এক যুগ পর মধ্যনগর-বাঙালভিটা সড়ক পুনর্নিমাণ, হাওরে উচ্ছ্বাস
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:২০
সুনামগঞ্জ: হাওর জনপদে আশার আলো হয়ে এসেছিল সড়কটি। তবে নির্মাণের পর সড়কের সুফল খুব বেশি দিন ভোগ করতে পারেননি স্থানীয়রা। কয়েক বছরের মধ্যে ঢেউয়ের আঘাতে সড়কের বেশির ভাগ অংশ ধ্বসে পড়ে। টিকে থাকা সড়কটুকুও পরিণত হয় ভোগান্তির নামান্তরে।
এমন অবস্থায় কেটে গেছে প্রায় অর্ধযুগ। শেষ পর্যন্ত নির্মাণের এক যুগ পর এসে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার মধ্যনগর থেকে মহিষখলা ভায়া বাঙালভিটার ২৫ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নিমাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ কাজে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর বরাদ্দ পেয়েছে প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা। তিনটি প্যাকেজে দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে সড়কটি পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন অধিদফতরের প্রকৌশলীরা।
এদিকে মধ্যনগর-বাঙালভিটা সড়ক পুনর্নিমাণের খবরে মধ্যনগর উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উচ্ছ্বসিত। তারা বলছেন, সড়কটির কাজ শেষ হলে উপজেলার যোগাযোগব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। কয়েক লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দেশের সবচেয়ে দুর্গম হাওর জনপদ হিসেবে পরিচিত এলাকাটি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় জানিয়েছে, সড়কটি পুনর্নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। চলতি অর্থবছরে এর জন্য প্রায় আড়াই শ কোটি টাকা বরাদ্দে তিনটি প্যাকেজে এই সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হবে। এরই মধ্যে মহিষখলা থেকে বাঙালভিটা পর্যন্ত একটি প্যাকেজের কাজ শুরু হয়েছে। মধ্যনগর থেকে চামরদানী ও চামরদানী থেকে মহিষখলা পর্যন্ত বাকি দুটি প্যাকেজের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন।
২০১০-১১ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যনগর-মহেষখলা সড়কটি নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছরের মধ্যে ঢেউয়ের আঘাতে সড়কের বেশির ভাগ অংশ ধসে পড়ে।
সরেজমিনে সড়কটির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা গেছে, মধ্যনগর উপজেলার একমাত্র অলওয়েদার ও সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ সড়কটি ইট বিছানো। এমনিতেই ভাঙাচোরা সড়কটি এ বছর বন্যায় আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়কটি। দুই পাশে হাওর থাকায় ঢেউয়ের তোড়ে কোথাও কোথাও সড়ক ভেঙে বিলীন হয়েছে হাওরে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সড়কের ইট। সেতু ও কালভার্টের উভয় পাশ থেকে সরে গেছে মাটি। অনেক স্থানে সেতু বা কালভার্ট পুরো সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় লক্ষাধিক মানুষকে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর, বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ও চামরদানি ইউনিয়নের জনগণ এই সড়ক ব্যবহার করে মধ্যনগর উপজেলা সদরে যাতায়াত করেন। ওই তিন ইউনিয়নের জনগণ ছাড়াও পাশের তাহিরপুর উপজেলার হাজারও মানুষ চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। সড়কটি পুনর্নিমাণ হলে এসব মানুষের দীর্ঘ ভোগান্তি লঘব হবে।
সড়কটি পুনর্নির্মাণের কাজ শুরুর প্রস্তুতি দৃশ্যমান হওয়ায় ভোগান্তি পোহানো মানুষদের মুখে হাসি ফুটেছে। তবে একটি প্যাকেজ নয়, সড়ক নির্মাণের তিনটি প্যাকেজের কাজই তারা একযোগে ও দ্রুত শুরুর তাগিদ দিয়েছেন। পাশাপাশি তাদের দাবি— কাজের গুণগত মান যেন অক্ষুণ্ন থাকে, কাজের গতিও যেন ধীর না হয়ে যায়।
বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের কালাগড় গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন, এটি উপজেলার সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। শুনেছি সড়কের পুনর্নির্মাণে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, সবটুকু সড়কের কাজ দ্রুত শুরু করুন। বছরের পর বছর আমরা এই সড়কের কারণে যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি, তার অবসান ঘটুক।
উপজেলার চামরদানী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আলমগীর খসরু বলেন, মধ্যনগর উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হবে। শুনেছি তিনটি প্যাকেজে কাজ হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ, একসঙ্গে তিনটি প্যাকেজের কাজ শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। কাজের গতি বাড়িয়ে চারটি ইউনিয়নের মানুষের চলমান দুর্দশা দ্রুত লাঘব করা উচিত।
মধ্যনগর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী শাহাব উদ্দিন বলেন, মধ্যনগর থেকে মহিষখলা সড়কটি উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক। প্রায় ২৫ কিলোমিটার এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে নতুন ব্রিজ-কার্লভার্ট নির্মাণ করতে হবে। আশা করা যায়, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই পুরোপুরিভাবে সড়কের কাজ শেষ হবে। এতে করে মধ্যনগর উপজেলাবাসীর যোগাযোগব্যবস্থার সবচেয়ে বড় দুর্ভোগের স্থায়ী অবসান ঘটবে।
সারাবাংলা/টিআর
মধ্যনগর-বাঙালভিটা সড়ক সড়ক পুনর্নির্মাণ সুনামগঞ্জ হাওর হাওরে সড়ক