সিজারিয়ান অপারেশনে মা ও নবজাতকের মৃত্যু, ক্লিনিক ভাঙচুর
২৪ জুন ২০২৪ ২২:১৫
যশোর: যশোর সদর উপজেলার রূপদিয়ায় একটি অনিবন্ধিত ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনকালে এক প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (২৪ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। এসময় নিহতের স্বজনরা ক্লিনিকে ভাঙচুর চালায়।
পরে পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করে। এ সময় ক্লিনিকের কর্মীরা পালিয়ে গেলেও এক দালালকে আটক করা হয়েছে।
নিহতের স্বজনেরা জানান, সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে যশোর সদর উপজেলার আন্দুলিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী লিমা খাতুন রিমা’র প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয়। এসময় এক ধাত্রীর পরামর্শে তাকে রূপদিয়া বাজারের গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়। এরপর তাকে কোনো প্রকার পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া ও রক্তের ব্যবস্থা না করেই সিজারিয়ান অপারেশন করা হয়। অপারেশনকালে প্রসূতি মারা গেলে কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে রক্তস্বল্পতার কারণে জ্ঞান ফিরছে না জানিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে।
স্বজনেরা তাকে খুলনায় নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জানান, রোগী অনেক আগেই মারা গেছেন। মারা যাওয়ার সংবাদে স্বজনরা ক্লিনিকে গিয়ে তালা ঝুলানো দেখতে পান। পরবর্তীতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নবজাতক ছেলে সন্তানটিও মারা গেলে স্বজনরা ওই ক্লিনিকে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ ক্লিনিকের দালাল চক্রের সদস্য নরেন্দ্রপুর গ্রামের এক নারী ১২০০ টাকার বিনিময়ে রিমাকে সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কৌশলে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করান। পরে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক নুরছালী তুলি।
রিমা বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলাম জানান, ভুল চিকিৎসার কারণে রিমা সিজার করার সময় মারা গেছেন। সিজারিয়ান অপারেশনের পরে রিমা বেগম বেঁচে আছে বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ভুল বুঝিয়ে ক্লিনিকে তালা মেরে দেয় এবং খুলনা মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরবর্তীতে সেখানে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক বলেন, রিমা অনেক আগেই মারা গেছেন। আর দুপুরে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় নরেন্দ্রপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মিহির মন্ডল বলেন, প্রসূতির মৃত্যুর পর স্থানীয় লোকজন ও পরিবারের লোকজন গ্রামীণ ক্লিনিক ঘেরাও করে। এ সময় ক্লিনিকের লোকজন তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়। পরে নবজাতকের মৃত্যুর খবর পেলে এক পর্যায়ে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনে।
তিনি আরও বলেন, পরিবার যেহেতু ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ করছে, তাই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর খবর পেয়ে অনিবন্ধিত গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যান যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেলসহ স্বাস্থ্য প্রশাসনের একটি টিম। কিন্তু এর আগেই ক্লিনিকের লোকজন পালিয়ে যাওয়ায় তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নাজমুস সাদিক রাসেল জানান, ২০২০-২১ সালের পর গ্রামীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের ওই ক্লিনিকটি নিবন্ধনের কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তাই নিবন্ধনহীন ওই ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আর এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের পর যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সারাবাংলা/এনইউ