কপ২৯ সম্মেলন
প্রাপ্তি নিয়ে সংশয়ে ভুক্তভোগী দেশগুলো
১৭ নভেম্বর ২০২৪ ২৩:০৬
আজারবাইজান থেকে: নানান সংশয় নিয়ে এবারের ২৯তম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয়েছে। এখন শেষের দিকে এসে জলবায়ু অভিযোজনের প্রত্যাশিত প্রাপ্তি নিয়ে সংশয়ে ভুক্তভোগী দেশগুলোর নেতারা।
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ২৯ সম্মেলনে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হবে সোমবার (১৮ নভেম্বর)। সবার প্রত্যাশা বাকু সম্মেলন থেকে একটা সফলতা আসবে। তবে সেই সফলতা কতটুকু তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
গত ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের মহাসচিব সম্মেলনের উদ্বোধন করে বলেছিলেন, জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে অভিযোজনের অর্থ না দিলেও উন্নত দেশগুলো জীবশ্ম জ্বালানি বিক্রি করে ব্যাপক মুনাফা করছে। কপ প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন করার এটাই উপযুক্ত সময়। তা না হলে ধ্বংসের পথে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব।
সম্মেলনের উদ্বোধনীর বক্তৃতায় কপ-২৯ প্রেসিডেন্ট ও আজারবাইজানের পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রী মুখতার বাবায়েভ বলেছিলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মধ্য দিয়েই টেকসই ভবিষ্যত গড়তে হবে। তিনি বলেন, একক কোনো দেশের পক্ষে বর্তমান সংকট সমাধান সম্ভব নয়।
আর বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে তা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন।
শুরু থেকেই এবারের জলবায়ু সম্মেলনের শীর্ষ আলোচ্য বিষয় হলো-অর্থায়ন। এই অবস্থায় গত কয়েক বছর ধরেই নতুন অর্থায়নের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছিল জাতিসংঘ। নিউ কালেকটিভ কোয়ান্টিফাইড গোল (এনসিকিউজি) নামের এই লক্ষ্য এ বছর চূড়ান্ত করার পালা। উন্নয়নশীল দেশগুলো এই লক্ষ্য চূড়ান্তের অপেক্ষায় আছে। এ কারণেই এবারের সম্মেলনে অর্থায়নকে শীর্ষ এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বলা হচ্ছে, এবারের কনফারেন্স অব দ্য পার্টি (কপ) হচ্ছে অর্থায়নের কপ। কিন্তু এবারের সম্মেলন জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ট্রিলিয়ন ডলারের চাহিদা কতটা পূরণ করতে সক্ষম হবে সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কারণ বিশ্বনেতাদের অনুপস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অংশ নিচ্ছেন না। সুতারং জলবায়ু অর্থায়ন কতটা সফলতার মুখ দেখবে সেটি নিয়ে শঙ্কা আছে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ ‘পাপুয়া নিউগিনি’ এবারের জলবায়ু সম্মেলন বয়কট করেছে। এখন কপের মূল আলোচনার বিষয় ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার সিদ্ধান্তের ওপর-ই নির্ভর করছে ভবিষ্যতের জলবায়ু আলোচনা কোন দিকে যাবে। কারণ, প্রথমবার প্রেসিডেন্ট হয়েই তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। শুধু তাই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী হওয়ার পরও জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসারকে তিনি উৎসাহিত করেছেন। অথচ গত চার বছর ধরে বাইডেন প্রশাসন তার বিপরীতে জলবায়ু পরিবর্তনের পক্ষে কাজ করে গেছেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে আবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরিয়ে এনেছেন। তেল-গ্যাস উৎপাদন কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন।
সম্মেলন চলবে আগামী ২২ নভেম্বর পর্ন্ত। ২২ নভেম্বর সমাপনী দিন সবশেষ ভাষণের আগেই জলবায়ু ফান্ডে অর্থায়ন এবং তা সুনির্দিষ্ট উপায়ে বিতরণের একটি সুষ্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে আশা করছে সবাই। ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ নভেম্বর ছোট ছোট আকারে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা বিভিন্ন ছোট বড় সংগঠন, এনজিও ও সরকারের নানা সংস্থার সদস্যরা করণীয় ঠিক করতে বৈঠকের কথা রয়েছে। জলবায়ু ফান্ডের যথোপযুক্ত ব্যবহার নিয়েও নানান দিক নির্দেশনা দেওয়ার কথা রয়েছে এসব বৈঠকে।
জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বষয়ক এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি সাইমন স্টিল ন্যায্যতার ভিত্তিতে জলবায়ুর অর্থায়নে সব পক্ষকে চুক্তির জন্য চাপ দেওয়ার মাধ্যমে যৌক্তিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর তাগিদ দিয়েছেন। কাঙ্ক্ষিত ফলাফল ছাড়া বাকু ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম