্যায়ে চলে গেছে, কাজেই ওই ধানী জমিতে ৫ থেকে ৭ সেন্টিমিটার পানি ধরে রাখা। আমবাগানে পানি দেওয়া ও গাছে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। অতি তাপবাহের কি কি ফসলের ক্ষতি হচ্ছে তা আমরা এখনো নির্দিষ্ট করতে পারিনি, তবে সেটা নিরূপণের চেষ্টা চলছে। উপজেলা পর্যায়ে কাজ চলছে।’
এ মৌসুমে কৃষকরা জেলায় ৩৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করছে জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আরও বলেন, ‘সবজির আবাদ হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৯৬ মেট্রিক টন। ধান ও সবজি উৎপাদন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে। ৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা হলে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয় না। ফুল পর্যায়ের ২ হাজার ৫০০ হেক্টর ধানের জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। জমিতে পানি ধরে রাখার কথা বলা হচ্ছে।’
বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ‘ফসলের জমিতে আর্দ্রতা ধরে রাখতে সেচের কোনো বিকল্প নেই। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে ধান চিটা হয়ে যায়, যেটা ঠেকানো দুস্কর।’
সারাবাংলা/এমও
অতি তীব্র তাপপ্রবাহ কৃষি বিভাগ চুয়াডাঙ্গা তাপপ্রবাহ ফসল ফসলের ক্ষতি