Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্নীতির মচ্ছব বন্ধ করতে এখনই ‘বিশেষ কমিশন’ চান মেনন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৪ জুন ২০২৪ ২০:৫৫

ঢাকা: দুর্নীতির বিস্তার রোধ করা না গেলে হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি হবে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। দুর্নীতির মচ্ছব বন্ধ করতে এখনই ‘বিশেষ কমিশন’ গঠন করুন, দুর্নীতিবাজদের অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত, বিচার করে কঠিন শাস্তিরও প্রস্তাব করেছেন তিনি।

সোমবার (২৪ জুন) জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় মেনন এসব কথা বলেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, এক নিষ্ঠুর অলিগার্করা দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই অলিগার্কির স্বার্থ রক্ষার্থে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিং খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত করেছে। এর থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার, জন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাই ছিল বর্তমান সময়ের জরুরি কর্তব্য। কিন্তু সেই লক্ষ্যে বাজেটে কোন কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায় না। আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনী ইশতেহারের কথা বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবনা তার থেকে যোজন যোজন দূরে, সাংঘর্ষিক। বাজেটে মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বৈশ্বিক সংকটের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই একই বৈশ্বিক সংকটে শ্রীলংকা—ভারত মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে পারলেও বাংলাদেশ পারছে না কেন সে কথা বলার প্রয়োজন ছিল। অর্থমন্ত্রী অবশ্য বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আগামী ছয় মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার আশা দিয়েছেন। আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করব। ছয় মাস পর এ সংসদে এ ব্যাপারে পর্যালোচনা উত্থাপনের জন্য আমি প্রস্তাব করছি।

মূল্যস্ফীতির অভিঘাত সাধারণ মানুষকেই বহন করতে হয়। এর ফলে যে বিষয়টি সাধারণ মানুষকে সর্বাপেক্ষা পীড়িত করছে তা হচ্ছে উচ্চ দ্রব্যমূল্য। আমি সংসদে কাউকে কাউকে ঢোক গিলে বলতে শুনেছি মানুষ কষ্টে আছে। মানুষ কষ্টে নাই কেবল, মানুষকে তাদের সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা কমিয়ে দিতে হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় এর প্রভাব বাজারে পড়বে না। সরকার নিজেই স্বীকার করেন বাজার সিন্ডিকেট এর জন্য দায়ী। কিন্তু সেই সিন্ডিকেট ভাঙার, তাদের বিচারের আওতায় আনার কোনো ব্যবস্থা নাই। বাজেটে পরোক্ষ করের যে বিস্তৃত বোঝার প্রস্তাব করা হয়েছে তার অভিঘাত বাজারের ওপরই পড়বে। এ ক্ষেত্রে টিসিবির ডিলারশিপ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে এক কোটি ফ্যামিলির কার্ডের কথা। কিন্তু এসব পদক্ষেপ গরিব মানুষের একাংশকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য তা বিশেষ কোন ফল বহন করবে না। এক্ষেত্রে আমি আমাদের বহু বলা দাবি অর্থাৎ গণবণ্টন ব্যবস্থায় পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালুর কথা বলছি।

মেনন বলেন, নিউ ইয়র্কের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ এক্স— এর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন ধনী উৎপাদনে ২০১০—২০১৯ সালে পৃথিবীর নেতৃস্থানে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষ ভাগে কোটিপতি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,১৩,৫৮৬ যেটা মাত্র ২০০০ সালে ছিল ৩৪৪২টি। ওই হিসাব অনুযায়ী এ কোটিপতিদের এক শতাংশ ভাগ ব্যাংকের মোট আমানতের ৪৩.৪৫ ভাগের মালিক। এ কথা বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশের অবাক করা ধনী উৎপাদনে ঈর্ষান্বিত না হয়ে এটাকে ভালো ভাবে নেওয়া উচিত। এ ধনীই নিচের দিকে ট্রিকাল ডাউন করবে। এ যুক্তি গ্রহণ করা যেত এ সম্পদ দেশে বিনিয়োগ হতো তা না হয়ে এ অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

