Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যশোরে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত, তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল

ডিস্টিক্ট্র করেসপন্ডেন্ট
৬ জুলাই ২০২৪ ২০:৪৯

যশোর: এপ্রিলের তীব্র দাবদহ থেকে জুলাইয়ের ৬ তারিখ পর্যন্ত যশোর ছিল বৃষ্টির অপেক্ষায়। আষাঢ়ের শেষ দিকে শনিবার (৬ জুলাই) দুপুরে সেই বৃষ্টির দেখা পেল যশোরবাসী। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বৃষ্টি পেয়ে শহর ও শহরতলিতে বহুজনকে আয়েশ করে বৃষ্টিস্নান করতে ও ভিজতে দেখা গেছে।

এর আগে, মে-জুনে কয়েকদফা বৃষ্টি হলেও সেটা হালকা-মাঝারিতেই সীমাবদ্ধ ছিল। চলতি মাসেও ২/১ দিন বৃষ্টি দেখেছে যশোর কিন্তু মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে আজ শনিবারে। ঘণ্টা দেড়েকের ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে যশোর শহরের নিম্নাঞ্চল। আর সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে গোটা যশোরবাসী।

শনিবার বেলা ১১টার পর থেকে শুরু হওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি দুপুরে ভারী বৃষ্টিতে পরিণত হয়। ফলে বিকেল পর্যন্ত আষাঢ়ের টানা বৃষ্টিপাতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিন যশোরে ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে।

বৃষ্টি কৃষকদের জন্য আনন্দ নিয়ে এলেও শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় ড্রেন উপচে রাস্তাঘাট তলিয়ে নোংরা পানি প্রবেশ করেছে অসংখ্য বাড়িতে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের খাল ভরাট, কালভার্ট বেদখল ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পৌরসভায় গাফিলতিতে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মধ্য আষাঢ় পর্যন্ত যশোরে তেমন বৃষ্টিপাতের দেখা মেলেনি। গত এক সপ্তাহ ধরে শুরু হয়েছে বৃষ্টিপাত। কখনো হালকা, কখনো মাঝারি বৃষ্টিপাতের দেখা মিলছিল এই সময়ে। শনিবারও সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এরপর ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত জেলায় চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী কয়েকদিন ধরে এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে।

যশোর শহর ঘুরে দেখা গেছে, শনিবারের এই ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে গোটা যশোর শহরের নিম্নাঞ্চল। বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ভারী বর্ষণে শহরের বেজপাড়া, টিবি ক্লিনিকপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, শংকরপুর, মিশনপাড়া, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, এমএম কলেজ এলাকা, নাজিরশংকরপুর, বকচর, আবরপুরসহ শহরের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। শংকরপুর, বেজপাড়া, খড়কি, কারবালা, স্টেডিয়ামপাড়ার অনেক বাড়ি পানি প্রবেশ করেছে।

এসব এলাকার ড্রেন ছাপিয়ে উপচে পড়া পানি সড়ক পার হয়ে ঘরের মধ্যেও ঢুকে পড়েছে। ভেসে গেছে বিভিন্ন এলাকার পুকুর ও মাছের ঘের। মাছ ছড়িয়ে পড়ায় ড্রেন ও সড়কের উপরেই শৌখিন মৎস্যশিকারীদের তৎপরতাও দেখা গেছে। পাশাপাশি শহরের অন্তত ৩০টি সড়কে পানি জমে আছে।

খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, স্টেডিয়ামপাড়া, শহরের পিটিআই, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, ফায়ার সার্ভিস মোড় থেকে পাইপ পট্টি, বেজপাড়া চিরুনিকল, মিশনপাড়া, আবরপুর ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, ষষ্ঠীতলাপাড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

এছাড়াও শহরের ছোট ছোট সড়কেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব সড়কের দুই পাশের ড্রেনের ময়লা-আবর্জনার নোংরা পানি উপচে পড়ে সড়কে। সড়ক ছাপিয়ে সেই পানির ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। পৌরসভার ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অনেক মানুষের বসতঘরে পানি ঢুকেছে। জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েন ওই ওয়ার্ডের মানুষেরা।

বৃষ্টির পর শহরের পাইপপট্টি এলাকায় যেয়ে দেখা গেছে, রাস্তার দু’ধারের দোকানগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে। দোকানের ভিতরেই এক হাটু পানি। দোকানিরা মগ, বালতি গিয়ে পানি নিষ্কাশনের চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বলেন, ‘কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে সড়কে হাঁটু পানি জমেছে। সড়কের পাশে ড্রেন থাকলেও আবর্জনায় পূর্ণ হওয়ায় পানি উপচে সড়কে প্রবেশ করেছে। সড়কের সেই পানি আবার দোকানে প্রবেশ করেছে। সড়ক নিচু আর ড্রেন হয়ে গেছে উঁচু। তাই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। উপায় না পেয়ে ব্যবসায়ীরা যে যার মতো পানি পরিস্কার করছেন।’

৭ নাম্বার ওয়ার্ডের শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা গোলাম মাজেদ বলেন, ‘বাড়িঘরে পাানি উঠেছে। ঘরের ভিতরে হাঁটু পানি। পরিবার নিয়ে অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়েছি।’

শহরের খড়কির শাহ আবদুল করিম সড়কের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের দক্ষিণ গেট থেকে খড়কি মোড় হয়ে পীরবাড়ি, কবরস্থান পর্যন্ত হাঁটু সমান পানি জমেছে। খড়কি দক্ষিণপাড়া-পশ্চিমপাড়া হাজামপাড়া, খড়কি রেললাইন পাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। এই সড়কে চলাচলকারী রিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসের যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।

খড়কি এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কুমার সরকার বলেন, ‘বৃষ্টিতে ছাত্রাবাস, বাসাবাড়ি দোকানে পানি আটকে আছে। খাল বেদখল, পর্যাপ্ত নর্দমার অভাব, বক্সড্রেনের নামে খালনালা হত্যাসহ নানা কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দীর্ঘদিনেও পৌরসভা পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সচল করতে পারেনি। তাই বৃষ্টি হলেই পানিতে ডুবতে হয় এলাকার মানুষকে।’

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শরীফ হাসান বলেন, ‘শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও নালার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তা, নালা সংস্কার ও নির্মাণের জন্য এমজিএসপি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’

সারাবাংলা/এমও

টপ নিউজ নিম্নাঞ্চল যশোর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর