৫ মাসে সাপের কামড়ের শিকার ৬১০ জন, ৩৮ মৃত্যু
১০ জুলাই ২০২৪ ২১:১৫
ঢাকা: দেশে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ মাস ৯ দিন তথা ১৫৮ দিনে মোট ৬১০ জন সাপের দংশনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে এই সময়ে বিষধর সাপের দংশনে শিকার হয়েছেন ৭৩ জন, যাদের মধ্যে ১১ জন মারা গেছেন। আর সাপের কামড়ের শিকার হয়ে সর্বোচ্চ ৪১৬ জন ভর্তি হয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত চন্দ্রবোড়া তথা রাসেল’স ভাইপার সাপের উপদ্রব তুলনামূলকভাবে কম পাওয়া গেছে। পাঁচ মাসে এই সাপের দংশনের শিকার হয়েছেন ১৮ জন, যাদের মধ্যে পাঁচজন মারা গেছেন।
বুধবার (১০ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরে রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া সাপ নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন অধিদফতরের ‘ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে’র তথ্যে সাপে কাটা রোগী ও মৃত্যুর হিসাবসহ দেশে সাপের কামড়ের সাম্প্রতিক চিত্র নিয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন।
ডা. রোবেদ জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৪১৬ জন সাপে কাটা রোগী ভর্তি হন। বিষধর সাপের দংশনে আক্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন ৭৩ জন, তাদের মধ্যে ১৮ জনকে দংশন করেছিল চন্দ্রবোড়া সাপ। আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান ১১ জন। চন্দ্রবোড়ার দংশনে মারা যান পাঁচজন।
সাপে কাটা রোগীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাসেল’স ভাইপার নিয়ে সারা দেশে বিভিন্ন তত্ত্ব, তথ্য ও গুজবে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশে সাপের দংশন একটি স্বীকৃত গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত।
২০২২ সালে পরিচালিত জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, দেশের চার লাখের বেশি মানুষ সাপের দংশনের শিকার হন। এর মধ্যে মারা যান প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ। দেশে থাকা প্রধান বিষধর সাপের মধ্যে গোখরা, ক্রেইট (কালাচ), চন্দ্রবোড়া বা রাসেল’স ভাইপার ও সবুজ সাপ অন্যতম। কিছু সামুদ্রিক সাপের দংশনের তথ্যও আছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, চন্দ্রবোড়া বা রাসেল’স ভাইপার ভাইপারিড গ্রুপের একটি বিষাক্ত সাপ। দেশে চন্দ্রবোড়ার অস্তিত্ব ও এর দংশনে মৃত্যুর ইতিহাস ১৯২০ সাল থেকে স্বীকৃত। ২০১৩ সালে রামেকে হাসপাতালে চন্দ্রবোড়া দংশনের প্রথম রিপোর্ট পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে এর প্রভাব বেশি দেখা গেলেও পরে ধীরে ধীরে চন্দ্রবোড়ার বিস্তৃতি ২৭টি জেলায় ছড়িয়েছে।
ডা. রোবেদ বলেন, বিষধর সাপের দংশনের স্বীকৃত চিকিৎসা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ। সাধারণত বিষধর সাপের বিষ সংগ্রহ করে তা ঘোড়ার শরীরে প্রয়োগ করা, ঘোড়ার রক্তের সিরাম থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়। তবে বাংলাদেশে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয় না। ভারতে তৈরি (চারটি প্রধান বিষধর সাপের বিষয়ে বিরুদ্ধে প্রস্তুত) অ্যান্টিভেনম সংগ্রহ করে অসংক্রামক ব্যাধি কর্মসূচি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে তা সরবারহ করে।
অ্যান্টিভেনম কেনা, বিতরণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার ও পরবর্তী প্রভাব দেখার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও এর প্রয়োগের সুফল লক্ষণীয় বলে উল্লেখ করেন ডা. রোবেদ আমিন।
সাপের দংশন ও সাপে কাটা রোগী নিয়ে জাতীয় ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা প্রণয়নসহ স্বাস্থ্য অধিদফতর এ নিয়ে বিভিন্ন কাজ করছে বলেও জানানো হয়।
ডা. রোবেদ বলেন, দেশে সর্প দংশন রোধের কর্মকৌশল ও অর্থের ব্যবস্থাসহ সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা (২০২৩-২০২৮) তৈরি করা হয়েছে। সর্প দংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০৩০ সাল নাগাদ ৫০ শতাংশ মৃত্যু ও অক্ষমতা কমানোর লক্ষ্যে এই কর্মকৌশল সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উপজেলা পর্যায়ে সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসা চালু হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে উপজেলা পর্যায়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
অ্যান্টিভেনম চন্দ্রবোড়া চন্দ্রবোড়া সাপ রাসেল’স ভাইপার সাপে কাটা রোগী সাপের কামড় স্বাস্থ্য অধিদফতর