Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিএনপিতে নাম– এ অপরাধে ৯ বছর হেনস্থার শিকার চিকিৎসক!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:২২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিএনপির কমিটিতে নাম ছিল– এ ‘অপরাধে’ হেনস্থার শিকার এক চিকিৎসক নয় বছর পর বিচারের আশায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। আদালতে মামলার আবেদনে তিনি অভিযোগ করেছেন, পুলিশ তাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। এরপর তাকে ‘মিথ্যা অভিযোগে’ একটি মামলায় ফাঁসিয়ে গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে অকথ্য নির্যাতন করে।

নয় বছর ধরে সেই মিথ্যা মামলার বোঝা টেনে নেওয়ার পর সম্প্রতি তিনি আইনি প্রক্রিয়ায় দায়মুক্ত হয়েছেন। এর পর সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ঘটনার শিকার চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রামের ষষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলার আবেদন করেন। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) আদালত মামলার আবেদনটিকে সরাসরি এজাহার হিসেবে নেওয়ার জন্য রাউজান থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

মামলায় তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- রাউজান থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, উপ-পরিদর্শক (এসআই) টোটন মজুমদার ও শাফায়েত আহমদ, রাউজানের বেসরকারি পাইওনিয়ার হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ফজল করিম বাবুল, পরিচালক মনজুর হোসেন এবং সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর আলম।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করা জাহাঙ্গীর আলম নবজাতক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে চট্টগ্রামে সুপরিচিত। ঘটনার সময় তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ার পথেরহাট এলাকায় অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যক্তিগত চেম্বার পরিচালনা করতেন। বাড়িও নোয়াপাড়া গ্রামে।

বিজ্ঞাপন

মামলার আবেদনে জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেছেন, বিএনপির কমিটিতে নাম থাকায় রাউজান থানার এসআই টোটন মজুমদার তাকে ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দিয়ে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে রাউজান থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই টোটন মজুমদার ও শাফায়েত আহমদ পথেরহাটে ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়ে অপহরণ করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন।

হেনস্থার ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল বেলা ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরকে তার চেম্বার থেকে সাদা পোশাকে জোর করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নেয় পুলিশ। এ সময় এসআই টোটন মজুমদার তার মাথায় পিস্তল রেখে তাকে চিৎকার করতে নিষেধ করেন। অভিযুক্তরা জাহাঙ্গীরকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়ে মারধর করেন। এরপর রাত ১০টার দিকে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

থানায় বসে জাহাঙ্গীর জানতে পারেন, তার বিরুদ্ধে ১১ দিন আগে অর্থাৎ ৪ এপ্রিলে সংঘটিত এক ঘটনার অভিযোগ এনে একটি মামলা করা হয়েছে। পথেরহাটের পাইওনিয়ার হাসপাতালের সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে চিকিৎসক জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। এতে হাসপাতালটির গাড়িচালক রাসেলের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করা হয়। ১৫ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে দায়ের হওয়া ওই মামলায় জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

ওই বছরের ২৩ মে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। আদালত বিচার নিষ্পত্তির জন্য ১৮ জুন মামলাটি রাউজানে গ্রাম আদালতে পাঠান।

এদিকে ওই বছরের ১৭ জুন কথিত ভিকটিম মো. রাসেল আদালতে হলফনামা দাখিল করে উল্লেখ করেন, প্রকৃতপক্ষে ওই ঘটনার তারিখে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে তার দেখা হয়নি বা এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বাদী কেন ওই মামলাটি করেছেন, সেটা তার জানা নেই। এ বিষয়ে তার কোনো ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনোরকম জিজ্ঞাসাবাদও করেনি।

নয় বছর পর ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট পাইওনিয়ার হাসপাতালের সুপারভাইজার অর্থাৎ মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম আদালতে দাখিল করা আরেকটি হলফনামায় উল্লেখ করেন, টোটন মজুমদার, শাফায়েত আহমদ ও প্রদীপ কুমার দাশের আদেশে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চাপে পড়ে মিথ্যা মামলায় বাদী হিসেবে তিনি যুক্ত হয়েছিলেন। ওই মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করলে তার কোনো আপত্তি থাকবে না। এর পর ২৯ আগস্ট গ্রাম আদালতে মামলাটি খারিজ করা হয় এবং চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়।

মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলমের আইনজীবী নাজমুল হাসান ছিদ্দিকী সারাবাংলাকে বলেন, ‘মোট ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছিল। আদালত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আনীত অপরাধের অভিযোগ আমলে নিয়ে আবেদনটিকে সরাসরি মামলা হিসেবে গ্রহণের জন্য রাউজান থানাকে আদেশ দিয়েছেন।’

নয় বছর ধরে হেনস্থার শিকার চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নিরাপরাধ। শুধুমাত্র বিএনপির একটি কমিটিতে আমার নাম ছিল, সেটাই ছিল আমার অপরাধ। এজন্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রোষানলের শিকার হয়েছিলাম। পুলিশ আমাকে নানাভাবে মামলা, হয়রানি, প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে মানসিক এবং পরবর্তীতে শারীরিক নির্যাতন করেছিল। আমার আয়-রোজগার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল আমাকে রোগী দেখার সময় চেম্বার থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। এর পর নয় বছর চার মাস আমার চেম্বার বন্ধ করে রাখা হয়। রাজনৈতিক কারণে কেউ যেন আমার মতো আর নির্যাতনের শিকার না হয়, সেজন্য আমি আদালতের কাছে বিচার চেয়েছি।’

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

চিকিৎসক টপ নিউজ নয় বছর বিএনপি হেনস্তা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর