Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে চসিক কার্যালয় ঘেরাও শিক্ষকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চাকরি স্থায়ী করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) পরিচালিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। একইসঙ্গে তারা বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিও করেছেন।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নগরীর টাইগারপাসে চসিক কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে অস্থায়ী শিক্ষকরা তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।

এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় চসিক পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ২৫০ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কার্যালয় ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় তারা ‘দফা এক দাবি এক, চাকরি স্থায়ীকরণ করতে হবে, বেতন বৈষম্য নিপাত যাক’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।

জানা গেছে, বিক্ষোভের মধ্যে চসিক প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কার্যালয়ের ভেতরে ছিলেন। বেতন বৃদ্ধি ও পদায়নের আশ্বাস পেয়ে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষকরা চসিক কার্যালয় ত্যাগ করলে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বের হন।

বিক্ষোভ সমাবেশে অপর্ণাচরণ সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা খাইরুন্নেসা খানম বলেন, ‘আমাদের একটাই দাবি, সেটা হচ্ছে চাকরি স্থায়ীকরণ। আমরা চাই, আমাদের নায্য অধিকার ও মান-মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হোক। আমরাও স্থায়ী শিক্ষকদের মতো স্কুলে ক্লাস ও পরীক্ষা নিই। তবুও আমরা চরম বৈষম্যের শিকার। এজন্য আমাদের আত্মার শান্তি মেলে না।’

তিনি বলেন, ‘এতগুলো পুরুষ শিক্ষক এখানে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের পরিবারের দিকে একবার তাকিয়ে দেখুন। আমরা না হয় শিক্ষিকারা স্বামীর আয়ে কোনোভাবে সংসার চালিয়ে নিতে পারি। কিন্তু অল্প বেতনে তারা কীভাবে সংসার চালায়। তারা তাদের সন্তানদের ভালো খাবার, কাপড় দিতে পারে না। ভালো স্কুল-কলেজে ভর্তি করাতে পারে না। আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করলে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’

বিজ্ঞাপন

পাঠানটুলী খান সাহেব সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক শারমিন সুলতানা বলেন, ‘আজ এখানে শুধুমাত্র ২৩৯ জন শিক্ষক বা শিক্ষিকা দাঁড়িয়ে নেই। তাদের সঙ্গে ২৩৯টি পরিবারও দাঁড়িয়ে আছে। এসব পরিবারের বোবাকান্না নিয়ে আমরা এসেছি। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পায় আমরাও সেগুলো যাতে পাই সে দাবি নিয়ে এখানে দাঁড়িয়েছি।’

‘সিটি করপোরেশনের সব বিভাগে পদায়ন হলেও শিক্ষা বিভাগে কর্মরত শিক্ষকরা সবসময় বঞ্চিত হয়ে আসছি। অনেক বড় প্রহসন করা হয়েছে আমাদের সঙ্গে। আমরা ১৭ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কীভাবে চলতে পারি সেটা জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন। ২৩৯টি পরিবারের যে কষ্ট ও হাহাকার সেটা কি আপনারা দেখছেন না। আমরা কোনো দান চাইতে এখানে আসিনি, আমরা আমাদের অধিকার চাইতে এসেছি।’

সরাইপাড়া সিটি করপোরেশন স্কুলের শিক্ষক মো. আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ বছর ধরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সিটি করপোরেশনে স্কুলগুলোতে আমরা নিয়োগ পাওয়ার পরও আমাদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়নি। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী চাকরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত যেকোনো ব্যক্তি দুই বছর শিক্ষানবিশকাল কাটানোর পর তার চাকরি স্থায়ী করতে হয়। এটাই নিয়ম।’

তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশনে অনেক বিভাগ আছে। সব বিভাগেই চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষা বিভাগে সেটা করা হয় না। ২০১১ সালের পর কোনো শিক্ষককে স্থায়ীকরণ করা হয়নি। এর মধ্যে দুই থেকে তিনশ শিক্ষক অবসরে গিয়েছেন। তাদের শূন্যপদগুলোতে নিয়োগ পাওয়ার পরও আমাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি।’

এদিকে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে চসিক সচিব আশরাফুল আমিন সমবেত শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘বেতন বৃদ্ধি ও পদায়নের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট হবে। আপনারা দ্বিতীয় শ্রেণির গ্রেডের চাকরিজীবী সেটাও উল্লেখ করা থাকবে রিপোর্টে। আপনারা জানেন, সিটি করপোরেশনে সিদ্ধান্ত নিলে সাধারণ সভায় পাশ হতে হয়। যেহেতু সাধারণ সভা হচ্ছে না তাই আপনাদের যে অন্যান্য দাবি আছে সেদিক দিয়ে আমরা আপাতত যেতে পারছি না।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘সেগুলো করতে হলে সাধারণ সভার অনুমতি লাগবে। মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে আপনাদের যে যৌক্তিক দাবি আছে সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করব। বিশেষ করে আপনাদের চাকরি স্থায়ী করার বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করব।’

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

চসিক চাকরি টপ নিউজ দাবি স্থায়ীকরণ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর