শেখ হাসিনা-কাদেরসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে সাংবাদিক হত্যা মামলা
১৮ আগস্ট ২০২৪ ১৫:৩৮
রংপুর: রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফ্রিল্যান্স ফটো সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আবু তাহিরের নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে সকালে রংপুর মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলা দায়ের করেন তাহিরের বাবা আব্দুর রহমান। আদালত মামলা গ্রহণ করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকেলে আব্দুল্লাহ আল তাহির গুলিতে নিহত হন।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পরাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, সাবেক পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পাল, এডিসি ক্রাইম উৎপল কুমার রায়, এডিসি নুর ইসলাম পাটোয়ারী, কোতয়ালী থানার ইনচার্জ মোন্তাসির বিল্লাহকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ কে এম ছায়াদত হোসেন বকুল, যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বাবুল, রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হক প্রামানিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল, সাবেক সংরক্ষিত এমপি নাছিমা জামান ববি, রংপুর সিটি করপোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল ইসলাম, ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল আলম, ৩০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা, ২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইঞ্জিনিয়ার শাহাদৎ হোসেন, ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান, ২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কানা হারুন, সাবেক কাউন্সিলর ইদ্রিস আলী, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, জেলা যুবলীগের সভাপতি লক্ষণ চন্দ্র দাস, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি, জেলা যুবলীগের নেতা ডিজেল আহমেদ, ২৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ সনু, স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য মানিক, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি শাহজানুর রহমান সৌরভ, সাধারণ সম্পাদক রিপন বাবু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির হোসেন, সাধারণ সম্পাদক তনিম আহসান চপল, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আসিফ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য মামুন।
এর আগে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মনিরুজ্জামানসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী। মামলাটি গ্রহণ করার জন্য তাজহাট থানাকে নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক রাজু আহমেদ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ। আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন।
মামলার বাদীর আইনজীবী রায়হান কবীর ও রোকনুজ্জামান জানান, মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল, প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার রায়, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ জনকে।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান, আল ইমরান হোসেন, তাজহাট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির আলী ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়।
আসামিদের মধ্যে রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিইজি আবদুল বাতেন ও সাবেক পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামানকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। আর রবিউল ইসলাম, আমির আলী ও সুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সারাবাংলা/একে