ট্রাম্প নির্বাচিত হলে অভিবাসীদের কী হবে?
১ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৪৫
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে বরাবরই খড়গহস্ত দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও এবারের নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসীদের প্রসঙ্গ এলে অন্তরের ঘৃণা যেন উগড়ে দেন তিনি। পশু, দুশ্চরিত্র, রক্তপিপাসু সন্ত্রাসী, আবর্জনাসহ এমন কাঁহাতক শব্দ নেই যা অভিবাসীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেননি তিনি। এবারের নির্বাচনী প্রচারের শুরুর দিন থেকেই তিনি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগছেন। এবারের নির্বাচনী প্রচারের সূচনাই তিনি করেছেন অবৈধ অভিবাসীদের আক্রমণ করে। মিশিগানে প্রচার করতে গিয়ে তিনি বলেছিলে, ‘প্রত্যেক ভোটারকে এবার নিজের পছন্দ স্পষ্ট করতে হবে। তাদের হাতে আছে কেবল দুটি পছন্দ। এক- হাজার হাজার উগ্র ইসলামী সন্ত্রাসবাদীকে দেশে ঢোকাবেন; না কি তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেবেন। তবে আমি ক্ষমতায় এলে প্রশাসন প্রথম দিন থেকেই আমেরিকার ইতিহাসের সব চেয়ে বড় ফেরত (ডিপোর্টেশন) অভিযান চালাবে। এটা আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’ এছাড়া ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসীদের যেসব সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণমাত্রই নাগরিকত্ব পাচ্ছে তাদের নাগরিকত্ব পুর্নবিবেচনা এবং ভবিষ্যতের যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সন্তানদের নাগরিকত্ব না দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন।
এখানেই শেষ নয়। এরপর থেকে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী কড়া বক্তব্য দিচ্ছেন প্রায় সব জনসভাতেই। সবশেষ নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনের নির্বাচনী সমাবেশে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পর প্রথম দিন থেকেই তিনি অবৈধ অভিবাসী তাড়াতে ‘ডিপোর্টেশন প্রোগ্রাম’ শুরু করবেন। ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে ‘অভিবাসী আক্রমণের’ ধারা উল্টে দেবেন বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প আরও ঘোষণা করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসী নির্বাসন হতে চলেছে এবং স্প্রিংফিল্ড ও অরোরা থেকে এই কার্যক্রম শুরু করব।’ এর আগে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্কের সময় ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, স্প্রিংফিল্ড শহরের অভিবাসীরা সেখানকার অধিবাসীদের পোষা কুকুর ও বিড়াল খেয়ে ফেলেছে!
সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এবারকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যেন অভিবাসীদের জন্য আতঙ্কের হয়ে উঠেছে। অধিকাংশই ইতোমধ্যে ভাবতে শুরু করেছেন- ট্রাম্প নির্বাচিত হলে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসীদের ভবিষ্যত নেই। ২০২২ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী ১ কোটি ১০ লাখ। এর মধ্যে বেশি সংখ্যায় যেমন লাতিন বা আফ্রিকানরা আছে তেমনি রয়েছে ভারত, চীন, পাকিস্তান, নেপাল এবং বাংলাদেশের মানুষও। গত মেয়াদে ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল বেশ। সমালোচকরা বলছিলেন, ট্রাম্প সব সময়ই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ, মানবতাহীনতা এবং বর্ণবাদের পৃষ্ঠপোষক। বিশেষ করে মেক্সিকো সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বেড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘিরে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু কোনোভাবেই সীমান্তে বেড়া দেওয়ার অবস্থান থেকে সরানো যায়নি তাকে।
ঐতিহাসিকভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থজনিত কৌশলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এই অভিবাসন প্রক্রিয়া। আঠারোশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ দ্বন্দ তথা বর্ণবাদী আধিপত্যের জেরে আমেরিকার জাতীয় ঐক্য- অর্থনীতি ও সামাজিক সাম্য যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সেইসময়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আব্রাহাম লিংকন। এই চরম জাতীয় সংকটে ১৮৬৩ সালে লিংকন ‘অ্যাক্ট টু এনকারেজ ইমিগ্রেশন’ নামের একটি আইনে স্বাক্ষর করেন। এর পরের দশকগুলোতে আমেরিকায় অভিবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত জোয়ারকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আশির্বাদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেসময় লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে অভিবাসীরা এসে যুক্তরাষ্ট্রে এক নবজাগরণের জোয়ার সৃষ্টি করেছিল।
