আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি বাড়ছে আরও ৩ বছর
৩০ মে ২০২৪ ২০:১৮
ঢাকা: দেশের তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়তে পারে। বর্তমানে এই খাতের ২৭টি উপখাতে কর অব্যাহতির সুবিধা থাকলেও সেই সুবিধা কিছুটা কমে ২০টি খাতে নেমে আসতে পারে। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট, এআই) ও ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিকে উৎসাহিত করতে আসছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এসব খাতে কর অব্যাহতির সুবিধা যুক্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে আইসিটি খাতে নতুন করে তিনটি উপখাত কর অব্যাহতির সুবিধায় যুক্ত হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চলতি বছরের ৩০ জুন আইসিটি খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। ফলে বাজেট সামনে রেখে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা কর অব্যাহতির মেয়াদ আরও বাড়ানোর পক্ষে নানা সভা-সমাবেশ ও সেমিনার করে আসছিলেন। সরকারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন সমানতালে। এনবিআর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক, বিভিন্ন দফতরে চিঠি চালাচালি, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ— প্রায় সবকিছুরই চেষ্টা চালিয়েছেন তারা।
আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি বাড়ানোর পক্ষে একাধিকবার বক্তব্য দিয়েছেন খোদ ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানেরও। বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আইসিটি খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি রয়েছে বলেও এক অনুষ্ঠানে জানান তিনি। বাজেটের আগে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেও সেই আভাস পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন-
- আমরা আশাবাদী— কর অব্যাহতি বহাল থাকবে
- তথ্যপ্রযুক্তিতে কর আরোপ না করার আহ্বান তরুণ উদ্যোক্তাদের
- আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি বহাল থাকার আশাবাদ সালমান এফ রহমানের
- আইসিটি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে কর অব্যাহতির ঘোষণা এখনই দেওয়া উচিত
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আইসিটি খাতের ২৭টি উপখাত কর অব্যাহতির সুবিধা পেয়ে আসছে। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ২৭টি খাতের মধ্যে অন্তত সাতটি খাতে কর অব্যাহতির সুযোগ আর থাকছে না। এ ছাড়া নতুন আর তিনটি খাত কর অব্যাহতির সুবিধায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। সবমিলিয়ে আইসিটি খাতের ২০ থেকে ২৩টি উপখাতে কর অব্যাহতি অব্যাহত থাকতে পারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আইসিটি খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ছে। আগের ২৭টি খাত থেকে সাতটি খাত বাদ যাবে, নতুন করে তিনটি খাত যুক্ত হতে পারে।’
কোন খাত বাদ যাবে, আর নতুন করে কোন খাত যুক্ত হবে তা জানাননি এনবিআরের এই কর্মকর্তা। তবে আইসিটি খাতের উদ্যোক্তা ও এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ও এআই প্রযুক্তি কর অব্যাহতির সুবিধায় যুক্ত হচ্ছে।
বাজেট পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত এনবিআরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১১ সাল থেকে আইটি সেবার ওপর কর অব্যাহতি দিয়ে আসছে এনবিআর। তিন থেকে পাঁচ বছর করে এই কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। ৩০ জুন এই অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নতুন করে কর অব্যাহতির মেয়াদ না বাড়ানোর পক্ষে চাপও ছিল। তবে আইসিটি খাতের উদ্যোক্তাদের দাবি মেনে আরও তিন বছর বাড়ানো হচ্ছে কর অব্যাহতি।
এর আগে সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতের কর অব্যাহতির মেয়াদ শেষ হয়েছিল। ওই বছর নতুন করে চার বছরের জন্য তা বাড়ানো হয়, যার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ জুন।
বর্তমানে কর অব্যাহতি সুবিধা পাওয়ার আওতায় রয়েছে— সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), ডিজিটাল অ্যানিমেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবসাইট সার্ভিস, ওয়েব লিস্টিং, আইটি প্রসেস আউটসোর্সিং, ওয়েবসাইট হোস্টিং, ডিজিটাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল ডেটা এন্ট্রি অ্যান্ড প্রসেসিং, ডিজিটাল ডেটা অ্যানালিটিক্স, গ্রাফিক্স ইনফরমেশন সার্ভিস (জিআইএস), আইটি সাপোর্ট অ্যান্ড সফটওয়্যার মেইনটেন্যান্স সার্ভিস, সফটওয়্যার টেস্ট ল্যাব সার্ভিস, কল সেন্টার সার্ভিস।
এই তালিকায় আরও রয়েছে— ওভারসিজ মেডিকেল ট্রান্সক্রিপশন, সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশান সার্ভিস, ডক্যুমেন্ট কনভারশন, ইমেজিং অ্যান্ড ডিজিটাল আর্কাইভিং, রোবোটিক প্রসেস আউটসোর্সিং, সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস, ক্লাউড সার্ভিস, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম, ই-বুক পাবলিকেশন, মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস ও আইটি ফ্রিল্যান্সিং।
নতুন বাজেটে এই ২৭টি খাতের মধ্য থেকে সাতটি খাতে কর অব্যাহতির সুবিধা উঠে যাওয়ার কথা রয়েছে। অন্যদিকে এআই ও ফ্রন্টিয়ার টেনকোলজিসহ তিনটি খাত নতুন করে কর অব্যাহতির সুবিধায় যুক্ত হতে পারে।
কর অব্যাহতি বহালের আশাবাদ সালমান এফ রহমানের
আইসিটি খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতি রয়েছি বলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নতুন কার্যনির্বাহী কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিসিপিয়াব) আয়োজিত এক নীতি সংলাপের অংশ নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও জানান।
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছি, হঠাৎ যদি এটা (কর অব্যাহতি) তুলে দেন, তাদের ব্যবসায় সমস্যা হবে। আপনি আমাদের বলে দেন যে আগামী তিন বছর বা পাঁচ বছর (কর অব্যাহতি সুবিধা) থাকবে। একপর্যায়ে স্বাভাবিক করহার প্রযোজ্য হবে। প্রধানমন্ত্রী তখন আমার সঙ্গে মোটামুটি একমত হয়েছেন। এখন দেখি, বাজেটে কী হবে সেটা নিয়ে আমি আবার উনার সঙ্গে কথা বলব।’
আগামী বাজেটে কর অব্যাহতি বহাল রাখার আশাবাদ জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘যেহেতু উনি (প্রধানমন্ত্রী) এ কথাটা বলেছেন যে ধীরে ধীরে আইসিটি খাতের কর স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে, তাই আমি আশা করি যে আগামী বাজেটে (২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট) আইসিটি খাতে কর ধার্য করা হবে না। আমি আশা করি, এই বাজেটে একটা পরিকল্পনা দেওয়া হবে যে আইসিটি খাতে দুই বছর বা চার বছর পর কী হবে। আশা করছি আমরা সেই কথাটা বা পরিকল্পনাটা জানতে পারব।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি রাসেল টি আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, আইসিটি খাতে কর অব্যাহতির মেয়াদ বাড়ানো পক্ষে আমরা দাবি করে আসছি। আশা করছি ভালো কিছু হবে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর