শেখ হাসিনার প্রথম বার্তা— ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের আহ্বান
১৩ আগস্ট ২০২৪ ২২:১১
আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এক বার্তায় তিনি জুলাই মাস থেকে ‘আন্দোলনের নামে নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতা’য় প্রাণহানিতে শোক জানিয়েছেন। এসব ‘নাশকতা’য় জড়িতদের বিচারও দাবি করেছেন। পাশাপাশি ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি তথা বঙ্গবন্ধু ভবন পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়ার ঘটনারও বিচার দাবি করেছেন দেশবাসীর কাছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) রাতে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এ কথা জানিয়েছে। শেখ হাসিনার একটি বক্তব্যই তিনি তার ফেসবুকে পোস্ট করেছেন। ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগের পর দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর থেকে আজকের আগ পর্যন্ত তার আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথা বলে আসছিলেন।
এর মধ্যে গত রোববার ভারতের গণমাধ্যম দ্য প্রিন্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে দাবি করা হয় যে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো কথা বলেছেন। শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, তার সরকারের পতন হওয়ার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ষড়যন্ত্র’ ছিল। শিগগিরই দেশে ফেরার প্রত্যয়ও জানান তিনি।
পরে অবশ্য সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগের আগে বা পরে কোথাও কোনো বক্তব্য দেননি। আজ জয় নিজেই তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে শোক দিবস পালনের আহ্বান সম্বলিত শেখ হাসিনার বার্তা প্রচার করেছেন। সে অনুযায়ী পদত্যাগের পর এটিই শেখ হাসিনার প্রথম কোনো বার্তা।
আরও পড়ুন-
- মায়ের যে বক্তব্য ছাপা হয়েছে, তা বানোয়াট: জয়
- অন্তর্বর্তী সরকারকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার আহ্বান গুতেরেসের
- বাংলাদেশে সরকার পতনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ মিথ্যা: যুক্তরাষ্ট্র
- যুক্তরাষ্ট্রের ‘ষড়যন্ত্রে সরকার’ পতন, শিগগিরই ফিরব: শেখ হাসিনা
বক্তব্যে দেশবাসীকে সালাম জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একই সঙ্গে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা; আমার তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও শেখ রাসেল; এবং কামাল ও জামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার ছোট ভাই, যার বয়স মাত্র ১০ বছর ছিল, সেই শেখ রাসেলকেও নির্মমভাবে হত্যা করে।’
শেখ হাসিনা লিখেছেন, ‘আমার একমাত্র চাচা মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু শেখ নাসের, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন, পুলিশ অফিসার সিদ্দিকুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনির প্রতি। কৃষিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১০ বছরের ছেলে আরিফ, ১৩ বছরের মেয়ে বেবি, চার বছরের নাতি সুকান্ত, ভাইয়ের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শহিদ সেরনিয়াবাত, ভাগনে রেন্টুসহ অন্যান্য অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৫ আগস্ট যারা শাহাদাত বরণ করেছেন, তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শহিদদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।’
যে ছাত্র আন্দোলনের জের ধরে পদত্যাগ করতে হয়েছে, সেই আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ, এমনকি অন্তঃসত্তা নারী পুলিশ, সাংবাদিক, সংস্কৃতিসেবী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, পথচারী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমার মতো যারা বেঁচে আছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। আমি এই হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।’’
৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়ি তথা বঙ্গবন্ধু ভবন ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে যে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছিল, সেই স্মৃতি বহনকারী বাড়িটি আমরা দুই বোন বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেছিলাম। গড়ে তোলা হয়েছিলো স্মৃতি জাদুঘর। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা এই বাড়িতে এসেছেন। স্বাধীনতার স্মৃতি বহনকারী এই জাদুঘরটি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, যে স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে আপনজন হারাবার সব ব্যথা-বেদনা বুকে চেপে রেখে বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রিয় দেশবাসী আপনাদের সেবা করে যাচ্ছি— যার শুভ ফলও আপনারা পেতে শুরু করেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে— আজ তা ধূলিস্মাৎ হয়ে গেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর যে স্মৃতিটুকু আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল, তা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। চরম অবমাননা করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি, আত্মপরিচয় পেয়েছি, স্বাধীন দেশ পেয়েছি। লাখো শহিদের রক্তের প্রতি অবমাননা করেছে। আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দিন ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কাছে আবেদন জানাই, যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট পালন করুন। বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া-মোনাজাত করে সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল করুন। খোদা হাফেজ। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
এদিকে শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের আহ্বান জানালেও দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই দিবসে সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে। মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।
সারাবাংলা/টিআর