অথচ প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প ‘মেক্সিকোতেই থাকুন’ নামে এক কর্মসূচি নিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, মেক্সিকো সীমান্ত দিয়েই প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে। ট্রাম্পের সেই ‘মেক্সিকোতেই থাকুন’ কর্মসূচী অনুযায়ী মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে চাওয়া অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে দেশটির আদালতে মামলা দিত যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ওই সীমান্ত দিয়ে কেউ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকলেই তাকে সঙ্গে সঙ্গে মেক্সিকোতে ফেরত পাঠানো হত, যাতে ওই ব্যক্তি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনারও সময় না পায়। এছাড়া সীমান্তে ৩১৪৫ কিলোমিটার লম্বা দেয়াল তোলার পরিকল্পনার কথা তো সবাই জানে। যদিও শেষ পর্যন্ত অর্থসংকটসহ বেশ কিছু কারণে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেননি ট্রাম্প। এছাড়া গত মেয়াদে ট্রাম্পের আরও একটি পরিকল্পনা ছিল, অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বন্দিশালা তৈরি করা এবং দ্রুত সময়ে তাদের সেখান থেকে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া। বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষত মুসলিমপ্রধান দেশ থেকে মানুষের অবাধ যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞাও ট্রাম্প দিয়েছিলেন। তার যুক্তি ছিল, এসব দেশের নাগরিকরা ‘সন্ত্রাস’ সমর্থন করে, যদিও এর গ্রহণযোগ্যতা খোদ মার্কিন জনগণের কাছেই ছিল না। এবং দেশটির আদালতও এই বিষয়গুলোতে অনুমোদন দেয়নি। ট্রাম্পের এ পদক্ষেপগুলো পরবর্তীতে বাইডেন প্রশাসন বাতিল করে দিলেও এবার ক্ষমতায় এলে আগের প্রতিটা প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে বসে আছেন ট্রাম্প।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকদের মতে ট্রাম্পের এই অভিবাসনবিরোধী অবস্থান অনেকটাই রাজনৈতিক। লাতিন আমেরিকার সব দেশসহ নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলের অভিবাসীদের লক্ষ্য করেই বরাবরই তোপ দেগেছেন তিনি। হুমকি দিয়েছেন স্থায়ীভাবে বের করে দেওয়ার। অপরদিকে ভারত, চীনসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের ক্ষেত্রে ট্রাম্প অনেকটাই উদার। কারণ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে আপাত কঠোর অবস্থান নিয়েও ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে ভারত ও চীনে ফিরে গিয়ে কোটিপতি হওয়ার প্রক্রিয়া ঠেকাতে চান তিনি। আর এজন্য মার্কিন কলেজ থেকে স্নাতক করা বিদেশি শিক্ষার্থীরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রিন কার্ড পাবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। চলতি বছরের মে মাসে অভিবাসীদের ভবিষ্যত বিষয়ক এক পডকাস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে নিজেদের দেশে ফিরে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিলিপি করার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে ভারত ও চীনের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটা বেশি দেখা যায়। এভাবে আমরা প্রতিবছর হার্ভার্ড, এমআইটির মতো সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় থেকে দক্ষ হওয়া লোকদের হারাই। তারা নিজের দেশে ফিরে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থান করে এবং কম বয়সে বিলিওনিয়ার হয়ে যায়। তারা এটা তাদের দেশে করতে পারলে আমেরিকায় কেন নয়?’ আর এই প্রবণতা ঠেকাতে ট্রাম্প মার্কিন কলেজ থেকে স্নাতক হওয়া শিক্ষার্থীদের ডিপ্লোমার অংশ হিসাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রিন কার্ড অফার করার পরিকল্পনার কথা জানান। যা ওই শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ক্যারিয়ার ও অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার একটি বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। উল্লেখ্য, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত বিষয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি অর্জনের পর গ্রিন কার্ড পাওয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার ছিল।
ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের দাবি, অভিবাসীরা সরকারি সম্পত্তি নিঃশেষ করছে। এমনকি প্রবীণ মার্কিনিদের চেয়েও অভিবাসীরা ক্ষেত্রবিশেষে বেশি সরকারি সেবা পাচ্ছেন। কিন্তু সিবিসি নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিবাসীরা বরং মার্কিন অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে যারা অবৈধভাবে থাকছেন ও কাজ করছেন তারা খুব কম সরকারি সেবা পেয়ে থাকেন। অথচ তাদেরকেও প্রায় সবধরণের সামাজিক নিরাপত্তা কর পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে অতি প্রয়োজনীয় জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নানা বর্ণের-ধরণের মানুষের সমাগম এবং অনেকগুলো ধারণার সম্মিলন ঘটাতে অভিবাসীরা অবদান রাখেন। যা দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের অর্থনৈতিক গুরুত্বের বিষয়ে একাডেমিকস অব সায়েন্সেস, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড মেডিসিন-এর এক গবেষণায় ৭৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় পর্যায়ে অভিবাসীদের অর্থনৈতিক প্রভাব ইতিবাচক; আর অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় পর্যায়ে তা নেতিবাচক। কারণ হিসেবে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকার অভিবাসীদের যতটা সুবিধা দেয় তার চেয়ে বেশি কর আদায় করে। অন্যদিকে অঙ্গরাজ্য এবং স্থানীয় সরকারের ক্ষেত্রে চিত্রটা আলাদা। কারণ অভিবাসী ও তাদের সন্তান-সন্ততির স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ নানা নাগরিক সুবিধার ব্যয়ভার স্থানীয় সরকারকেই বহন করতে হয়। তবে অভিবাসীদের দ্বিতীয় প্রজন্মের ক্ষেত্রে এই বিনিয়োগটি লাভজনক- কারণ তারা তখন অঙ্গরাজ্যের প্রকৃত মুনাফায় অবদান রাখতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অংশ শরণার্থী। আর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে শরণার্থী হিসেবে প্রবেশের অনুমতির হার অনেক কম। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়কালে মূলত শরণার্থীদের অবাধ প্রবেশে রাশ টানা শুরু হয়েছিল। ট্রাম্পের আগের শাসনামলে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের ঢোকা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেবেন’। আর এজন্য তিনি শরণার্থীদের ঢোকার জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। এই শরণার্থীদের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি কোটাভিত্তিক হলেও কোটার পরিসর নির্ধারণ করার চূড়ান্ত ক্ষমতা দেশটির প্রেসিডেন্টের হাতে। যদিও তখন বিষয়টি নিয়ে নানা আইনি চ্যালেঞ্জের জটিলতায় জড়িয়েছেন ট্রাম্প। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয় শরণার্থীদের নিয়ে এই কোটা ব্যবস্থা পরবর্তী বাইডেন প্রশাসনের আমলেও বহাল ছিল।
পিটারসেন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনোমিকসে যুক্তরাষ্ট্রের শরণার্থী বিষয়ক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শরণার্থী হিসাবে আমেরিকায় যারা আশ্রয়প্রার্থী হবেন তাদেরকে আবেদন করতে হয় আমেরিকার বাইরে থেকে। তাকে প্রমাণ করতে হয় নিজের দেশে বাস করা আশ্রয়প্রার্থীর জন্য কতটা বিপদের এবং স্বদেশে নির্যাতনের ঝুঁকি কতটা। এরপর সেই আবেদনের ভিত্তিতে আমেরিকান কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত দেয়। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই নিয়ম অনুসরণ করা হয় না। কারণ আমেরিকান আইনেই শরণার্থী আবেদনের বিষয়ে আইনের ব্যত্যয়ের নজির রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও দেখানো হয়েছে ২০১৬ সালের পর বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো থেকে শরণার্থীদের আশ্রয় পাওয়া কতটা কঠিন হয়ে গেছে। সেই সময়ে ইরাক, সোমালিয়া, ইরান এবং সিরিয়া থেকে আমেরিকায় আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় শূণ্যতে নামিয়ে আনা হয়। যা পরবর্তী প্রশাসনের সময়েও প্রায় একই ছিল।
মোদ্দা কথায়, ট্রাম্পের এই অভিবাসনবিরোধী কঠোর অবস্থান অনেকটা ব্যক্তিগত মনে হলেও এর পেছনে রয়েছে দেশটির ভোটের রাজনীতির এক সুচতুর পরিকল্পনা। ট্রাম্পের প্রথম শাসনামলেও অভিবাসীদের বিষয়ে অনেক কঠোর ঘোষণা, বক্তব্য এলেও তার অনেকগুলোই বাস্তবায়িত হয়নি। কিছিু আটকে দিয়েছিলেন দেশটির আইনপ্রণেতারা, কিছু আবার আটকে গিয়েছিল মানবাধিকার প্রশ্নসহ নানা আইনি বেড়াজালে। তবে মোটাদাগে ট্রাম্প এবার যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে অভিবাসী বিষয়ক সিদ্ধান্তে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ রেমিট্যান্স নির্ভর এ দেশের শীর্ষ রেমিট্যান্স জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। তবে মানবিক দিক থেকে দেখা গেলে অভিবাসীদের শ্রমঘামে গড়া যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতি এই অন্যায় করতে পারে না। অন্যদিকে আশার কথা হচ্ছে, নাগরিক সুবিধা ও অধিকারের প্রশ্নে বিশ্বের অন্যতম মানবিক রাষ্ট্রের নামটিও যুক্তরাষ্ট্র। শত বছর ধরে তাদের সরকার, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থা এই সুনাম ধরে রেখেছে। তাই আপাত দৃষ্টিতে অবৈধ অভিবাসীরাও মুখ চেয়ে রয়েছেন- মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্রের মানবিকতা প্রদর্শনের প্রতি।
লেখক: সংবাদকর্মী