Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিকিৎসা ব্যয়ের ৭৩% খরচই নিজের, অর্ধেকের বেশি যায় ওষুধে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ জুলাই ২০২৪ ১৯:১১

চিকিৎসা ব্যয়ের অর্ধেকেরও বেশি খরচ হয় ওষুধ কিনতে। প্রতীকী ছবি

ঢাকা: কম সরকারি বরাদ্দ এবং সেই বরাদ্দও সঠিকভাবে কার্যকর না হওয়ায় চিকিৎসা ব্যয়ের সিংহ ভাগই মানুষকে খরচ করতে হয় নিজের পকেট থেকে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণার তথ্য বলছে, খরচের ৭৩ শতাংশই রোগী বা তার পরিবারের নিজেদেরই বহন করতে হয়। আর এই চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ৬১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়, যা মোট জনসংখ্যার ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।

এদিকে চিকিৎসা খাতের যে ব্যয় তার অর্ধেকের বেশি খরচ হয় ওষুধের পেছনে। এক চতুর্থাংশেরও বেশি খরচ হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। বিআইডিএসের তথ্য বলছে, চিকিৎসা ব্যয়ের ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশই খরচ হয় ওষুধ কিনতে গিয়ে। ডায়াগনসিস বা রোগ নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষায় খরচ হয় আরও ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর বাইরে কনসালটেশন বা চিকিৎসা পরামর্শের পেছনে চিকিৎসা ব্যয়ের ১০ দশমিক ৩১ শতাংশ এবং পরিবহণের পেছনে খরচ হয় ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ অর্থ।

বিআইডিএসের এক সেমিনারে এক গবেষণাপত্রের বরাতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সোমবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিআইডিএস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। সেমিনারে গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিসার্স ফেলো ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার। প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।

গবেষণাপত্রের তথ্য তুলে ধরে ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার বলেন, ১৯৯৭ সালে চিকিৎসার পেছনে মানুষের পকেট থেকে খরচ হতো ৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ। ২০২০ সালে সেটি বেড়ে হয় ৬৮ শতাংশ, সর্বশেষ ২০২১ সালের হিসাবে সেটি আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ শতাংশে। সে হিসাবে ২৭ বছরের ব্যবধানে চিকিৎসা খাতে মানুষের পকেট থেকে তথা নিজস্ব ব্যয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

বিআইডিএসের সেমিনারে বাংলাদেশের মানুষের চিকিৎসা ব্যয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ছবি: সারাবাংলা

চিকিৎসা ব্যয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও বাংলাদেশের তুলনা করেন এই গবেষক। বলেন, স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তি পর্যায়ে ব্যয় সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে— ৭৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপরই রয়েছে বাংলাদেশ, যেখানে নিজের ব্যয় ৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া পাকিস্তানে ৫৭ দশমিক ৫০ শতাংশ, নেপালে ৫১ দশমিক ৩০ শতাংশ, ভারতে ৪৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, শ্রীলংকায় ৪৩ দশমিক ৬০ শতাংশ, ভুটানে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ চিকিৎসা ব্যয় নিজেকেই বহন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে নিজের খরচ সবচেয়ে কম মালদ্বীপে— ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ।

বিভিন্ন রোগের পেছনে খরচের তথ্য তুলে ধরে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ক্যানসারের পেছনে— গড়ে দুই লাখ ২৩ হাজার ৯৩৮ টাকা। কোভিডের সময় কোভিডের পেছনে গড়ে খরচ হয়েছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৭০৯ টাকা। এ ছাড়া হৃদরোগের জন্য গড়ে ৯৯ হাজার ৭১৫ টাকা, যকৃতের (লিভার) অসুস্থতায় ৭৮ হাজার ৯৪৩ টাকা ও জন্ডিসের পেছনে খরচ হয় ৭৬ হাজার ৪৫৩ টাকা। সবচেয়ে কম খরচ হয় জ্বরের কারণে।

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘একজন রোগী হাসপাতালে গেলে মানুষের পকেট থেকে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ওষুধ কিনতে। এরপর অস্ত্রোপচারে ২৩ শতাংশ, ডায়াগনস্টিকে ১৭ শতাংশ, বেড চার্জ বাবদ ১৬ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় হয় ১৪ শতাংশ। মানুষ ওষুধ কিনতে যে ব্যয় করে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় ফার্মেসিতে। স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত ব্যয় করতে গিয়ে মানুষ দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে হেলথ ইনস্যুরেন্স করা প্রয়োজন।’

সেমিনারে প্রধান অতিাথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমি স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন করব। এটি আমরা জন্য চ্যালেঞ্জ। এই আইনের মাধ্যমে রোগী ও চিকিৎসক সব পক্ষকে সুরক্ষা দেওয়া আমার দায়িত্ব। স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা অনেক। সব রাতারাতি শেষ হবে না। তবে আমি চেষ্টা করছি। এ ক্ষেত্রে সবার সহায়তা লাগবে। মানুষের পকেট থেকে যেন বেশি টাকা খরচ না হয়, সে জন্যই হেলথ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করব। এর কাজ চলছে। ভারতের মোদি কেয়ারের মতো কিছু করা যায় কি না, সেটিও ভাবা হচ্ছে। তবে একটু সময় লাগবে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কখনো ভাবিনি মন্ত্রী হব। এখন দায়িত্ব পাওয়ার পর স্বাস্থ্য খাতের অনেক বিষয় নিয়েই জানতে হচ্ছে। তবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে না পারলে ঢাকায় বসে যতই লেকচার দিই, লাভ হবে না। এজন্য গ্রামের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে আগে কাজ করছি। অবৈধ ফার্মেসি দমনে ড্রাগের মহাপরিচালককে শক্ত ভূমিকা নিতে হবে।’

বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে সরকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে। শহরেও প্রতিটি ওয়ার্ডে এ রকম কমিউনিটি ক্লিনিক থাকা দরকার, যেন মানুষ প্রাথমিক চিকিৎসা পেতে পারে কম খরচে। চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ কমপক্ষে জিডিপির ৫ শতাংশ হওয়া উচিত।’

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

টপ নিউজ ডা. সামন্ত লাল সেন বিআইডিএস স্বাস্থ্য খাত স্বাস্থ্য ব্যয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর