গ্রেফতার ‘আতঙ্কে’ জি এম কাদের
৬ অক্টোবর ২০২৪ ২১:০০
ঢাকা: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে সরকার পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খুব বেশি সরব নেই আন্দোলন-পূর্ববর্তী জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে সরব থাকলেও রাজপথে বা অন্য কোথাও তেমন একটা উপস্থিতি দেখা যায়নি দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জি এম কাদের)।
দলের নেতাকর্মীরাই বলছেন, আন্দোলন ঘিরে দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে একাধিক হত্যা মামলায় আসামি হওয়ায় জি এম কাদের যেকোনো সময় গ্রেফতার হতে পারেন। এ কারণেই তিনি গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর যাত্রাবাড়ী থানার দুটি ও পল্টন থানার একটি হত্যা মামলায় আসামি করা হয় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহামুদকেও ওই সব মামলায় আসামি করা হয়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, কিশোর মাহমুদুল হাসান জয় ও মো. ওয়াসিম শেখ নামে দুজনকে হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা মামলায় আসামি করা হয় জি এম কাদেরকে। এর মধ্যে কিশোর জয় ৫ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়ে এবং ওয়াসিম গত ১৮ জুলাই কাজলা টোল প্লাজাসংলগ্ন রাস্তায় আন্দোলন চলাকালে এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। আদালতে মামলার আবেদন করা হলে বিচারক বাদীদের জবানবন্দি নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশ কর্মকর্তাকে অভিযোগ এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
এদিকে রাজধানীর বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকায় সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ সমাবেশে গুলি চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে কয়েকজন নিহত হন, আহত হন অনেকেই। এ ঘটনায় ১৯ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এসব মামলায় জি এম কাদেরকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে জন্য নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে মানববন্ধনেও জি এম কাদেরকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলা যখন হয়েছে, জি এম কাদেরকে গ্রেফতার করা হবে, সেটা কদিন আগেই হোক আর কদিন পরেই হোক।’
তবে মামলায় গ্রেফতার এড়াতে বসে নেই জাতীয় পার্টিও। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন জি এম কাদের। এর মধ্যে জি এম কাদেরের বাসায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে।
এ ছাড়া অন্তবর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন জি এম কাদের। বৈঠকে তারা বিগত সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিস্তরিত আলোচনা করেছেন। বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে তারা সংসদ ও সংসদের বাইরে সবসময় উচ্চকিত ছিলেন।
তবে দলের মধ্যেই জি এম কাদেরকে নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ‘আঁতাত’ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নেতাকর্মীরা বলছেন, সর্বশেষ তিন বারেই আওয়ামী লীগের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসন ভাগাভাগির জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেন জি এম কাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন জাতীয় পার্টি বর্জন করেছিল। কিন্তু আমাদের নেতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে চিকিৎসার নামে আটক করা হয়। আমাদের নেতার নির্দেশে আমরা ৩০০ আসনের মধ্যে ২৭০ জন নির্বাচন বর্জন করেছিলাম। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। আমরাও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। আমরা সঠিকভাবে বিরোধী দলের দায়িত্বও পালন করেছিলাম। সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছি। আর ২০২৪ সালে ব্ল্যাকমেইল করে আমাদের নির্বাচনে নেওয়া হয়েছিল। আসলে ২০১৪ সাল থেকে সরকারই জাতীয় পার্টির মধ্যে বিভাজন তৈরি করে রেখেছিল।
এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে জি এম কাদেরের মোবাইল নম্বরে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এই মুহূর্তে তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলছেন। তবে পরে ব্যক্তিগত সহকারীকে দিয়ে কল করিয়ে জি এম কাদের জানতে চান, কী বিষয়ে কথা বলতে চাই। ব্যক্তিগত সহকারী লায়েফকে জানানো হলেও পরবর্তী সময়ে আর সাড়া পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামলা হয়েছে জানি। জেলে যেতে হলে যাব। আমরা তো আওয়ামী লীগের অপকর্ম নিয়ে সংসদে কথা বলেছি। তারপরও গ্রেফতার হলে সবকিছু আইনিভাবেই মোকাবিলা করা হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে চুন্নু বলেন, জাতীয় পার্টি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায়। এ জন্য সংস্কারকাজ শেষ করতে সময় প্রয়োজন হলে আমাদের আপত্তি নেই। এর মধ্যে আমরা দল গুছিয়ে নেব।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর