আজ বাজারে আসছে হাঁড়িভাঙা আম, বিক্রির লক্ষ্য ৩০০ কোটি টাকা
২০ জুন ২০২৪ ০৮:২৫
রংপুর: স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয় হাড়িভাঙা আম গত এক দশক ধরেই রংপুরকে ব্র্যান্ডিং করে যাচ্ছে। এ বছর এই পণ্যটি ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য তথা জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছে। সেই স্বীকৃতির পর প্রথম মৌসুমে হাড়িভাঙা আম বাজারে আসছে আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুন)।
আম চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ বছর বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আমের আকার ছোট হয়েছে। ফলে আমের দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। অন্যদিকে আশানুরূপ ফলনও হয়নি। সব মিলিয়ে এ বছর কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ব্যবসা করতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা তারা। তারপরও অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ওপরে হাঁড়িভাঙা আম বিক্রির আশা তাদের।
এদিকে জাতীয়ভাবে পরিচিতি পাওয়ার পর এখন দেশের বাইরে হাঁড়িভাঙা আম রফতানির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এই আম ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এই আমটি মূলত উত্তরের জেলা রংপুরে আবাদ হয়। রংপুরের মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ এলাকায় এ আমের বাগান বেশি। বিশেষ করে এই পদাগঞ্জ এলাকার একসময়ের অনাবাদি জমিতে এখন গড়ে উঠেছে আমের বাগান।
আরও পড়ুন- জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম
স্থানীয়রা বলছেন, পদাগঞ্জ থেকে শুরু করে রংপুরের বিভিন্ন স্থানে হাঁড়িভাঙা আমের ফলন হচ্ছে প্রায় ৩০ বছর ধরে। কিন্তু এই আমের তেমন একটা পরিচিতি ছিল না। ২০১৫ সালে ঢাকায় ফল মেলা হলে সেখানে এই আম পরিচিতি পায়। এর অনন্য স্বাদ ও গন্ধ মানুষকে আকৃষ্ট করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে রংপুরের আম হিসেবে একনামে সারা দেশে পরিচিত হয় হাঁড়িভাঙা আম। সারা দেশেই তৈরি হয় এর কদর।
কৃষি বিভাগ বলছে, এ বছর প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙা আমের আবাদ হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী চাষি ও বাগান মালিকরা পরিমিত কীটনাশক ব্যবহার করেছেন, করেছেন প্রয়োজনীয় পরিচর্যা। তারপরও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে আম নিয়ে দুশ্চিন্তা ভর করেছে চাষিদের মনে।
চাষিরা বলছেন, এ বছর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আমের আকার ছোট হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। এ জন্য পরিশ্রম অনুযায়ী ভালো দাম পাবেন কি না, তা নিয়ে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বাগান মালিকরা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, হাঁড়িভাঙা আম গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো গাছের ডালপালা উর্ধ্বমুখী বা আকাশচুম্বী হওয়ার চেয়ে পাশে বেশি বিস্তৃত হতে দেখা যায়। ফলে উচ্চতা কম হওয়ায় ঝড়-বাতাসে গাছ উপড়ে পড়ে না, আমও কম ঝরে পড়ে। মাঘ-ফাল্গুন মাসে এই আমের গাছে মুকুল আসে। পাকতে শুরু করে আষাঢ়ের প্রথম সপ্তাহ থেকেই।
আমটির উপরিভাগ বেশি মোটা ও চওড়া, নিচের অংশ অপেক্ষাকৃত চিকন। আমটি দেখতে সুঠাম ও মাংসালো, শ্বাস গোলাকার ও একটু লম্বা। আমের তুলনায় শ্বাস অনেক ছোট, ভেতরে আঁশ নেই। হাঁড়িভাঙ্গা আম আকারের তুলনায় অন্য আমের চেয়ে ওজনে বেশি, গড়ে তিনটি আমে এক কেজি হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি আম ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের হয়ে থাকে। পুষ্ট আম বেশিদিন অটুট থাকে। চামড়া কুচকে গেলেও পচে না। ছোট থেকে পাকা পর্যন্ত একেক স্তরে এই আমের স্বাদ একেক রকম। তবে আমটি খুব বেশি না পাকানোই ভালো বলে পরামর্শ কৃষি বিভাগের।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চলতি বছর জেলায় তিন হাজার ৩৫৯ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে হাঁড়িভাঙার আবাদ করা হয়েছে এক হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৭১০ মেট্রিক টন। শুরুর দিকে প্রতি কেজি আম ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। তবে আমের আকার ও পরিস্থিতির কারণে অনেক সময় দামের হেরফের হয়।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, আমের মৌসুমে ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বাজার ব্যবস্থাপনাসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/টিআর