‘প্রবাসীরা বিমানবন্দরে অতিথির মতো সম্মান পাবেন’
১১ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৪৮
ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, প্রবাসীরা যেন বিমানবন্দরে অতিথির মতো সম্মান ও সেবা পায় সরকার তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসী কর্মীদের জন্য একটি ডেডিকেটেড লাউঞ্জ (প্রবাসী লাউঞ্জ) উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রবাসীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের যে প্রাপ্য সম্মান, সেটি যেন জাতি দিতে পারে। সেই সম্মান দেওয়ার জন্য আজক প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে প্রবাসী লাউঞ্জ উদ্ধোধন করা হলো। আশা করি, আরও বহুরকমের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘যাতে করে আপনারা এখানে এসে মনে করতে পারেন যে, আপনারা শান্তিতে আছেন, বাড়িতে আছেন, সবাই আপনাদের দেখভাল করছে, আপনাদের সেবা-শুশ্রুষা করছে। অর্থাৎ আপনি এখানে মেহমানের মতো থাকবেন। আপনি সম্মান নিয়ে থাকবেন।’
তিনি বলেন, ‘আপনার প্রাপ্য বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য এই প্রচেষ্টা। আজ যেটা শুরু করলাম এটা বহুভাবে একে কাজ লাগানো যাবে।
প্রবাসীরা বিমানবন্দরে যথাযথ সম্মান ও সেবা পান না বলে আক্ষেপ প্রকাশ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের দিয়ে তো দেশ চলে। আপনাদের তো মাথার ওপর রাখার কথা। অপরাধী করে রাখবে কেন? ভাবখানা এই যে, তোমরা নিজদের টাকা রোজগার করতেছ, তোমাদের ব্যাপার! আমাদের কী তাতে?’
প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ যথার্থভাবে দেশের কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘প্রবাসীরা টাকা যেটা রোজগার করছে, সেটা তো বাংলাদেশেই আসছে, বাংলাদেশের জন্য রোজগার করছে। প্রবাসীরা কষ্ট করে টাকা রোজগার করে আনছেন। আর এই কষ্টার্জিত টাকা আরেকজনে বিদেশে পাচার করছে। এটা হলো আমাদের দুর্ভাগ্য। সেখান থেকে আমাদের ফিরে আসতে হবে, আমাদের দেশের টাকা যেন দেশে থাকে, দেশের কাজে লাগে।’
প্রবাসী কর্মীদের দেশ গড়ার কারিগর অভিহিত করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের প্রবাসী কর্মীরা দেশ গড়ার কারিগর। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে তারা বড় ভূমিকা পালন করেছে। আমরা তাদের কাছে সবসময় কৃতজ্ঞ। আমরা বিশ্বাস করি, এই লাউঞ্জ তাদের ভ্রমণকে সহজ করবে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা সরকার গঠনের তিন মাসের মাথায় এসে প্রবাসীদের জন্য নতুন যাত্রা শুরু করতে পারলাম।’ প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দুজনেই বিদেশে আসা-যাওয়ার পথে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি।’
তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দর আমাদের সবাইকে ব্যবহার করতে হয়। আমাকেও প্রায় আসা-যাওয়া করতে হয়। মনে খুব কষ্ট হয়, যখন দেখি প্রবাসীদের যাওয়া আসায় কত কষ্ট হচ্ছে।’
প্রবাসীদের জন্য সরকারের সেবা সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘প্রবাসীদের জন্য এখন ই-পাসপোর্ট দিতে হবে। ছাপা পাসপোর্ট দরকার নেই। পাসপোর্ট আপনার ফোনে চলে আসবে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। অফিসে যেন যেতে না হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এখন আর সরকারি অফিসে যেতে চাই না। বাড়িতে যেন সেবা পৌঁছে দেওয়া যায়।’
উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এটিই প্রথম প্রবাসী লাউঞ্জ। এখানে বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের বিশ্রামের জন্য জায়গা এবং সুলভ মূল্যে খাবার পাওয়া যাবে। সুলভ মূল্যে খাবার পরিবেশনের জন্য এতে ভর্তুকি দেবে সরকার।
উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে আইন ও প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, বিমান বন্দরে প্রবাসীদের দেখভাল এবং তাদের সহায়তা করার জন্য ১০০ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আইওএম এই কর্মীদের স্পন্সর করেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত আইওএম মিশনের ডেপুটি চিফ ফাতিমা নুসরাত গাজালি জানান, জাতিসংঘ বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের সহায়তার জন্য লাউঞ্জটি স্পন্সর করেছে। [সূত্র: বাসস]
সারাবাংলা/পিটিএম