দীপাবলির পর দিল্লির আকাশ গিলে ফেলে আতশবাজির ধোঁয়া
১ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:১৫
সম্প্রতি ভারতসহ অন্যান্য দেশে উদযাপিত হয়ে গেল এই বছরের দিওয়ালি বা দীপাবলি উৎসব। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে এই দিন উদযাপন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। উপহার বিনিময় করেন একে অপরের সঙ্গে। মঙ্গলের আশায় মাটির তেলের প্রদীপ বা মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয় এই বিশেষ দিন। আতশবাজিতে ছেয়ে যায় শহরের আকাশ।
এই উৎসবমুখর উদযাপন আনন্দ বয়ে আনছে ঠিকই তবে পরিবেশে ফেলছে বিরূপ প্রভাবও। প্রতিবছরই উত্সবগুলোতে আতশবাজি বা পটকা বিষাক্ত ধোঁয়া সৃষ্টি করে। যা পরিষ্কার হতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগে যায়। বিশেষ করে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে।
দিল্লির বায়ুর মান এমনিতে অস্বাস্থ্যকর। আর দীপাবলি এলে এর সঙ্গে যুক্ত হয় বাজির ধোঁয়া। যাতে কুয়াশার মতো ঢেকে যায় পুরো শহরটি। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণে নয়াদিল্লি কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য কিছু রাজ্যে ২০১৭ সাল থেকে আতশবাজি ব্যবহার ও বিক্রি নিষিদ্ধ করে। জনগণকে এর পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব আতশবাজি এবং লাইট শোর মতো আরও টেকসই বিকল্প বেছে নিতে উৎসাহিত করা হয়।
অনেকেই মনে করছেন, বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসেবে কঠোর আইন থাকা প্রয়োজন। তবে নয়াদিল্লির বাসিন্দাদের মতে, নিয়ম থাকলেও এই নিষেধাজ্ঞা খুব বেশি পার্থক্য তৈরি করবে না। এখনও রাস্তার পাশের স্টল এবং দোকান থেকে খুব সহজেই আতশবাজি কেনা যায় শহরটিতে।
নয়াদিল্লিসহ বেশ কয়েকটি উত্তর ভারতীয় শহরে সাধারণত প্রতিবছর অক্টোবর থেকে জানুয়ারির মধ্যে অতি উচ্চমাত্রার বায়ু দূষণ দেখা যায়। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটে। এমনকি স্কুল ও অফিস বন্ধ রাখতে হয়।
এরকম পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ অবকাঠামো নির্মাণও বন্ধ করে দেয়। ডিজেলচালিত যানবাহন চলাচল সীমাবদ্ধ করে দেয়। এছাড়া, চারপাশে ঘিরে থাকা ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে পানির স্প্রিঙ্কলার এবং অ্যান্টি-মগ গান মোতায়েন করে।
এ বছর আতশবাজির কারণে সৃষ্ট ঘন, বিষাক্ত ধোঁয়া এরই মধ্যে নয়াদিল্লিকে গ্রাস করতে শুরু করেছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, বুধবার পর্যন্ত ৩০০ এর বেশি রিপোর্ট হয়, যা খুবই নিম্নস্তরের বায়ুদূষণকে নির্দেশ করে।
বেশকয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবছর এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ বায়ুদূষণজনিত রোগে মারা যায়। বায়ুদূষণের একটি ক্ষুদ্র কণাও ফুসফুসের গভীরে প্রবেশ করলে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগসহ বড়ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
নয়াদিল্লির দুর্ভোগ শুধুমাত্র আতশবাজির কারণে নয়। এর পাশাপাশি যানবাহন নির্গমন, প্রতিবেশি রাজ্যের খামারে আগুন এবং নির্মাণকাজের ধুলাবালি রাজধানীর বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আতশবাজি বা পটকা থেকে নির্গত ধোঁয়া আরও বিপজ্জনক হতে পারে।
সারাবাংলা/এসডব্লিউআর/পিটিএম