Thursday 12 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হঠাৎ বৃষ্টিতে পানিবন্দি, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে নাকাল নগরবাসী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২ অক্টোবর ২০২৪ ২৩:২৮ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৫৯

বৃষ্টিতে পানি জমে গেছে মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে। ছবি: ফেসবুক থেকে

ঢাকা: সন্ধ্যায় হঠাৎ বৃষ্টি। কোথাও মাঝারি, কোথাও ভারী। তাতেই রাজধানীর অনেক এলাকায় জমে গেছে পানি। অলিগলি তো বটেই, প্রধান প্রধান সড়কেও পানি উঠেছে। পানিতে ডুবেছে বাসাবাড়ির গ্যারেজ, বেজমেন্টেও।

এদিকে বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে আঘাত হানে ঝড়ও। এতে বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মতিঝিল, গোপীবাগ, মানিকনগর এলাকায় কমপক্ষে তিন ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ নেই বলে নগরবাসীরে অভিযোগ। বিতরণ সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, আকস্মিক ঝড়ে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেগুলোর মেরামতে কাজ চলছে। মেরামত হলেই ফিরবে সংযোগ।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। সঙ্গে মেঘের তীব্র গর্জন। সন্ধ্যা ৭টার কিছু সময় পরে মুষলধারে বৃষ্টি নামে ঢাকার বুকে। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকালেও সারা দেশে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের আশঙ্কাও রয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যার পরপরই হালকা ঝোড়ো হাওয়া আর এক ঘণ্টারও কম সময়ের বৃষ্টিতে রাজধানীর মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে যায়। এতে বিপদে পড়েন কর্মজীবীরা। অফিস থেকে ফেরার পথে বৃষ্টির কবলে পড়ে নাকাল হয়েছেন তারা। কেউ কেউ ফেসবুকেও পোস্ট করছেন অভিজ্ঞতা।

বাংলামোটর এলাকায় একটি বেসরকারি ব্যংকে কাজ করেন ফরহাদ হোসেন। সন্ধ্যা ৬টায় বের হয়ে কারওয়ান বাজার স্টেশন থেকে মেট্রোরেলে চড়ে মতিঝিলে নামে। ব্যাংক কর্মকর্তা ফরহাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ মেট্রো থেকে নামতেই দেখি হাঁটু পানি। কোথাও একটু কম, কোথাও একটু বেশি। সেই পানি পেরিয়ে বাসায় ঢুকতে দেখি বেজমেন্টেও পানি ঢুকে পড়েছে।’

বিজ্ঞাপন

টিকাটুলির বাসিন্দা সুমাইয়া নাঈমের অফিস গুলশান। বেসরকারি এই চাকরিজীবী বলেন, ‘গুলশান থেকে টিকাটুলি আসাটা ছিল যুদ্ধের মতো। পুরা হাটখোলা ছিল পানির নিচে। বলা যায়, রীতিমতো নদী ডিঙিয়ে ফিরতে হয়েছে।’

সাংবাদিক মোহসিনুল করীম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বুধবারের বৃষ্টিতে মতিঝিল মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে হাঁটুর ওপরে পানি। রাত সোয়া ৯টায়।’

পানি জমে যাওয়া মেট্রো স্টেশন থেকে নামার মুখেই বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। ছবি: ফেসবুক থেকে

পানি জমে থাকার খবর পাওয়া গেছে কাকরাইল, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, রাজারবাগ এলাকা থেকেও। মৌচাক মার্কেটে পানি ঢুকে পড়ায় আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মা টেইলার্সের মালিক আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘কদিন আগেও বৃষ্টিতে নিচতলা ডুবে যাওয়ায় পানি নামার অপেক্ষা করতে হয়েছে মাঝ রাত পর্যন্ত। সে জন্য আজ আগেভাগেই বন্ধ করে বেরিয়ে এসেছি।’

এদিকে বৃষ্টিতে রাজধানীর কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় সাড়ে তিন ঘণ্টাতেও বিদ্যুত ফেরেনি।

গোপীবাগ আর কে মিশন রোডের বাসিন্দা সুকুমার মিত্র সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাড়ে তিন ঘণ্টা হলো বিদ্যুৎ নেই। আইপিএসের সাপোর্টও শেষ হয়ে গেছে।’ একই ভবনের বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ঘরে ছোট বাচ্চা আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় ভীষণ অসুবিধায় পড়েছি।’

কেউ কেউ বিদ্যুৎ না থাকার অভিজ্ঞতাও ফেসবুকে লিখেছেন। নারায়ণগঞ্জ থেকে তন্ময় দাস লিখেছেন, সেখানেও দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ নেই। ঢাকার বাসিন্দা নাজমুল হক লিখেছেন, বিদ্যুৎ আসা আর যাওয়ার মধ্যেই রয়েছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সারা দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। ওই সময়ে ১৩ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদা ও সরবরাহে যে ১৫০০ মেগাওয়াট ঘাটতি, তা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। তবে তার প্রভাব খুব বেশি প্রভাব পড়ার কথা নয়। বরং তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা বিদুৎ না থাকার যে খবর, তার নেপথ্যে রয়েছে ঝড়বৃষ্টি। কোথাও বিদ্যুতের তার ছিড়ে গেছে, কোথাও ট্রান্সফরমার ব্লাস্ট হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিতরণ সংস্থা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরাতে কাজ চলমান। কিছু সময়ের মধ্যেই ক্লিয়ার হবে।’

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় দেওয়া আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ তৈরির সম্ভাবনাও রয়েছে।

পূর্বভাসে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সারাদেশে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। আবার শুক্রবারও (৪ অক্টোবর) ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ময়মনসিংহ, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

জলাবদ্ধতা বিদ্যুৎ বিভ্রাট বৃষ্টি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর