Tuesday 19 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বামীর ইন্টারভিউয়ে সঙ্গী, মহাখালীর ‘ট্রেনকাণ্ডে’ স্ত্রীর কপালে ১৪ সেলাই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:১৮

ট্রেনে ইট-পাথর ছুড়লে পাঁচটি বগির অন্তত ২৯টি জানালার কাঁচ ভেঙে গেছে। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: ১৯ মাস বয়সী মেয়ে জাইফা আর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসকে নিয়ে আন্তঃনগর উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে করে ঢাকায় যাচ্ছিলেন ফোরকান উদ্দিন। উপলক্ষ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দেওয়ার পাশাপাশি স্ত্রী ও সন্তানকে ঢাকা ঘুরিয়ে দেখানো। তবে বিধিবাম। ট্রেন থেকে নেমে ঢাকার রাজপথে পা রাখার আগেই চলন্ত ট্রেনে ছুড়ে মারা পাথরে আহত হন ফোরকানের স্ত্রী ও সন্তান। জাইফার আঘাত গুরুতর না হলেও জান্নাতুলের মাথায় দিতে হয়েছে ১৪টি সেলাই।

বিজ্ঞাপন

ঢাকায় আসার প্রধান যে উদ্দেশ্য, এ দুর্ঘটনার পর আর সেই ইন্টারভিউ দেওয়া হয়নি ফোরকানের। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে উপকূল এক্সপ্রেসের ফিরতি ট্রেন ধরে ফিরে গেছেন বাড়ি।

ফোরকান আক্ষেপ নিয়ে বলছিলেন, ‘বড় একটা বিপদ আমার পরিবারের ওপর দিয়ে গেছে। কিন্তু কেন এমন হলো আর এর দায় কার, তা জানা নেই আমার। আমার সন্তান ও স্ত্রী কেনো আহত হলো, এর জবাব রাষ্ট্রের কার কাছে চাইব, জানি না। তাই আল্লাহর কাছেই এর বিচার দিলাম।’

সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে ছুড়ে মারা পাথরে আহত হন জান্নাতুল ও জাইফা। উপকূল এক্সপ্রেস ওই সময় বনানী পেরিয়ে মহাখালী রেলক্রসিং এলাকা অতিক্রম করছিল।

আরও পড়ুন-

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, লাইন ম্যানের কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স সিগন্যাল পেয়ে ট্রেনটি কমলাপুরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা প্রথমে ট্রেনটি থামিয়ে দিতে চান। ট্রেনটি না থেমে গতি কমিয়ে চলতে থাকলে সেটি লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকেন শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে শিক্ষার্থীদের অনেকে আবার ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকা শিক্ষার্থীদের নির্বৃত্ত করার চেষ্টা করছিল।

উপকূল এক্সপ্রেস কর্তৃপক্ষ জানায়, মূলত শিক্ষার্থীদের রেললাইনে দাঁড়ানো দেখে ট্রেনচালক বা লোকোমাস্টার ট্রেন ব্রেক করেন। কিন্তু একটি ট্রেন দাঁড়াতে কিছুটা জায়গা ও সময়ের দরকার হয়। যে জায়গাটিতে শিক্ষার্থীরা অবরোধ করছিলেন, ইঞ্জিন বগির পর দুই থেকে তিনটি কোচ ওই জায়গাটি পার হওয়ার পরই ট্রেন থেমে যায়। কিন্তু এ সময় ট্রেনে অনবরত ইট-পাথর ছুঁড়ে মারা হয়। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে লোকোমাস্টার দুই মিনিটের মধ্যেই আবার ট্রেন চালিয়ে নিয়ে যান।

বিজ্ঞাপন

মহাখালী রেল ক্রসিংয়ের ওই জায়গায় বাইরে থেকে ছুড়ে দেওয়া ইট-পাথরে ট্রেনের বেশ কয়েকটি বগির জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। আহত হয়েছেন নিয়ামুল হক নাফিস, জান্নাতুল, জাইমাসহ আরও বেশ কয়েকজন।

আহত জান্নাতুলের স্বামী ফোরকান বলেন, ‘আমার বাড়ি নোয়াখালী। একটি চাকরির ইন্টারভিউ ছিল। ভেবেছিলাম, ইন্টারভিউ দিয়ে বউ-বাচ্চাকে ঢাকা ঘুরিয়ে বাড়ি ফিরব। কিন্তু ঢাকায় পৌঁছে ইন্টারভিউ দেওয়া দূরের কথা, ট্রেন থেকে নামার আগেই কী যে হয়ে গেল, তা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।’

উপকূল এক্সপ্রেস কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছালে ফোরকান স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে পাশের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নিয়ে যান। ঢাকায় কোনো আত্মীয়স্বজন না থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা শেষ করেই আবার নোয়াখালীর পথ ধরেন।

ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারার ঘটনায় ফোরকানের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস (বাঁয়ে) ও সন্তান জাইফা আহত হন। ছবি: সংগৃহীত

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা অবশ্য দাবি করছেন, রেলপথ অবরোধ করে আগে থেকেই আন্দোলনরতরা সেখানে ছিলেন। তাদের ওপর দিয়েই ট্রেন চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন চালক। ফলে উত্তেজিত হয়ে কিছু ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ট্রেনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার দাবিতে গড়া সংগঠন ‘তিতুমীর ঐক্য’ জানিয়েছে, ট্রেনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপে জড়িত শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করলে কয়েকজন যাত্রী আহত হন। এতে ট্রেনের পাঁচটি কোচের জানালার ২৯টি কাঁচ ভেঙে গেছে। যাত্রী কতজন আহত হয়েছেন, তার সঠিক সংখ্যাটি আমার জানা নেই।’

শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে দুপুরে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় বলে জানান কমলাপুর স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন। পরে আন্দোলনরতরা সরে গেলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে বলেও জানান তিনি।

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকালে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে তিতুমীর কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে সড়কের পাশাপাশি রেল ক্রসিং অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। যার নামে কলেজের নাম, সেই তিতুমীরের বারাসাত বিদ্রোহ স্মরণে রেখে তারা এই কর্মসূচির নাম দেন ‘বারাসাত ব্যারিকেড’।

সড়ক-রেলপথ অবরোধের পর শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দলকে নিয়ে আলোচনায় বসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম। সে আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হতে না পারলে ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল সচিবালয়েই অনশন শুরু করেন। শিক্ষার্থীরাও ফের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মহাখালী পয়েন্ট অবরোধ করেন।

পরে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাসে অনশন প্রত্যাহার করে কলেজে ফিরে যায় ১৪ জনের প্রতিনিধি দল।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

উপকূল এক্সপ্রেস ট্রেনে আহত ট্রেনে ইট নিক্ষেপ তিতুমীর কলেজ মহাখালী মহাখালী রেল ক্রসিং রেলপথ অবরোধ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর