বিজ্ঞাপন

‘দুর্নীতি এখন সিস্টেমে যুক্ত হয়ে গেছে’

May 4, 2024 | 10:42 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দুর্নীতি এখন আমাদের সিস্টেমে যুক্ত হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। শনিবার (৪ মে) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইন এ ঢাকা ফোরাম আয়োজিত ‘রাজনীতি অর্থনীতি: বাংলাদেশ এখন কোন পথে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিজ্ঞাপন

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গত ১৫ বছরে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্কটা কেমন হয়েছে তার একটি বিশ্লেষণ হওয়া প্রয়োজন। আমরা শুনে থাকি উন্নয়ন হয়েছে, দুর্নীতি হয়েছে। এমন কথাও প্রচলন আছে মাঠে যে, উন্নয়ন হলে দুর্নীতি কিছুটা হবে। কিন্তু দুর্নীতি এখন আমাদের সিস্টেমে (ব্যবস্থাপনায়) যুক্ত হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার আরেক কারণ হচ্ছে জবাবদিহিতা না থাকা। সরকার ও প্রশাসনে জবাবদিহিমূলক আচরণ অনুপস্থিত হওয়ার কারণ হচ্ছে আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থা। শুধু ৭ জানুয়ারির নির্বাচন নয়, অতীতের ধারাবাহিকতায় দেখেছি নির্বাচনি ভোটটা অনুপস্থিত হয়ে গেছে।’

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গত ১৫ বছরে উন্নয়নের অর্থায়নটা ঋণ নির্ভর হয়ে গেছে। উন্নয়ন খরচের অদক্ষতা অনেক বেড়ে গেছে। একদিকে ঋণ নির্ভর উন্নয়ন আমাদের ব্যবস্থাপনায় একীভূত হয়ে গেছে। আর অদক্ষতা ও জবাবদিহিতায় ধস নেমেছে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে নিয়মনীতি তৈরি হচ্ছে দুর্নীতির প্রয়োজনে। নীতি তৈরি করা হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো দুর্নীতি করতে। এভাবে দুর্নীতি করা হচ্ছে। সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, দুর্নীতি করছে, ধরা পড়লেও তাদের বিচার হচ্ছে না। আপনি দুর্নীতি করছেন সমস্যা নেই। বলা হচ্ছে, আর করিস না। এভাবে দুর্নীতি আমাদের সিস্টেমে একীভূত হয়ে গেছে।’

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এগুলো অদক্ষ অর্থনীতির কু-শাসন। এর পরিণতিতে সামষ্টিক অর্থনীতিতে এক ধরনের শূন্যতা তৈরির আভাস দেখতে পাচ্ছি। আর্থিক হিসাবে কিন্তু ঘাটতি এখনও আছে। কর্মসংস্থানের জন্য শিক্ষিত যুবকরা দেশ ছাড়ছে। এতে মেধা পাচার হচ্ছে। মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সময় এটি কাঙ্ক্ষিত না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে যারা সবকিছু করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক মতের ব্যক্তিরা শিক্ষক হতে আবেদন করার সাহস পাচ্ছে না। গত ১৫ বছরে ৯০০ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সরকারি মতাদর্শের।’

বিজ্ঞাপন

অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক অধিকারগুলো এক এক করে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার আইয়ুব খানের নীতিতে চলছে। আইয়ুব খান বলেছিল, উন্নয়নকে এগিয়ে দেই-গণতন্ত্রকে একটু ধীর করে দেই। এখন সরকার বলছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলে রাজনৈতিক অধিকারের প্রয়োজন থাকবে না। এজন্য সরকার অবকাঠামোগত দিকেই যাচ্ছে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও অনেক দেশ করেছিল।’

আলী রিয়াজ বলেন, ‘ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ চলছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অনেক ধরনের ঘটনা ঘটেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্টানগুলোকে আওয়ামী লীগ নিজ দলের আদর্শে বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করেছে। এসব ঘটনার বাইরেও বড় একটি ঘটনা ঘটেছে, তা হল ক্ষমতায় বহির্শক্তির ব্যবহার বেড়েছে। বিশেষ করে রাজনীতিতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করি।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘অর্থনীতি একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে তা সাধারণ মানুষও বোঝে। প্রথমত, মূল্যস্পীতির সঙ্গে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের দায়-দেনা বড় আকারে যুক্ত হয়েছে অর্থনীতিতে। বৈদেশিক ঋণ সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বাড়ছে। এটি বিনিময় হারের ওপর চাপ তৈরি করছে, বৈদেশিক ‍মুদ্রার রিজার্ভ কমিয়ে দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদ (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ধারা শ্লথ হয়ে যাচ্ছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে সরকারি বিনিয়োগের ওপর। যেভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে, আয়-বৈষম্য বাড়ছে তাতে কর্মসংস্থানে প্রভাব পড়ছে। যে রাজনৈতিক জবাবদিহিতার মধ্যে উন্নয়ন রাষ্ট্র পরিচালনার কাজটি হওয়ার কথা ছিল, তা হচ্ছে না। স্বার্থ সংশ্লিষ্ঠদের গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে সব খানে। তারা এক ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপানয় কু- প্রভাব বিস্তার করছে। তাদের মোকাবেলা করার জন্য যে রাজনৈতিক শক্তি দরকার তা দেখা যাচ্ছে না কোথাও।’

বিজ্ঞাপন

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান বলেন, ‘সুশাসনের অভাবে রাষ্ট্রীয় নীতিগুলো একটি গোষ্টী ছিনতাই করে নিচ্ছে। তাদের সুবিধা মতো করছে। পরিস্থিতির উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলো কিছু করতে পারছে না, এটা সত্য। এজন্য অতীতের মতো সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষের ভূমিকা রাখা দরকার।’

সাবেক মন্ত্রীপরিষদ ও মূখ্য সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে ভুর্তুকি দেওয়া হচেছ অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে। এখন ভর্তুকির ৮১ শতাংশই দেওয়া হচ্ছে ক্যাপাসিটি চার্জে, এটি তো দুর্নীতি। ব্যবসায়ী শ্রেণি এখন ব্যাংক খাতে লুটপাট করছে। তারা অর্থপাচার করছে তাদের কিছুই হচ্ছে না।’

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের মধ্যে কোনো সমন্বয় না থাকায় মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এক হচ্ছে না। শুধু বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ নিয়ে একটি নিরাপত্তা দিতো, অর্থনীতির বাকি সূচকগুলো নিয়ে নীরব থাকত, পথের বাধাগুলো সরিয়ে দিতো তাহলে সব ঠিক হয়ে যেত।’

সারাবাংলা/এজেড/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন