বিজ্ঞাপন

জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম

April 25, 2024 | 6:42 pm

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রংপুর: ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জির পর এবার ভৌগোলিক নির্দেশক-জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে বিখ্যাত হাঁড়িভাঙা আম। এমন সংবাদে উল্লাসে মেতেছেন উত্তরাঞ্চলের চাষি, উদ্যোক্তাসহ সর্বস্তরের মানুষ।

বিজ্ঞাপন

রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার বিকেলে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন স্বীকৃতি প্রদান করেন।

এরইমধ্যে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে হাঁড়িভাঙা আম এখন বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে গর্বিত এই অঞ্চলের মানুষ। অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কারণে গত বছর বাংলাদেশ সরকার ভারত, ব্রিটেন, তুরস্ক ও আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের এই আম উপহার হিসেবে পাঠায় বাংলাদেশ সরকার।

বিজ্ঞাপন

বাগানমালিক ও চাষিরা জানান, ফল হিসেবে আম লাভজনক মৌসুমি ব্যবসা হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে আম বাগানের সংখ্যা। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় হাঁড়িভাঙা আম বদলে দিয়েছে চাষিদের জীবন। এই আম রংপুরের অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। বিষমুক্ত সুস্বাদু আঁশবিহীন এ আমের চাহিদাও বাড়ছে দিন দিন। কয়েক বছর ধরে ফলন ভালো হওয়ায় বেড়ে চলেছে এই আমের উৎপাদন।

হাঁড়িভাঙা আম ঘিরে চাষিদের পাশাপাশি তরুণ-যুবকেরাও উদ্যোক্তা হয়ে স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসা করার। আমগাছে মুকুল দেখে দৌড়ঝাঁপ বেড়েছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আগাম যোগাযোগ শুরু করেছেন আম চাষিদের সঙ্গে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, রংপুরে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হয়েছে ১ হাজার ৯২৫ হেক্টরে, যা গত বছরের থেকে সামান্য বেশি। গত বছর হয়েছে ১ হাজার ৮৮৭ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ২০-২২ মেট্রিক টন হওয়ার আশাবাদ কৃষি বিভাগের।

বিজ্ঞাপন

প্রকৃতি বিরূপ না হলে এবার আরও বেশি আমের ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আমগাছের পরিচর্যা করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

গত মৌসুমে মতো দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবারও এই আম বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে জানিয়ে কৃষি বিভাগের এ কর্মকর্তা বলেন, গত বছর প্রায় ৪২৫ কোটি টাকার আম বিক্রি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর আরও বেশি টাকার আম বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জুনের মাঝামাঝি সময় এই আম বাজারে আসবে।

হাঁড়িভাঙা আমের ইতিহাস

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তেকানী গ্রাম থেকেই আঁশবিহীন, মিষ্টি ও সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আমের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এ গ্রামেই রোপণ করা একটি গাছের কলম থেকে এখন কয়েক লাখ আমগাছ হয়েছে। বদলে দিয়েছে আশপাশের মানুষের ভাগ্য। বদলে গেছে গ্রামের দৃশ্যপটও। হাঁড়িভাঙা পরিণত হয়েছে রংপুরের ‘ব্র্যান্ডে’। তবে শুরুতে এ আমের নাম হাঁড়িভাঙা নয়, মালদিয়া ছিল। মালদিয়া আমের নাম হাঁড়িভাঙা হয়ে ওঠার গল্প জানিয়েছেন তেকানী গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন পাইকার। এলাকায় বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে পরিচত তার বাবা নফল উদ্দিন পাইকার হাঁড়িভাঙা আমের মাতৃগাছটি রোপণ করেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

আমজাদ হোসেন পাইকার জানান, ১৯৪৯ সালে মিঠাপুকুরের উঁচা বালুয়া ঝোপ-জঙ্গলে ভরপুর গ্রামে একটি আমের চারা নিয়ে এসে কলম করেন তার বাবা নফল উদ্দিন। তখন এর নাম ছিল মালদিয়া। আমগাছটিতে মাটির হাঁড়ি বেঁধে ফিল্টার বানিয়ে পানি দেওয়া হতো। একদিন রাতে কে বা কারা মাটির হাঁড়িটি ভেঙে ফেলে। তবে গাছে বিপুল পরিমাণ আম ধরে। সেগুলো ছিল খুবই সুস্বাদু। বিক্রির জন্য বাজারে নিয়ে গেলে মানুষ ওই আম সম্পর্কে জানতে চায়। তখন নফল উদ্দিন মানুষকে বলেছিলেন, যে গাছে লাগানো হাঁড়িটি মানুষ ভেঙে ফেলেছে, সেই হাঁড়িভাঙা গাছের আম এগুলো। তখন থেকেই ওই গাছটির আম ‘হাঁড়িভাঙা’ নামে পরিচিতি পায়।

তিনি বলেন, তারপর থেকেই সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় সেই মাতৃগাছ থেকে জোড়া কলম করার হিড়িক পড়ে যায়। এলাকার মানুষ জোড়া কলম নিয়ে লাগাতে থাকেন। গড়ে উঠতে থাকে বাগান। নফল উদ্দিন পাইকার মারা যাওয়ার পর হাঁড়িভাঙা আমের মাতৃগাছে মানুষ এসে এতো জোড়াকলম করতে লাগলেন যে, গাছটির ডালগুলো হেলে পড়া শুরু করল। এরপর আশির দশকে বাণিজ্যিকভাবে গাছের কলম করে মানুষজন আমবাগান গড়ে তুলতে নেমে পড়ে।

টেকসই অর্থনীতির জন্য শুরু থেকেই হাঁড়িভাঙা আমের সংরক্ষণের জন্য হিমাগার স্থাপন, আধুনিক আমচাষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন, গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনসহ হাঁড়িভাঙাকে জিআই পণ্য হিসেবে ঘোষণার দাবি করে আসছেন এখানকার আমচাষীরা। সরকার সুদৃষ্টি দিলেই হাঁড়িভাঙাকে ঘিরেই এই অঞ্চলের অর্থনীতি আরও সচল হবে বলে মনে করে সংশ্লিষ্টরা।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান বলেন, ‘উত্তরের অর্থনীতিতে হাঁড়িভাঙা আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। প্রতি বছর হাঁড়িভাঙা আমের বাম্পার ফলন হয়।’

সারাবাংলা/একে

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন