‘১০০ দিনে অর্থনীতি সবল অবস্থানে চলে এসেছে’
১৭ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৪
ঢাকা: দায়িত্ব নেওয়ার ১০০ দিনের মাথায় অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থনীতিকে সবল অবস্থানে নিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বন্ধুরাষ্ট্রগুলো যেসব সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলো পেলে অর্থনীতি আরও মজবুত হবে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘১০০ দিন আগে আর্থিক দিক থেকে আমরা যে লন্ডভন্ড অবস্থা থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম, সেটা এখন অতীত ইতিহাস। এই ১০০ দিনে অর্থনীতি সবল অবস্থানে চলে এসেছে। এটা সম্পূ্র্ণ নিজস্ব নীতিমালা দিয়ে হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখনো আমাদের বন্ধুদের কাছ থেকে যে সাহায্যের আয়োজন হয়েছে, তা আসা শুরু করেনি। বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সাহায্য দ্রুততম সময়ে আসা শুরু করবে— এই প্রতিশ্রুতিও তারা আমাকে দিয়েছে। এই সাহায্য আসা শুরু করলে আমাদের অর্থনীতি অত্যন্ত মজবুত ও আকর্ষণয় অর্থনীতিতে পরিণত হবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নানা রকম বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়ে এগিয়ে আসবে।’
রোববার (১৭ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশের অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। আশার কথা, এই রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে। গত তিন মাসে রিজার্ভে হাত না দিয়েই আমরা প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পেরেছি। জ্বালানি তেল আমদানিতে পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ১৬০ মিলিয়ন ডলারে আনতে পেরেছি।’
‘অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা এরই মধ্যে ঋণ ও অনুদান হিসেবে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা আমাদের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে সচল করতে সক্ষম হবে,’— বলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস।
তিনি বলেন, ‘পতিত সরকার আমাদের জন্য যে ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি রেখে গেছে, তাতে রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে। এর মধ্যেও জুলাইয়ের নেতিবাচক অবস্থা থেকে অক্টোবর নাগাদ রাজস্ব আদায়ে পৌনে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। রাজস্ব আদায়ে গতি আনতে আমি এখন অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দিতে উৎসাহিত করছি।’
বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে সহায়তা মিলবে আশাবাদ জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ইউএনডিপি ইত্যাদির প্রধানদের সঙ্গে আমার দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। তারাও বাংলাদেশকে নতুনভাবে ও সর্বাত্মকভাবে সাহায্যের জন্য তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। একান্ত বৈঠকে চীনের পক্ষ থেকে যাবতীয় সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।’
বিশ্বনেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের এই সংকটময় সময়ে তাদের প্রায় সবাই সহযেগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়ার সময় যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, ইতালি, নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান সর্বাত্মক সহযোগিতার অঙ্গীকার করেছেন বলে জানান ড. ইউনূস। নেপাল, মালদ্বীপ, পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার কথা বলেছেন বলেও ভাষণে উল্লেখ করেন তিনি।
এর বাইরেও অন্যান্য দেশের সরকার-রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারে কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্বিপাক্ষিক নানা সহযোগিতাসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা। বলেন, এ সংক্রান্ত যেসব জটিলতা রয়েছে সেগুলো নিরসন করা হচ্ছে। সত্যিকারের ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু হয়েছে, বিনিয়োগ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ সমাধানে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন হয়েছে। বেসরকারি খাতের উপদেষ্টা কাউন্সিল ও ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে সরকারি অফিসে না গিয়েই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ফেলার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর/এইচআই
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