Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাওর উন্নয়ন অধিদফতর— উদ্বোধনে দায় শেষ, কাজ ছাড়াই বসে ৮ বছর

আল হাবিব, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৩১

সুনামগঞ্জে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জ: হাওরের অর্থনীতিসহ হাওররবাসীর জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে গড়ে তোলা হয় ‘হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতর’। স্থানীয়দের দাবির মুখে এর একটি আঞ্চলিক কার্যালয় গড়ে তোলা হয় সুনামগঞ্জে। তবে অধিদফতরের ভবন নির্মাণ শেষ হলেও তা কাজে আসেনি। চার বছর পর উদ্বোধন হয় অধিদফতরের সেই আঞ্চলিক কার্যালয়! শুধু তাই নয়, কার্যালয় উদ্বোধনের পর আট বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো কার্যক্রমই শুরু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি!

বিজ্ঞাপন

হাওরবাসী বলছেন, অধিদফতরটি কার্যকর হলে তা তাদের নানাভাবে উপকৃত করার সম্ভাবনা রাখে। আর অধিদফতরের নিষ্ক্রিয়তার পেছনে লোকবলের সংকটকে দায়ী করছে কর্তৃপক্ষ।

সুনামগঞ্জবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলায় ‘হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরে’র আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয় ওই সময়কার সরকার। তবে শুরু থেকেই এটি নিয়ে এক ধরনের অবহেলা ছিল বলে অভিযোগ হাওরবাসীর। তারা বলছেন, ভবন নির্মাণের পর এটি পড়ে ছিল চার বছর। এরপর উদ্বোধনের হলেও এখন আট বছর চলে গেছে। কিন্তু কোনো কার্যক্রম নেই। যে প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি নিজ জেলায় চেয়েছিল হাওরবাসী, তার কিছুই পূরণ হচ্ছে না।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, হাওরের জেলা সুনামগঞ্জে বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয় ২০১০ সালে। এরপর সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় পাউবোর জায়গায় একটি ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তিনতলা এই ভবন নির্মাণে ব্যয় হয় এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়।

পাউবো ভবন বুঝে নেওয়ার জন্য হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরকে চিঠি দেয়। কিন্তু ভবনটি বুঝে নিতেই সময় চলে যায় চার বছর। এরপর ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আঞ্চলিক কার্যালয়টির উদ্বোধন করেন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ওই সময়কার মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এরপর আরও আট বছর পেরিয়ে গেলেও এর দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই।

সম্প্রতি ওই কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সুরমা নদীর তীরে নির্মাণ করা তিন তলা ভবনের নিচতলার অর্ধেক ও দ্বিতীয় তলায় রয়েছে অফিস। তৃতীয় তলায় গেস্ট হাউজ। কোনো কার্যক্রম না থাকায় দ্বিতীয় তলার দুটি কক্ষ অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো), সিলেট জেলা কার্যালয় হিসেবে। আরেকটি কক্ষ ব্যবহার করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একটি কক্ষে বসছেন হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের এই কার্যালয়ের দুই অফিস সহায়ক— বদিউল আলম ও উমায়ের হোসেন।

বিজ্ঞাপন

দুজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বদিউল এক বছর ও উমায়ের চার বছর ধরে এই অফিসে কাজ করছেন। কথা বলে জানা গেছে, অফিস দেখাশোনা ছাড়া তাদের তেমন কোনো কাজই নেই।

পাউবো ও হাওর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরা বলছেন, সুনামগঞ্জে হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা, মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে এই প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখতে পারে। এ ছাড়া হাওর এলাকায় পাউবোর নদী খনন, ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণসহ নানা কাজ করে। হাওর এলাকায় বন্যা ব্যবস্থাপনা ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন শীর্ষক একটি বড় প্রকল্পের কাজ এ বছর থেকে শুরু হচ্ছে। এ ছাড়া হাওর এলাকার উন্নয়ন ও পর্যটনের বিকাশের বিষয়টিও রয়েছে।

হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে এসব কাজে সহযোগিতা, তদারকিসহ নানাভাবে ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রম না থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না। তবে এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দুয়েক বছর ধরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের সময়ে প্রতিনিধিরা সরেজমিনে একবার পরিদর্শন করেন।

‘হাওর বাঁচাও আন্দোলনে’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় সারাবাংলাকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জকে আমরা হাওরের রাজধানী বলি। আমাদের দাবি ছিল, হাওর উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয় এখানে হবে। তা না হয়ে আঞ্চলিক কার্যালয় হয়েছে। কিন্তু তার কোনো সুফলও আমরা পাচ্ছি না। প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর করতে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া দরকার।’

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এবার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ দেখে গেছেন একজন কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হলে হাওর এলাকার উন্নয়নে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।’

বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের উপপরিচালক (কৃষি, পানি ও পরিবেশ) নুরজাহান খানম সুনামগঞ্জ অঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে আছেন। জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মূলত লোকবল সংকটের কারণেই এই কার্যালয়ের কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু করা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয়ভাবে লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। এটি সম্পন্ন হলে সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের কার্যক্রমও শুরু হয়ে যাবে।’

সারাবাংলা/টিআর

আঞ্চলিক কার্যালয় সুনামগঞ্জ হাওর হাওর ও জলাভূমি হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর