চলতি মাসেই লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
২০ নভেম্বর ২০২৪ ২২:৪৮
ঢাকা: সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি নভেম্বর মাসেই উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে তার বিদেশ যাত্রার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভিসা, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া এবং সফর সঙ্গীদের বিদেশ ভ্রমণের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে বুধবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘ম্যাডামের বিদেশ যাত্রার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ভিসাও পেয়ে গেছি। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি নভেম্বর মাসেই ম্যাডাম বিদেশে যেতে পারবেন।’
এর আগে, গত ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ড. এজেডএম জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ম্যাডামের শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে আমরা যাতে অতি দ্রুত উনাকে বিদেশে মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি, সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছি। তার অংশ হিসেবে লং ডিসটেন্স স্পেশালাইজড এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার চেষ্টা চলছে। প্রথমে ম্যাডামকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে স্টেওভারের পরে মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টার যে দেশে আছে, সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। আমরা আশা করছি, সব কাজ সম্পন্ন করে অতি দ্রুতই ম্যাডাম বিদেশে যেতে পারবেন।’
ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের এ বক্তব্যের পর বেগম খালেদা জিয়ার যাওয়ার বিদেশ যাত্রার দিনক্ষণ নিয়ে নানারকম খবর প্রকাশ হতে থাকে। ‘চলতি নভেম্বরের ৮ তারিখে বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া’, ‘আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া’— এরকম খবর মূলধারার গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসতে থাকে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার সন্ধ্যায় বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে এ বি এম সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘নভেম্বর মাস শেষ হতে আরও ১০ দিন বাকি। আশা করছি এই দশ দিনের মধ্যেই ম্যাডাম বিদেশ যেতে পারবেন। আমাদের সব প্রস্তুতি মোটামুটি সম্পন্ন।’
দলীয় সূত্র মতে, ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ অন্তত ১৬ জন খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হবেন। এরই মধ্যে একটি বিশেষায়িত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছে। অবশ্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে আগাম কোনো তথ্য দিতে চাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে এ বি এম সাত্তার বলেন, ‘যখন বলা হচ্ছে সবকিছুই প্রস্তুত, তখন তো এ বিষয়টিও এসে যাচ্ছে। আমরা আপাতত এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে বাড়তি কোনো তথ্য গণমাধ্যমকে দেব না।’
উল্লেখ্য, প্রায় ৮ বছর পর লন্ডনে যাচ্ছেন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে বড় ছেলে তারেক রহমান এবং তার পরিবারের সঙ্গে দেখা হবে বিএনপি চেয়ারপারসনের। দলীয় সূত্র মতে, লন্ডন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্সে যেতে পারেন তিনি। সুস্থ হয়ে দেশে ফেরার পথে পবিত্র ওমরাহ পালনে সৌদি আরবেও যাওয়ার কথা রয়েছে খালেদা জিয়ার। বিষয়টি নির্ভর করবে তার শারীরিক অবস্থার ওপর।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে। ওই বছরের অক্টোবরে হাইকোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এর পর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর।
দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
এর পর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পর পর বিএনপি নেত্রীর মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে আসছিল শেখ হাসিনার সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছিল। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না।
সাময়িক মুক্তির পর তাকে কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বার বার তা প্রত্যাখ্যান করেছে শেখ হাসিনার সরকার।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দিনই রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন।