জুন মাসে সড়কে বেড়েছে প্রাণহানি, হতাহত ১ হাজার ৭২৬
১৫ জুলাই ২০২৪ ১৪:৩৬
ঢাকা: গত জুন মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৭২৬টি। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৬৪৪ জন এবং আহত কমপক্ষে ১০৮২ জন। দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে নারী ৮৭, শিশু ১১৪ জন।
সোমবার (১৫ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। জুন মাসের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মে মাসের তুলনায় জুন মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। এই সময়ে ১১টি নৌ দুর্ঘটনায় ১৪ জন নিহত, ৩ জন আহত এবং ৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩১টি রেললাইনে দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছেন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২২৭ জন (৩৫.২৪%), বাসের যাত্রী ২৯ জন (৪.৫০%), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৫১ জন (৭.৯১%), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স- জীপ আরোহী ৩৮ জন (৫.৯০%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু-লেগুনা) ১২৮ জন (১৯.৮৭%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-মাহিন্দ্র) ২৬ জন (৪.০৩%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা আরোহী ১৭ জন (২.৬৩%) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২৫৬টি (৩৫.২৬%) জাতীয় মহাসড়কে, ২৭৮টি (৩৮.২৯%) আঞ্চলিক সড়কে, ৭৯টি (১০.৮৮%) গ্রামীণ সড়কে এবং ১০৭টি (১৪.৭৩%) শহরের সড়কে এবং ৬টি (০.৮২%) অন্যান্য স্থানে সংঘটিত হয়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাসমূহের ১৬৩টি (২২.৪৫%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩১৪টি (৪৩.২৫%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৩৪টি (১৮.৪৫%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৯১টি (১২.৫৩%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ২৪টি (৩.৩০%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন
দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক, কার্গো ট্রাক-ট্যাঙ্ক লরি ২৭.২৮%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ ৫.৬৬%, যাত্রীবাহী বাস ১৩%, মোটরসাইকেল ২৪.৬৭%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-টেম্পু) ১৬.৪৭%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-টমটম-মাহিন্দ্র) ৮%, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা ২.০৯% এবং অজ্ঞাত যানবাহন ২.৭৮%।
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণ
সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাসমূহ ঘটেছে ভোরে ৮.৫৩%, সকালে ২৩.৮২%, দুপুরে ২১.৪৮%, বিকালে ১৭.০৭%, সন্ধ্যায় ৮.৪০% এবং রাতে ২০.৬৬%।
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান
দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৩.৬৯%, প্রাণহানি ২৪.০৬%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩.৪৯%, প্রাণহানি ১৪.৫৯%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৮.৪৫%, প্রাণহানি ১৮%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১০.০৫%, প্রাণহানি ৯.৬২%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.১৬%, প্রাণহানি ৭.১৪%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.১৯%, প্রাণহানি ৫.৯০%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১৩.৩৬%, প্রাণহানি ১৩.৮১% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭.৫৭%, প্রাণহানি ৬.৮৩% ঘটেছে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৭২টি দুর্ঘটনায় ১৫৫ জন নিহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ৪৫টি দুর্ঘটনায় ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাজধানী ঢাকায় ৩৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও ৩৪ জন আহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনা পর্যালোচনা ও মন্তব্যে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, গত মে মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৬ জন নিহত হয়েছিল। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ১৫.৬৭ জন। জুন মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছে ২১.৪৬ জন। এই হিসাবে জুন মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ৩৬.৯৪%।
অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। তাই গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার। বেপরোয়া যানবাহন এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে। এজন্য সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জীবনমুখি সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। পরিবহন চালকদের পেশাগত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না করলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলেও মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সারাবাংলা/এমও