রাজশাহীতে বেড়েছে গরুর চামড়ার দাম, ছাগলের চাহিদা শূন্য
২০ জুন ২০২৪ ১০:০৪
রাজশাহী: গত কয়েক বছরেই কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়ার দাম ছিল নিম্নমুখী, নেমে গিয়েছিল একদম তলানিতে। সেই ধারাবাহিকতা ভেঙে এবার কিছুটা বেড়েছে চামড়ার দাম। একেক পিস গরুর চামড়া আকারভেদে বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত দরে। এই দামও অবশ্য এক দশক আগের দামের ২০ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি নয়। অন্যদিকে এ বছরও ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে পানির দামে— একেক পিসের দাম ৫ থেকে ১০ টাকার বেশি মেলেনি।
কোরবানিদাতা এবং মৌসুমি ও খুচরা চামড়া বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম অস্বাভাবিক পরিমাণে কমে এসেছিলে। এমনকি কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে না পেরে খাল-নর্দমায় ফেলে দেওয়ার ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে এ বছর কোরবানির গরুর চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে, যদিও বিক্রেতারা এই দামে সন্তুষ্ট হতে পারছেন না।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাঁচ-সাত বছর আগেও মাঝারি থেকে বড় আকৃতির গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায়। সেখানে এবার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায়। আগে একটি ছাগলের চামড়া বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। এবার সেই চামড়া ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কোথাও কোথাও বিনা টাকাতেই চামড়া গছিয়ে দিয়েছেন মালিকরা। কারণ চামড়া বাড়িতে রাখার জিনিসও নয়।
রাজশাহীতে এবার বড় গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর বেশি দাম দিতে পারেননি চামড়া ব্যবসায়ীর। আর ছাগলের চামড়া তারা কিনতে কোনো আগ্রহই দেখাননি তারা।
ঈদের দিন রাজশাহীর বিভিন্ন মহল্লা ও এলাকায় চামড়া বেচাকেনা হয়। পাড়া-মহল্লা থেকে চামড়া সংগ্রহ করেন মূলত মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। নগরীর রেলগেট এলাকায় চামড়ার মজুতের জন্য অনেকগুলো গুদামও আছে। গুদামের ব্যাপারিরা খুচরা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন। ব্যাপারিরা কাঁচা চামড়া কিনে লবণ লাগিয়ে কয়েকদিন রাখেন নিজেদের গুদামে। পরে সেগুলো ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেন। এবারও রাজশাহীর গুদামে চামড়া বিক্রি করতে এসে বিপাকে পড়েন কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী।
রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়া এলাকার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন জানান, তারা এসব চামড়া কিনে আড়তে দেন। গত কয়েক বছর ধরেই ছাগলের চামড়া নেন না গুদামের ব্যাপারীরা। ফলে এবার তারা ছাগলের একটা চামড়াও কেনেননি। এবার গরুর চামড়ার দামটা গতবারের তুলনায় প্রতিটিতে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি হয়েছে। এবার তারা বড় গরুর চামড়া ৭০০ টাকা পর্যন্ত দামে কিনেছেন। গতবার বড় গরুর প্রতিটি চামড়ার দাম ছিল ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।
আরেক মৌসুমী ব্যবসায়ী ওসমান আলী বলেন, রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ৪০০ গরুর চামড়া কিনেছি। এগুলো আড়তেও বিক্রি করেছি। আড়তদাররা এখনো টাকা পরিশোধ করেনি। অনেকে টাকা ছাড়া ছাগলের চামড়া দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আমরা নিইনি। এগুলো আড়তে বিক্রি করা যায় না। অকারণে বোঝা বয়ে লাভ নেই। আড়তে চাহিদা না থাকায় গ্রাম-মহল্লায় ছাগলের চামড়া ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রেলগেট আড়তের ব্যবসায়ী নুর হোসেন বলেন, এবার গত কয়েক বছরের তুলনায় গরুর চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। বড় গরুর চামড়া ৮০০ টাকা পর্যন্ত দামে কিনেছি। তবে ছাগলের চামড়া কিনিনি।
পবা উপজেলার ধর্মহাটা গ্রামের মৌসুমি, চামড়া ব্যবসায়ী মাইনুল ইসলাম বলেন, আমরা কিছু চামড়া কিনেছি। তবে এখনো দাম পরিশোধ করিনি। আমরাও আড়তে চামড়া দিয়েছি, তবে টাকা পাইনি। আড়তদাররা এসব চামড়া ট্যানারিতে বিক্রি করে টাকা পেলে আমরাও পাব। তখন আমরা চামড়া মালিকদেরকে দাম পরিশোধ করব। চামড়া এভাবেই বাকিতে বিক্রি হয়।
রাজশাহী চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আসাদুজ্জামান বলেন, চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এবার এক হাজার টাকাতেও গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে, যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। গত বছর আমরা ৩০০ টাকাতেও গরুর চামড়া কিনেছি। সে তুলনায় এবার দাম ভালোই বলতে হবে।
সারাবাংলা/টিআর