স্থান পেলেন ৪ নারী উপদেষ্টা, অন্তর্বর্তী সরকারে এবারই সর্বোচ্চ
৮ আগস্ট ২০২৪ ২৩:৩৯
ঢাকা: শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের চার দিনের মাথায় শপথ নিয়েছে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এই সরকারে উপদেষ্টা রয়েছেন ১৬ জন। ১৭ সদস্যের এই অন্তর্বর্তী সরকারে চারজন নারী উপদেষ্টা জায়গা পেয়েছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নামে এবারই প্রথম সরকার গঠন হলেও দুই নির্বাচিত সরকারের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য এর আগেও চারটি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ছয়বার অনির্বাচিত সরকার দায়িত্ব পালন করেছে। সেগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে পরিচিত ছিল। এর মধ্যে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারে কোনো নারী সদস্যই ছিলেন না। বাকি পাঁচটি সরকারের মধ্যে ২০০৬ সালে ড. ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে নারী ছিলেন তিনজন। আর মাত্র একজন করে নারী উপদেষ্টা স্থান পেয়েছিলেন বাকি চারটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারে।
এই হিসাব বলছে, এবারই প্রথম অন্তর্বর্তী কোনো সরকারে এত বেশি নারী সদস্য স্থান পেয়েছেন। অবশ্য ১৯৯০ সালের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিলে বাকি সবগুলো সরকারই ছিল ১১ সদস্যের। অর্থাৎ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপদেষ্টা ছিলেন ১০ জন করে। সে হিসাবে অবশ্য এবারের অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টা বাদ দিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যে নারী সদস্য ২৫ শতাংশ। আর ড. ইয়াজউদ্দিনের সরকারে উপদেষ্টাদের মধ্যে নারী ছিলেন ৩০ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত সোয়া ৯টার দিকে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয় রাষ্ট্রপতির কাছে। তবে এখনো উপদেষ্টাদের মধ্যে দফতর বণ্টন করা হয়নি। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এবরেরটাসহ অন্তর্বর্তী বা তত্ত্বাবধায়ক কোন সরকারে নারীরা কে কে ছিলেন—
অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৪
ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকারে নারী উপদেষ্টা রাখা হয়েছে চারজনকে। তারা হলেন— সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, ফরিদা আখতার, নুরজাহান বেগম ও শারমিন মুরশিদ।
চারজনের মধ্যে সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান সুপরিচিত আইনজীবী ও পরিবেশ অধিকার কর্মী। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী প্রধান হিসেবে রয়েছেন তিনি। অন্যদিকে শারমীন মুরশিদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
ফরিদা আখতার একাধারে লেখক, গবেষক, মানবাধিকার কর্মী। বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন তিনি। আর নুরজাহান বেগম গ্রামীণ ব্যাংকের যাত্রা শুরুর সময়কার একজন। এর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। বর্তমানে গ্রামীণ শিক্ষার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৯৯০
গণআন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ৯ ডিসেম্বর গঠন করা হয় ১৮ সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন এই সরকারে কোনো নারী উপদেষ্টা ছিলেন না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৯৯৬
১৯৯৬ সালের ৩ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১০ জন উপদেষ্টাকে নিয়ে গঠন করা হয় ১১ সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ সরকারে স্থান পাওয়া একমাত্র নারী উপদেষ্টা ড. নাজমা চৌধুরী। তার দায়িত্বে ছিল শ্রম ও জনশক্তি, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০১
২০০১ সালের জুলাইয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১১ সদস্যের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। ওই সরকারেও নারী উপদেষ্টা ছিলেন একজন— রোকেয়া আফজাল রহমান। মহিলা ও শিশুবিষয়ক, সমাজকল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৬
২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। ওই সময় রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ নিজেই প্রধান উপদেষ্টা হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। এই সরকারে নারী উপদেষ্টা ছিলেন তিনজন।
এর মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দায়িত্বে ছিলেন সুফিয়া রহমান। মহিলা ও শিশুবিষয়ক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং সমাজকল্যাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ইয়াসমিন মুরশেদকে। আর সুলতানা কামালের অধীনে ছিল শিল্প, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭
ড. ইয়াজউদ্দিনের পর জরুরি অবস্থার মধ্যেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ। এই সরকারে একমাত্র নারী উপদেষ্টা ছিলেন গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী। তার দায়িত্বে ছিল শিল্প, বস্ত্র ও পাট, সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮
প্রায় এক বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারে পরিবর্তন আসে। এবারও এই সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন ড. ফখরুদ্দীন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রাশেদা কে চৌধুরী ছাড়া এই সরকারেও আর কোনো নারী উপদেষ্টা ছিলেন না।
সারাবাংলা/আরএফ/টিআর