বিজ্ঞাপন

আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি বহাল থাকার আশাবাদ সালমান এফ রহমানের

May 20, 2024 | 11:05 pm

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আইসিটি খাতে সরকার ঘোষিত কর অব্যাহতি সুবিধা শেষ হচ্ছে চলতি অর্থবছরেই। তবে এই খাতের সব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোর দাবি, এখনই এই কর অব্যাহতি সুবিধা যেন তুলে না নেওয়া হয়। বেসিসের নবনির্বাচিত কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠানেও সে দাবির কথা উঠে আসে। পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান তার বক্তব্যে জানালেন, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সেই সুবিধা প্রত্যাহার করা নাও হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

সালমান এফ রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আইসিটি খাতের এই কর অব্যাহতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীও এই সুবিধা আপাতত বহাল রাখার বিষয়ে একমত হয়েছেন। আগামী বাজেট উত্থাপনের আগেই ফের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। এর সূত্র ধরেই তিনি আশা করছেন, আইসিটি খাতে কর অব্যাহতি আগামী বাজেটেও বহালই থাকবে।

সোমবার (২০ মে) রাতে রাজধানীর র‌্যাডিসন ব্লু হোটেলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদের শপথ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন- সফটওয়্যারে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের শপথ বেসিসের নতুন কমিটির

বিজ্ঞাপন

সালমান এফ রহমান বলেন, আইসিটি খাতের কর অব্যাহতির বিষয়টি নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছিলাম। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। তিনি বললেন, আমরা তো চিরকালের জন্যে কর অব্যাহতি দিতে পারি না। আমি বললাম, সেমিনারে তারা যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তাতে তারা চিরকালের জন্য (কর অব্যাহতি) চাচ্ছে না। তারা বলেছে, তাদের একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছি, হঠাৎ যদি এটা (কর অব্যাহতি) তুলে দেন, তাদের ব্যবসায় সমস্যা হবে। আপনি আমাদের বলে দেন যে আগামী তিন বছর বা পাঁচ বছর (কর অব্যাহতি সুবিধা) থাকবে। একপর্যায়ে স্বাভাবিক করহার প্রযোজ্য হবে। প্রধানমন্ত্রী তখন আমার সঙ্গে মোটামুটি একমত হয়েছেন। এখন দেখি, বাজেটে কী হবে সেটা নিয়ে আমি আবার উনার সঙ্গে কথা বলব।

আগামী বাজেটে কর অব্যাহতি বহাল রাখার আশাবাদ জানিয়ে সালমান এফ রহমান আরও বলেন, যেহেতু উনি (প্রধানমন্ত্রী) এ কথাটা বলেছেন যে ধীরে ধীরে আইসিটি খাতের কর স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে, তাই আমি আশা করি যে আগামী বাজেটে (২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট) আইসিটি খাতে কর ধার্য করা হবে না। আমি আশা করি, এই বাজেটে একটা পরিকল্পনা দেওয়া হবে যে আইসিটি খাতে দুই বছর বা চার বছর পর কী হবে। আশা করছি আমরা সেই কথাটা বা পরিকল্পনাটা জানতে পারব।

বিজ্ঞাপন

আইসিটি খাত অনেকটা এগোলেও এই খাতের নেতৃত্ব হিসেবে বেসিসকে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরবর্তী পর্যায়ের প্রযুক্তি নিয়ে পরিকল্পনা করার আহ্বান জানান সালমান এফ রহমান। এ ক্ষেত্রে তৈরি পোশাক শিল্প খাতকে তিনি উদাহরণ হিসেবে টানেন।

সালমান এফ রহমান বলেন, গার্মেন্টস খাতে আমরা অসম্ভব ভালো করেছি। বিজিএমইএ, বিকেএমইএসহ অন্যান্য সংগঠন যেগুলো রয়েছে, তারা অবিশ্বাস্য সাফল্য নিয়ে এসেছে দেশের জন্য। কিন্তু এই খাতের জন্য পরবর্তী পর্যায় কী হবে, সেটা নিয়ে তারা ভাবেনি। আমাদের গার্মেন্টস রফতানির ৯০ শতাংশই কটন, যা বৈশ্বিক পোশাকের বাজারের মাত্র ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ বাজার ‘ম্যান মেড ফাইবারে’র। আমরা নিজেদের খাতটিতে খুব ভালো করেছি। কিন্তু ওই খাতেরই বৈশ্বিক বাজারের সবচেয়ে বড় অংশটি নিয়ে চিন্তাই করিনি।