মার্কিন ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি ইন্সটিটিউশনস দেখিয়েছে যে, বছরে সাত বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে কানাডার বেগম পাড়ায়, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের আধুনিক শপিংমল, রিয়েল এস্টেট ও হুন্ডি ব্যবসায়। এ টাকার লভ্যাংশও দেশে আসছে না। পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার কোনো উদ্যোগ নাই। অথচ প্রবাসীরা বিদেশে হাড়ভাঙা খাটুনির যে আয় দেশে পাঠায় তার ওপর কর বসানো হচ্ছে। তাদের বিদেশ যাত্রা নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ অর্থ-সম্পদ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে তা ফেরত না দেওয়া। ব্যাংক লুট ও দুর্নীতি। ২০০৯ সালে ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকার ঋণ এখন ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। পুণঃ তফসিলিকরণ ও অবলোপন ধরলে এর পরিমাণ ৪ থেকে ৫ লাখ হাজার কোটি টাকা দাঁড়াবে। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকেই ৩৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আর পুরোটার কথা আগেই বলেছি। আমরা নই কেবল, একজন শিল্প উদ্যোক্তা সংসদ সদস্য টেলিভিশনে বলছেন ৪/৫ জন লোক ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। আর ব্যাংকের নৈরাজ্য ও লুট বন্ধ করতে অর্থমন্ত্রী সংসদ কর্তৃক পাস করা যে ব্যাংক সংশোধন আইনের কথা উল্লেখ করেছেন তাও একই স্বার্থে প্রণীত। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে ‘ব্যাংক কমিশন’ গঠন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরের অর্থমন্ত্রী তাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর এখন ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তুঘলকি কাণ্ড করছে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, আমি দেশের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বিএনপি আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। বিএনপি আমলের দুর্নীতির বিশ্ব সূচকে আমাদের সেই কলঙ্ক দূর হলেও ওই সূচকে বাংলাদেশ এখনও শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে। বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির সম্প্রতি যে চিত্র বেরিয়ে আসছে। তা দেশের ভাবমূর্তি কেবল নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি করছে। এ কথা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নাই যে সাবেক পুলিশ প্রধান ও সেনাপ্রধানের দুর্নীতির চিত্র হিমশৈলের ক্ষুদ্র উপরিভাগ মাত্র। এখনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির এ বিস্তার রোধ করা না গেলে হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি হবে। দুর্নীতির এ মচ্ছব বন্ধ করতে এখনই ‘বিশেষ কমিশন’ গঠন করুন, দুর্নীতিবাজদের অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্ত, বিচার করে কঠিনতম শাস্তি দিন। ঋণখেলাপি অর্থ আত্মসাৎকারীদের জন্য ‘ট্রাইব্যুনাল গঠন’ করুন। আমি জানি উন্নয়নের বেদনা আছে। সেই বেদনা যদি চোখের সামনে দেশের সম্পদ লুট করার কারণে হয় তবে সেটা গ্রহণ করা যায় না। ওই লুটের টাকাকে যখন সাদা করার জন্য সৎ উপায়ে অর্জিত অর্থের চেয়ে অর্ধেক কর দিয়ে সাদা করার প্রস্তাব করা হয় তখন সেটা সততার জন্য তিরস্কার ও অসততার জন্য পুরস্কারের শামিল হয়ে দাঁড়ায়। এ সম্পর্কে যে সব যুক্তি দেওয়া হচ্ছে তা কেবল আসার নয়, এ প্রসঙ্গে সরকারের অতীত অবস্থানের বিপরীত। খালেদা জিয়ার জন্য যেটা অনৈতিক, বর্তমানেও সেটা অনৈতিক। আশা করি অর্থমন্ত্রী এ প্রস্তাব প্রত্যাহার করে সংসদকে এর দায়ভার থেকে রেহাই দেবেন।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনইউ

জাতীয় সংসদ টপ নিউজ রাশেদ খান মেনন সংসদ অধিবেশন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘তুফান’ আসছে হিন্দি ভাষায়
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯

সম্পর্কিত খবর