দশ মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪ হাজার ৭২৫ জন: বিআরটিএ
৪ জুন ২০২৪ ১৩:৩৯
ঢাকা: ২০২৩ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত গত দশ মাসে সারাদেশে ৫ হাজার ২৪৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৪ হাজার ৭২৫ জন নিহত হয়েছে। আর আহতের সংখ্যা ৬ হাজার ৭০২ জন। দুর্ঘটনার বেশিরভাগই মোটরসাইকেল বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এসব তথ্য জানিয়েছে।
সংস্থাটি বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মোটরযান চালকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া চালক, যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে নানা কার্যক্রম চালু রয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ মে) রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে ‘রিপোটার্স ফর রেল অ্যান্ড রোড’- এর সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুলাই মাসে সারাদেশে ৫৬৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫৩৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৯৩৪ জন। আগস্ট মাসে ৪৫৮টি দুর্ঘটনায় ৩৭৬ জন নিহত এবং আহত হন ৬৫৯ জন। সেপ্টেম্বর মাসে ৪৫৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১০ জন নিহত হন আর আহত হন ৬০৯ জন। অক্টোবর মাসে ৪৩৭টি দুর্ঘটনায় নিহত হোন ৩৯৪ জন আর আহত হন ৪৯২ জন। নভেম্বর মাসে ৫৫৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৪৭০ জন আর আহত হন ৫৮১ জন। ডিসেম্বর মাসে ৪৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩৩ জন এবং আহত হন ৬৪১ জন।
আর চলতি বছর জানুয়ারি মাসে দুর্ঘটনা ঘটে ৪৩৭টি এতে নিহত হন ৪০৪ জন আর আহত হন ৫১৪ জন। ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৬৯টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ৫২৩ জন এবং আহত হন ৭২২ জন। মার্চ মাসে ৬২৪টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত হন এবং আহত হন ৬৮৪ জন। আর এপ্রিল মাসে ৬৫৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হন ৬৩২ জন, আহত হন ৮৬৬ জন।
সব মিলিয়ে গত দশ মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৫ হাজার ২৪৫টি। এতে নিহত হন ৪ হাজার ৭২৫ জন আর আহত হন ৬ হাজার ৭০২ জন।
তথ্যে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের চার মাসে ৩ হাজার ৫৬৩টি গাড়ি দুর্ঘটনা কবলিত হয়েছে। বিআরটিএ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে দক্ষ ও মানবিক গুণসম্পন্ন মোটরযান চালক তৈরিতে বিআরটিএ ২০০৮ সাল থেকে পেশাজীবী মোটরযান চালকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। ২০২২- ২০২৩ অর্থবছরে সারাদেশে মোট ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৩০ জন পেশাজীবী মোটরযান চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটির চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে বিআরটিএ কর্তৃক নিয়মিতভাবে পেশাজীবী মোটরযান চালকদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মোটরযান চালক, যাত্রী, পথচারী ও সড়ক ব্যবহারকারীদের সচেতন করতে ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় এবং জেলা শহরে নিয়মিত লিফলেট, পোস্টার ও স্টিকার বিতরণ এবং রোড-শো আয়োজন করা হয়ে থাকে।’
তাছাড়া বিআরটিএ কর্তৃক সারাদেশে স্কুল-কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন করার লক্ষো সভা-সমাবেশ আয়োজন এবং বিভিন্ন মিডিয়াতে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয় বলেও জানান তিনি।
নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, “সড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা কমানোর জন্য সরকার ‘No Helmet, No Fuel’ নীতি গ্রহণ করেছে এবং এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। জনসচেতনতা সৃষ্টি ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে গত ২০১৭ সালের ৫ জুন সরকার ২২ অক্টোবরকে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ‘খ’ শ্রেণির দিবস হিসেবে সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রতিবছর দেশব্যাপী দিবসটি উদযাপন করা হয়।”
তিনি আরো বলেন, ‘একটা সময় ছিলো যখন সড়ক দুর্ঘটনার তথ্যেও গরমিল ছিলো। এখন আমরা এ সমস্যা সমাধানে ২০২৩ থেকে বিআরটিএ এর সার্কেল অফিসের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করি। বিআরটিএ সদর কার্যালয়ে একত্রিকরণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এবং বিআরটিএ ও প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে। এরপরও রিয়েল টাইম বেজড সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য মাঠ পর্যায় থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যে বিভাবটিও ইনফরমেশন সিস্টেম (বিআরটি-এ-আইএস) এ একটি মডিউল পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে যা আগামী জুলাই মাস থেকে সারা বাংলাদেশে কার্যকর করা হবে। এতে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও প্রতিষ্ঠিত হবে।’
সারাবাংলা/জেআর/এমও