অনুষ্ঠানে শপথ নেন বেসিসের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা। ছবি: সারাবাংলা

আইসিটি খাতের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতার কথা তুলে ধরেন সালমান এফ রহমান। বলেন, আপনারাও (আইসিটি খাত) যা করছেন, অসাধারণ করছেন। কিন্তু আইসিটি খাতের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। এখন সময়টা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই)। এখন সময় বিগ ডাটার। এসব বিষয়ে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য কী করতে হবে, সেই পরবর্তী পর্যায়টা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। সেটা আপনাদেরই করতে হবে। আর আপনারা সরকারকে গাইড করবেন যে সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের কী নীতিসহায়তা বা অন্য কোন ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। সরকার সেভাবে কাজ করতে চেষ্টা করবে।

বেসিসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, আপনাদের অন্য পর্যায়ে (ডিফরেন্ট লেভেল) চিন্তা করতে হবে। ট্যাক্সের জন্য (কর অব্যাহতি) আপনারা লড়াই করবেন, ঠিক আছে। কিন্তু এই খাতের সার্বিক যে চিত্র, সেখানে এটা সামান্য একটি বিষয়। এর চেয়ে বড় বড় সমস্যা এই খাতে আছে। সেই সঙ্গে সুযোগও রয়েছে। সমস্যাগুলো দূর করে সুযোগগুলো কাজে লাগানোর জন্য কী কী করা প্রয়োজন, সেই গাইডেন্সটা আপনাদের দিতে হবে। এই খাতের সর্বোচ্চ সুবিধা নিতে কী কী নীতিসহায়তা প্রয়োজন, সেটা আমাদের বলবেন আপনারা, সরকার সেভাবে আপনাদের সহায়তা দেবে।

বিজ্ঞাপন

সালমান এফ রহমান আরও বলেন, এখন চ্যাটজিপিটি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, চ্যাটজিপিটির আইকিউ লেভেল ১৫০, যেখানে সবচেয়ে প্রতিভাবান হিসেবে স্বীকৃত আইনস্টাইনের আইকিউ লেভেল ১৫৫। বলা হচ্ছিল, চ্যাটজিপিটি তাদের নতুন ভার্সন ৪.০ নিয়ে আসার কথা বলেছিল এই ডিসেম্বরে, যেটা তারা মে মাসে বাজারে নিয়ে এসেছে। এত দ্রুততার সঙ্গে এখন কাজ চলছে। এটা তো প্রাইভেট একটি কোম্পানির কথা বললাম। বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো এআই নিয়ে যে কতদূর বা কতটা গবেষণা করছে, কতদূর তারা এগিয়েছে, সে বিষয়ে কোনো ধারণাই আমাদের নেই। বৈশ্বিক তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নতুন এই পরিবেশে বেসিসকেও তাদের কাজ ও চিন্তাভাবনা নিয়ে রিফোকাস করতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম (টিটু)। সম্মানিত অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. মাহবুবুল আলম।

অনুষ্ঠানে শপথ নেন বেসিস সভাপতি রাসেল টি আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম রাশিদুল হাসান, সহসভাপতি (প্রশাসন) সৈয়দ মোহাম্মাদ কামাল, সহসভাপতি (অর্থ) ইকবাল আহমেদ ফখরুল হাসান এবং পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল, দিদারুল আলম, এম আসিফ রহমান, ড. মুহম্মদ রিসালাত সিদ্দীক, মীর শাহরুখ ইসলাম, বিপ্লব ঘোষ রাহুল ও সৈয়দ আব্দুল্লাহ জায়েদ। তাদের শপথবাক্য পাঠ করান বেসিসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ তৌহিদ।

অনুষ্ঠানে বেসিসের সাবেক সভাপতি সরওয়ার আলম, রফিকুল ইসলাম রাউলি, এ কে এম ফাহিম মাশরুরসহ বিদায়ী কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য, বেসিসের সাবেক কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, বেসিসের সদস্য কোম্পানির প্রতিনিধি, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন