শব্দ করে কোরআনও পড়তে পারবেন না আফগান নারীরা
৩১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৩৬
আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের অধীনে নারীদের ওপর আরও এক বিধিনিষেধ জারি করা হলো। শিক্ষাগ্রহণ ও চলাফেরার অধিকারের পর এবার শব্দ করে নামাজ পড়া বা কোরআন শরিফ পড়ার সুযোগও বন্ধ হলো তাদের জন্য। দেশটির পাপ-পূণ্যবিষয়ক মন্ত্রী খালিদ হানাফি বলেছেন, কোনো আফগান নারী অন্য কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারীর সামনেও শব্দ করে কোরআন শরিফ পড়তে পারবেন না।
বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, গত রোববার আফগানিস্তানের পূর্ব লোগার প্রদেশে এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী হানাফি এ কথা বলেন। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানাতে পারেনি এপি।
তালেবান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আফগান নারীদের ওপর নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটিতে নারীদের পড়ালেখার অধিকার ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত সীমিত করা হয়েছে। বোরকা-হিজাবে মুখমণ্ডল পর্যন্ত সম্পূর্ণ না ঢেকে দেশটির মেয়েদের ঘরের বাইরে বের হওয়ার সুযোগ নেই। জনসম্মুখে জোরে কথা বলাতেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এর মধ্যেই মন্ত্রী খালিদ হানাফি বলেন, যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারীরই অন্য প্রাপ্তবয়স্ক নারীর সামনে জোরে কোরআন পাঠ করা উচিত নয়। কোরান এমনভাবে পাঠ করতে হবে যেন তারা একে অন্যের কথা শুনতে না পান। নারীদের জন্য তাকবির (আল্লাহু আকবার) উচ্চারণেরও অনুমোদন নেই।
মেয়েদের গান উপভোগ করার অনুমোদন নেই জানিয়ে হানাফি বলেন, নারীদের তাকবির দেওয়া বা আজান দেওয়ারই অনুমতি নেই। ফলে তারা অবশ্যই গানও গাইতে পারবেন না বা গান উপভোগ করতে পারবেন না।
হানাফির এমন মন্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফও। প্রতিবেদন অনুযায়ী, হানাফি জানিয়েছেন যে একজন নারীর কণ্ঠস্বরকে ‘আওরাহ’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যার অর্থ এটি সবসময় গোপন রাখা উচিত এবং জনসমক্ষে শোনানো উচিত নয়। এমনকি কোনো নারীরও উচিত নয় অন্য কোনো নারীর আওয়াজ শোনা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন নামাজ পড়া বা কোরআন পাঠের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও ভবিষ্যতে হয়তো মেয়েদের অন্য কোনো মেয়ের সামনে কথা বলার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তেমনটি কথা হলে আফগান নারীদের কথা বলার অধিকার আরও সীমিত হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়াভিত্তিক আফগান সংবাদমাধ্যম ‘আমু টিভি’র খবরে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে সামান্য কিছু নারী বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করার অনুমতি পান। তাদের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মীরা। তাদেরও জনসমক্ষে, বিশেষ করে রোগীর পুরুষ আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলতে বাধা দেওয়া হয়।
আফগানিস্তানে তালেবান ফের ক্ষমতায় আসার ৯ মাসের মাথায় ২০২২ সালের মার্চে মেয়েদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সম্প্রতি ইউনেস্কোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানের কড়াকড়ির কারণে গত তিন বছরে আফগানিস্তানের অন্তত ১৪ লাখ কন্যাশিশু স্কুলশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর