‘বিরাজনীতিকরণ ও মাইনাস টু দেখতে চাই না’
৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:৩৭
ঢাকা: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা কোনো বিরাজনীতিকরণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আবার মাইনাস টু দেখতে চাই না। আমরা আবার এই মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদকে দেখতে চাই না, সন্ত্রাসকেও দেখতে চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থে দেশে একটা সুস্থ উদারপন্থী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চাই।
তিনি বলেন, তার জন্যে আমরা তাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) হাতেই দায়িত্ব দিয়েছি। আমরা মনে করেছি যে, এরা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা) যোগ্য মানুষ, তারা তাদের কাজ করছেন। তাদের অতি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক শিক্ষক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে এ শিক্ষক সমাবেশ আয়োজন করে বিএনপিন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ‘শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোট’। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে সারা দেশে থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এই সমাবেশে যোগ দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সাহেবের নেতৃত্বে যে সরকার, সেই সরকারকে অবশ্যই সময় দিচ্ছি, সময় দেবো। কিন্তু বারবার প্রশ্ন আসে যে, কতদিন সময় দেবেন? আমরা সেই পর্যন্ত সময় দেব, যে পর্যন্ত একটা যৌক্তিক সময়ে তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেন। আমরা বিশ্বাস করি, রাজনীতি করি, আন্দোলন করেছি, জান দিয়েছি, প্রাণ দিয়েছি একটা লক্ষ্যে যে, আমরা জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যারা এতদিন জনগণের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে, যারা দুর্নীতি করেছে, যারা লুটপাট করেছে, সেই ভূতেরা কিন্তু এখনও প্রশাসনের মধ্যে আছে। এই ভূতগুলোকে দূর করতে হবে। নইলে আপনারা কোনো কিছু করতে সক্ষম হবেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কখনোই ব্যর্থ হইনি, আমরা ’৫২ সালে জয়ী হয়েছি, ’৬৯ এ জয়ী হয়েছি, আমরা ’৭১ জয়ী হয়েছি, আমরা ’৯০ জয়ী হয়েছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা ইনশাল্লাহ এবারও জয়ী হব।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জাতীয়করণ হলেই আপনাদের সব সমস্যার সমাধান আসবে না। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, যোগ্য মানুষকে নিয়ে আসতে হবে। আমাকে একটা কাগজ তুলে দিয়েছেন আপনাদের নেতা সেলিম ভুঁইয়া সাহেব। যেখানে লেখা, ম্যাডামের একটা ঘোষণা ছিল চাকরি জাতীয়করণ করার জন্য। ম্যাডামের ঘোষণা তো আমাদের জন্য শিরোধার্য।’
‘সেজন্য সরকারে আসতে হবে তো। সরকারের কখন আসতে পারবেন? জনগণ যদি ভোট দিয়ে পাঠায়। ভোট দেবে কখন? যখন আপনি জনগণের কাছে প্রমাণিত হবেন যে, আপনি যোগ্য, ৫ বছর তাদের সুষ্ঠুভাবে সেবা দিতে পারবেন, কাজ করতে পারবেন। কিন্তু আমরা সব ক্ষেত্রে কি সেটা করতে পারছি?’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘পত্র-পত্রিকায় বাইরে বিভিন্ন সমালোচনা হচ্ছে। এই সমালোচনা যাতে না হয় সেজন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা চাই না, যারা দুর্নীতি করে, চাঁদাবাজি করে, জমি দখল করে তারা বিএনপির লোক হোক; তারা দুর্বৃত্ত। দল থেকে কিছু লোকের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নিয়েছেন। এটা অব্যাহত থাকবে। আরেকটা কথা বলি, শিক্ষকদের দলকানা হলে চলবে না। দলীয় রাজনীতি থেকে তাদের একটু দূরে থাকতে হবে। তা না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কথাটা আপনাদের ভালো লাগবে না, আমি জানি। আওয়ামী লীগ যে অবস্থা তৈরি করে দিয়ে গেছে সেই পিয়ন থেকে গভার্নিং বডির প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের লোক। এই অবস্থা থেকে আমাদের বের করে নিয়ে আসতে হবে। বের করে নিয়ে এসে সুস্থ পরিবেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যাদের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, যারা শিক্ষিত, যারা কাজ করতে পারবেন- তাদের নিয়ে আসতে হবে। এটা যদি আপনারা মন থেকে করতে পারেন, তাহলে পরিবর্তন হবে, নইলে পরিবর্তন হবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি খুব আশাবাদী মানুষ। অনেকেই বলে যে কী হলো? বলি এই পর্যন্ত তো হলো, হাসিনা পালায়ে গেছে। এখন পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য কাজ করতে হবে। দরকার হলে আবার রাজপথে নামতে হবে। দরকার হলে আবার বুকে রক্ত দিতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এদেশের সত্যিকার অর্থে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করব।’
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চৌধুরী মূগিস উদ্দিন মাহমুদ, জাকির হোসেন প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম