যে ৫ কারণে জিততে পারেন ট্রাম্প
৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:১৫ | আপডেট: ৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৫৩
আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি-অর্থনীতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতি আর বৈশ্বিক অস্থিরতার মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি কমলা হ্যারিস আর ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বরাজনীতির নানা সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ প্রচারের পর এবার সরাসরি ব্যালটের লড়াইয়ে তারা। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জরিপ বলছে, ডেমোক্র্যাট কমলা মাত্র ১ শতাংশ সমর্থনে এগিয়ে রয়েছেন রিপাবলিকান ট্রাম্পের চেয়ে। স্বাভাবিকভাবেই করা হচ্ছে, যেই জিতুক না কেন— ভোটের ব্যবধান হবে সামান্যই।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়ে সকালেই শুরু হচ্ছে এই ভোটগ্রহণ। নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলে তিনি হবেন ১৩০ বছরের মধ্যে প্রথম সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি আগে একবার পরাজিত হয়েছেন।
এমন ইতিহাস গড়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সম্ভাবনা কতটুকু? ওয়াশিংটনে বিবিসি নিউজের বেন বেভিংটন এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন ট্রাম্পের জয়ের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে— এমন পাঁচটি কারণের কথা। একনজরে সেগুলো দেখে নেওয়া যাক—
১. ট্রাম্প ক্ষমতায় নেই
মার্কিন নির্বাচনের আগে থেকেই দেশটির অর্থনীতি আলোচনায় ছিল। এবারে ভোটাররা অর্থনীতিকে গুরুপ্তপূর্ণ ইস্যু বিবেচনা করছে। যখন দেখানো হচ্ছে বেকারত্ব কম ও স্টক মার্কেট ফুলে ফেঁপে উঠছে, সেখানে বেশির ভাগ আমেরিকান বলেছেন, তারা প্রতিদিন উচ্চমূল্যের সঙ্গে লড়াই করছেন।
করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী সময়ে মুদ্রাস্ফীতি সত্তরের দশকের পর থেকে এমন উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এবারের নির্বাচনি প্রচারে এটাই ছিল ট্রাম্পের প্রধান ‘ট্রাম্প কার্ড’। মুদ্রাস্ফীতিই ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করার সুযোগ দিয়েছে— আপনি কি চার বছর আগের চেয়ে এখন ভালো আছেন?
জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের কারণে চলমান সরকারের প্রতি ভোটারা কিছুটা হতাশ। মার্কিন ভোটাররাও এখন পরিবর্তন চায়। অক্টোবরের একটি জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের চলমান অবস্থার প্রতি মাত্র ২৬ শতাংশ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে ৭২ শতাংশ এই অবস্থার প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
একই জরিপে ৩২ শতাংশ মনে করছেন চলমান পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। আর ৬২ শতাংশ মনে করছেন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।
কমলা হ্যারিস তথাকথিত পরিবর্তনের প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অজনপ্রিয় জো বাইডেনের কাছ থেকে নিজেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দূরে রাখার লড়াইও করতে হয়েছে তাকে। সেদিক থেকে ট্রাম্প কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছেন।
২. খারাপ সময়েও অবিচল
২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ইউএস ক্যাপিটলে দাঙ্গা, একের পর এক অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরও ট্রাম্পের সমর্থন সারা বছর ৪০ শতাংশ বা তারও বেশি স্থিতিশীল থেকেছে।
ডেমোক্র্যাট ও ‘নেভার-ট্রাম্প’ শিবিরের আন্দোলনকারীরা বলছেন, তিনি হোয়াইট হাউজের জন্য অযোগ্য। আর বেশির ভাগ রিপাবলিকানই ট্রাম্পের সঙ্গে একমত যে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
ট্রাম্পের এখন দরকার সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের সেই অংশের যথেষ্ট সমর্থন পাওয়া, যাদের তার সম্পর্কে এমন কোনো বদ্ধমূল ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গি নেই।
৩. অবৈধ অভিবাসন ইস্যু
অর্থনীতির বাইরেও অভিবাসন ইস্যুটিও নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে সাহায্য করবে। ডেমোক্র্যাটদের প্রত্যাশা, অভিবাসন ইস্যু হয়তো আর কাজে দেবে না। কিন্তু ট্রাম্প বাজি ধরে বলছেন, অভিবাসন সমস্যার সমাধানের জন্যই তাকে আবার ক্ষমতায় আসতে হবে।
অভিবাসন ইস্যুতে সীমান্ত অঙ্গরাজ্যগুলোতে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা আগেরবারের চেয়ে অনেক বেশি। এর প্রেক্ষাপটে নির্বাচনি জরিপগুলোতে দেখা যাচ্ছে, ভোটাররা অভিবাসনের বিষয়ে ট্রাম্পের ওপর বেশি আস্থা রাখছেন।
৪. পরিবর্তনে গ্রহণযোগ্য
ট্রাম্প সেসব ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন যারা অতীত আঁকড়ে ধরে রাখতে চান না। ব্যবসায়িক খাতে ট্রাম্পের পরিবর্তনগুলো ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য হয়েছে। শুল্কের মাধ্যমে আমেরিকান শিল্পের সুরক্ষাকে প্রায় স্বাভাবিক করে তুলেছে।
৫. বিশ্বে শান্তির জন্য ট্রাম্পের ওপর আস্থা
ট্রাম্প যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তিনি অনেকটাই বিচ্ছিন্নতাবাদী কৌশল নিয়েছিলেন। তার নীতি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ তথা সবার আগে আমেরিকা। এর মাধ্যমে যেখানে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ নেই, সেখানে খানিকটা গুটিয়েই রেখেছেন কূটনৈতিক সম্পর্ক। বিভিন্ন দেশ বা আঞ্চলিক সংঘাত থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে সরিয়ে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
এবারের নির্বাচনি প্রচারেও ট্রাম্প বলেছেন একই কথা। বারবার বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধ করবেন তিনি। ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার হুমকি এবারও দিয়ে রেখেছেন ট্রাম্প।
সারাবাংলা/এইচআই/টিআর